বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী সক্রিয় চিকিৎসক ডা. হাওয়ার্ড টাকার। ১৯৪৭ সাল থেকে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত এই প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি চলতি মাসেই পা দিচ্ছেন ১০২ বছরে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, শতবর্ষ পার করেও তিনি এখনো নতুন চাকরির সন্ধানে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানালেন দীর্ঘ জীবন ও তারুণ্যের পেছনের রহস্য এবং জীবন উপভোগের মূলমন্ত্র।
১০২ বছর বয়সেও পেশাজীবনে সক্রিয়
২০২২ সালে যেই প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করতেন, সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও থেমে যাননি ডা. হাওয়ার্ড। বর্তমানে নিয়মিত রোগী না দেখলেও কর্মজীবনের প্রতি তার আগ্রহ একটুও কমেনি। নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৫৩ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হয়ে কাজ করার পর কোরিয়ান যুদ্ধে আটলান্টিক নৌবহরের প্রধান নিউরোলজিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
একজন চিকিৎসকের বাইরেও নানা পরিচয়
শুধু চিকিৎসা-ই নয়, ৬৭ বছর বয়সে, অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে, আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করে ওহাইওর বার পরীক্ষাও পাস করেন তিনি। আইন পড়ার সময়ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। করোনা মহামারির শুরুর দিকেও সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখনো মাঝে-মধ্যে ক্লিভল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন ও আইন—দুই বিষয়েই ক্লাস নেন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের আইনি দিক নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
টিকটকে জনপ্রিয় ‘শতবর্ষী’ তারকা
এই প্রাজ্ঞ চিকিৎসকের জীবনগাথা ও উৎসাহব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন তার নাতি অস্টিন ও বন্ধু টেলর ট্যাগলিয়ানেটি। তারা যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন ডা. হাওয়ার্ডকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘What’s Next?’। তার টিকটক অ্যাকাউন্টেও রয়েছে লক্ষাধিক অনুসারী। সেখানে তিনি জীবন, স্বাস্থ্য ও অভিজ্ঞতার গল্প ভাগ করে নেন।
দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?
ডা. হাওয়ার্ড দীর্ঘ জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেন জ্ঞানচর্চা আর অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রাখার অভ্যাসকে। তার মতে, অবসর জীবন দীর্ঘজীবনের অন্তরায়। কাজ চালিয়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক সতেজ ও কর্মক্ষম থাকে। প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে যুক্ত থাকলে মস্তিষ্কের বয়স বাড়লেও তার দক্ষতা কমে না বলেই বিশ্বাস করেন তিনি।
ভালো অভ্যাস আর খাদ্যতালিকা
সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনযাপনের জন্য ডা. হাওয়ার্ডের পরামর্শ হলো—কর্মে সক্রিয় থাকা, ধূমপান পরিহার করা এবং অন্তরে ঘৃণার জায়গা না দেওয়া। খাদ্যতালিকায় সচেতন থাকতে বলেন তিনি। প্রক্রিয়াজাত, অতিরিক্ত চিনি বা তেলযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। গোটা শস্য, টাটকা ফলমূল, মাছ, মুরগি ও সবজি তার প্রতিদিনের খাবারে থাকে। সকালে ৮৯ বছর বয়সী স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ফল আর টোস্ট দিয়ে দিন শুরু করেন। রাতের খাবারে থাকত মাছ, মুরগি বা সালাদ। যদিও শতবর্ষ পেরিয়ে এসে মাঝেমধ্যে আইসক্রিম বা ডোনাট খাওয়ার দুর্বলতা রয়েছে বলেই স্বীকার করেন।
শৃঙ্খলাবোধ, বন্ধুত্ব আর শরীরচর্চা
ডা. হাওয়ার্ড কঠোর ডায়েট মানেন না, তবে জীবনে পরিমিতিবোধ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন। বয়সের কারণে আগের মতো কঠিন ব্যায়াম সম্ভব না হলেও, প্রতিদিন কিছু না কিছু শারীরিক চর্চা করতে হয়—এমনটাই তার অভিমত। সময় পেলেই তুষারে ছোটদের সঙ্গে খেলেন, উপভোগ করেন স্ত্রীর সান্নিধ্য এবং মনে করেন—বয়সের চেয়ে বন্ধুত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক তাকে উদ্দীপ্ত করে।
শেষ কথা : পছন্দের কাজই সুস্থতার চাবিকাঠি
শেষে ডা. হাওয়ার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন- কাজ এমন হওয়া উচিত যা স্বাস্থ্যের পরিপন্থী নয়। যদি বর্তমান পেশা শরীর-মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে নতুন করে নিজের উপযোগী কাজের সন্ধান করতে হবে। তার জীবন-দর্শন বলছে, যত দিন সম্ভব শেখা, ভাবা এবং সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা—এই তিনটিই দীর্ঘ ও প্রাণবন্ত জীবনের আসল রহস্য।
সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি