Wednesday, April 30, 2025
25.3 C
Dhaka

আমরা তোমার ই নাম গাই: কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য

ইভান পাল

আজ ইংরেজি দিনপঞ্জির পাতায় মার্চ মাসের ৭তারিখ। আজকের এই দিনটি নিয়ে বলা যেতে পারে, দিনটি এই দু বাংলার(এপার বাংলা -ওপার বাংলা) লোকগানের জন্য সত্যিই খুবই দু:খের একটা দিন।

কারণ, একটি ই। আজকের এই দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারান দু বাংলার ই খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী, লোকগানের গবেষক কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য । গত বছরের ঠিক এই দিনটায় অর্থাৎ ২০১৭সালের ৭ই মার্চ দু বাংলার মানুষ কে কাদিয়েঁ চিরতরে বিদায় নেন এই মাটির মানুষ্টি।

ওপার বাংলার হুগলী জেলার গুরাপ গ্রামের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।বীরভূম থেকে অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন তিনি ও তারঁ দোহার ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, সকাল ১০টা নাগাদ দোহারের শিল্পীদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি হুগলির গুরাপ অতিক্রম করছিল। সেই সময় আচমকাই একটি ট্রাক পেছন দিকে এসে ধাক্কা মারে। আর সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কালিকা প্রসাদের গাড়িটি ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশে খাদে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা কালিকা প্রসাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কিন্ত এত কিছু বলছি কাকে নিয়ে কে এই কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য।।
বাংলার লোকগান, লোকগীতি কে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছিলেন যিনি। দিয়েছিলেন নতুন রুপ। বাংলার মানুষ তারঁ আর তারই প্রতিষ্টিত লোক গানের ব্যান্ড “দোহার” এর মাধ্যমে জেনেছে হাজার বছরের অনেক পুরনো লোকগান। তিনিই সকলের প্রিয় ভালবাসার – কালিকা দা কিংবা “কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য”।।

কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য।।
কি লিখব এই মানুষটিকে নিয়ে। যদি লিখতে যায় কিংবা গল্প বলা শুরু করি হয়তো বা রাত পেরিয়ে যাবে তাকেঁ নিয়ে গল্প শেষ হবে না।
কারণ, অত্যন্ত গুনী,শ্রদ্ধাভাজন এই শিল্পী যেমনি ছিলেন একজন সংগীতজ্ঞ,সুরকার তেমনি খুব সহজ – সরল আর মিষ্টি ভাষায় তিনি যেকোন গানের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতেন তারঁ অর্থ। যা মানব মনে খুব সুন্দরভাবে গেথেঁ যেত। এক কথায়,আগা-গোড়ায় মাটির মানুষ। করতেনও মাটির গান।

জন্মেছিলেন ওপার বাংলার আসামের শীলচরে ১১ইসেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে।
আদি নিবাস ছিল ঢাকা দক্ষিণে সিলেট অঞ্চলে। তাই বার বার ছুটে আসতেন এই অঞ্চলে। কেন আসবেন না এযে তারঁ পৈতৃক নিবাস। নাড়ির টানেই বার বার আসতেন এই বাংলায়।

পড়াশোনা করেছিলেন আসামেই। আসামের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে সফলতার সাথে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।

এবার আসি তারঁ সংগীত জীবনে। তাঁর সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য। বলা চলে, হাতে খড়িই ই হয় তারঁ কাকাবাবু অনন্ত ভট্টাচার্যর হাতে। তারঁ পরিবার ছিল আগাগোড়াই সংস্কৃতি মনা পরিবার।
তারঁ কাকার ছিল লোকগানের বিশাল সংগ্রহ। তাই কাকার মৃত্যুর পর সেই সংগ্রহ নিয়েই কাজ শুরু করেন কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য।
কলকাতায় ১৯৯৯ সালে আরও কয়েকজন বন্ধু গায়ক-যন্ত্রীদের সাথে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘দোহার’ ব্যান্ড। শুধু গাওয়া নয়, লোকগানের গবেষণার দিকটিকেও সমানে প্রাধান্য দিয়ে তা নিয়ে ও কাজ করছিলেন এই মাটির মানুষ্টি।লোকগান আজ সভ্য সমাজেরও মঞ্চ মাতায়। যেখানে একসময় লোকগানের নাম শুনলে তরুণ সমাজ বিরক্তি বোধ করতো তাদের বেশীর ভাগ ই আজকাল এই লোকগান শুনতে চাই। কাজ করতে চাই লোকগান নিয়ে। এ তারঁ(কালিকা) আর তার ব্যান্ড দল “দোহার” এর ই অবদান। তারা যেমন গান সংগ্রহ করেছেন তেমনি তার ভালবাসার সুবাস ছড়িয়েছেন এই দুই বাংলা জুড়ে। ভারতের বিখ্যাত বাংলা টিভি চ্যানেল, “জি বাংলা সা রে গা মা পা” তে তিনি আর তারঁ ব্যান্ড দল – দোহার যেভাবে লোকগানকে তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।

এবার এই গানের দলের নামকরণ নিয়ে বলি একটু—
দলের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন অভীক মজুমদার। যেহেতু দলের সদস্যরা সবাই একত্রে গান করে, আবার কেউই লোকসঙ্গীতের আদত শিল্পী না, সেহেতু তিনি দোহার নামটাই যথোপযুক্ত মনে করেছেন। [দোহার :উউইকিপিডিয়া]

তিনি তো গান লিখতেন আবার সংগ্রহ ও করতেন। লোকগানের বিশাল সংগ্রহ ছিল তারঁ।
সাথে আবার তবলা ও শিখেছিলেন। তালিম নেন পন্ডিত অনিল ভট্টাচার্যর কাছে।শুধু কি লোকগান। না। তিনি কিন্তু ক্ল্যাসিক্যালেও সমান পারদর্শী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ও বাজাতে পারতেন।

এপার বাংলার সিলেট সংস্কৃতির বিখ্যাত হল — লোকগান।আর এ লোকগানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল রাধারমণ, হাছনরাজা।
আর আরেজকন মানুষ আছেন। যার গান লোকগানে এক অন্য উচ্চতায় যায়। লালন ফকির নন গো, লালন ফকির নন। লালন সাইজি তো অনেক আগেকার, অনেক উচুঁ মার্গের। তবে যার কথা এখন বলব,
তিনি ছিলেন, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের কাছে এক অন্যরকম মানুষ।
আর তিনি হলেন, শাহ আব্দুল করিম।
২০১৬ তে শাহ আব্দুল করিমের জন্ম শতবার্ষিকীতে কলকাতায় অনুষ্টিত হয় “করিম উৎসব”। যার প্রধান পৃষ্টপোষক ছিলেন, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ।

শাহ আব্দুল করিম এর অন্ধ ভক্ত ছিলেন তিনি।

— কোন মিস্তিরি নাও বানাইলো
এমন দেখা যায়,
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে,
ময়ুর পঙখী নাও।

কিংবা রবি ঠাকুরের “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো,ছেড়ে দেব না।” এটা তো বাউল অংগের গান। তারপরও শিল্পী কালিকা প্রসাদ আর তারঁ দোহার ব্যান্ডের ভালবাসার ছোয়ায় এই গান্টি যেন আরো রসালো হয়ে ওঠে।

তিনি শুধু এই গান ই নন আরো অনেক রবিন্দ্রসংগীত গেয়েছেন।
গেয়েছেন বিহু, বাউল, কামরুপি, ভাওয়াইয়ার মতো অসংখ্য লোকগান।
পল্লী মানুষের সুখ দু:খের ভাষা যে গান গুলো, তাতো গাইতোই। সাথে মানুষের ভেতরের সব কষ্টগুলোকে নিঙ্গড়ে বের করে আনতেন।
তারঁ গানে মানুষ যেন শহরে বসেই পেত গ্রামের মাটির ঘ্রাণ, ভালবাসা, ভাল লাগার ঘ্রাণ।
কীর্তন ও করতেন। অনেক কীর্তন শিল্পীকেও তুলে এনে ছিলেন।

গাড়ি চলে না, চলে না,চলে না রে” শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত একটি গান।

পরবর্তীতে কালিকা প্রসাদ ও তারঁ ব্যান্ড দল দোহার এই গানটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাথে বাংলার ই কিছু নতুন যন্ত্র দিয়ে পরিবেশন করে।

আবার তিনি এই গান্টির ফাকেঁ ফাকেঁ গানটি নিয়ে অপূর্ব সুন্দর ব্যাখ্যা ও করেছিলেন। বলেছিলেন, “ একজন মানুষের সংগে দেখা হয়েছিল।তারঁ নাম শাহ আব্দুল করিম। মানুষ টা সত্যি ই জোর দিয়ে বললাম। একজন মানুষের সাথে দেখা হয়েছিল। বাংলাদেশ সুনামগঞ্জে থাকেন।বাউল, একজন অসাধারণ স্রষ্টা। গান্টার ক্ষেত্রে আসলে বারবার কবিতা পড়লে যেমন পাঠ বদলে যায়, তেমনি। তিনি(আব্দুল করিম) তো দেহতত্ত্বের গান লিখেছিলেন। গাড়ি তো তার দেহ। আর আমরা যখন এদেশে থাকি তখন আমাদের মনে হয় ষাট বছরে আমাদের গাড়ি আর চলবে কতদূর। এই জীবনে প্রথম মানুষ দেখেছিলাম যিনি ভনিতায় নিজের নাম নিজে বলছেন।আমরা তো লালন বলে লালনের মুখে শুনিনি। হাছন রাজায় কয় হাছন রাজার মুখে শুনিনি। আর এ বাংলায় যে বাউলদের দেখেছি তারা অন্য মহাজনদের গান করেন। নানান মহাজনের নাম করেন তারা ভনিতায়। কিন্তু এ একজন বাউল বলছেন বাউল করিম বলে দয়া কর আমারে। এটা সত্যি আমার কাছে এক বিষ্ময়কর।”

যখন ১৯৭১সালের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজাকার কিংবা আলবদর দের ফাসির দাবিতে এপার বাংলার ঢাকার শাহবাগ ফুঁসে উঠেছিল,তখনই তার ব্যান্ড দল দোহার কে নিয়ে সৃষ্টি করেন “শাহবাগ দিচ্ছে ডাক” গানটি।

আজ আমাদের প্রেম, আমাদের রাগ,
শাহবাগ শাহবাগ
আজ দুনিয়ার কাছে লড়াই মানেই,
শাহবাগ শাহবাগ।
শাহবাগ মানে মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের ফাঁসি
শাহবাগ মানে বাংলাভাষা, বাংলাকে ভালোবাসি।(সংক্ষিপ্ত)

এভাবেই পাশে ছিলেন এপার বাংলার। জন্মেছিলেন ওপার বাংলায়। কিন্তু,রক্তের টান বলে একটা কথা আছে। তার ই যেন প্রমাণ স্বয়ং তিনি। ভালবাস্তেন দু বাংলা। দু বাংলার মানুষ্কে।

কে জানত অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে জীবনের পথ চলা এত অল্প সময়ে ই থেমে যাবে।
মৃত্যুর ঠিক চারদিন আগে প্রকাশ পায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত “ভুবন মাঝি”চলচ্চিত্র টি। দুই বাংলার বেশ ক’জন খ্যাতিমান অভিনেতা অভিনেত্রী এতে অভিনয় করেন। আর এই চলচ্চিত্র টিতেই তিনি জীবনে প্রথম্বারের মতো সংগীত পরিচালকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

চলচ্চিত্র টির যে মূল টাইটেল সং তাতে সুর দেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।

গান্টির প্রথম ক’টি লাইন তুলে ধরলাম।

আমি তোমারই, তোমারই, তোমারই নাম গাই
আমার নাম গাও তুমি,
আমি আকাশ ও রোদের দেশে ভেসে ভেসে বেড়াই
মেঘের পাহাড়ে চড় তুমি,
আমি তোমারই, তোমারই, তোমারই নাম গাই
আমার নাম গাও তুমি ।।

ঠিক, আজ তিনি নেই। কিন্তু দুই বাংলার মানুষ আজো তারঁ ই গান গাইছে। তাইতো বললাম,আমরা তোমার ই নাম গাই। এযে, ভালবাসা আর শ্রদ্ধার নাম গো।। ওপারে ভাল থাকবেন।জীবনের পথ চলা খুব বেশীদিন স্থায়ী ছিল না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তিনি বেচেঁ থাকবেন এই দু বাংলার অসংখ্য ভক্ত দের হৃদয়ে।
“কীর্তি মানের মৃত্যু নাই”।কীর্তি মান মানুষগুলো তো মরেন না। তারাঁ বেচেঁ থাকবেন যুগ ধরে ভালবাসার আর শ্রদ্ধার চাঁদরে।

আবারো বলি, আমরা তোমার ই নাম গাই। কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের প্রয়াণ দিবসে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

আইএসপিএবি ২০২৫ নির্বাচনে আমিনুল হাকিমের নেতৃত্বে ‘আইএসপি ইউনাইটেড’ প্যানেল

আসন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ২০২৫–২০২৭...

বাংলাদেশ থেকে ১.৫ মিলিয়ন টন আম নিতে আগ্রহী চীন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার একটি রপ্তানিযোগ্য আমবাগান...

‘স্টারলিংক‘-এর লাইসেন্স অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের এনজিএসও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্টারলিংক‘-এর লাইসেন্স অনুমোদন করেছেন প্রধান...

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরপিএল: সম্ভাবনা ও গুরুত্ব

আরপিএল বর্তমান বিশ্বে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি...

কালীগঞ্জে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অভিভাবক সমাবেশ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ‘নরুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষার মানোন্নয়নের...

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন বর্ষিয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।...

ভারতের নাগপুরে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব, কারফিউ জারি

ভারতের নাগপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে বিক্ষোভের...

বিয়ের কাজ সারলেন তালাত মাহমুদ রাফি

বিয়ে করেছেন সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। সোমবার (১৭ মার্চ)...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img