ইভান পাল
বলা হয়ে থাকে, উদ্যোক্তা যিনি হন তিনি নাকি জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা হয়ে জন্মান। তিনি একজন নেতা, তার অসাধারণ বুদ্ধীদীপ্ত মনোভাবে তাকেঁ এগিয়ে নেয়। তারঁ ভেতর থাকে অসাধারণ সব স্বপ্ন। স্বপ্নের দেশে তাল মিলিয়ে চলতে তাকেঁ অনেক বন্ধুর পথও পাড়ি দিতে হয়।
তিনি যেকোন সৃজনশীল বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী থাকেন। আবার যেকোন কিছুতেই ইতিবাচকভাবে সুযোগ খুজতেঁ থাকেন।
একজন উদ্যোক্তার গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান গুন হলো তিনি অবশ্যই লক্ষ্য ঠিক রেখে পরিকল্পনামাফিক নীতি নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে থাকেন।
হুম্ম! এগুলোই একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলি। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটা কথা আছে আর তা হচ্ছে, সবসময় সবক্ষেত্রে আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া যায় না। কখনো কখনো কিছু কাজ হুটহাট করে হয়ে যায় অথবা ঐযে বললাম, ইতিবাচকভাবে সুযোগ খুঁজে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। হুম্ম! তাই।।
এই যেমন, এখন বাংলাদেশের একেবারেই নবীন তিন তরুণ উদ্যোক্তার কথা বলবো। তারা কিন্তু, আগে থেকেই সাত পাঁচভেবে কোন কিছুই ঠিক করেননি। হুটহাট করেই সব গুছানো আর তাঁদের পরিশ্রম সাথে বুদ্ধিদীপ্ত মনোভাব নিয়ে কাজে লেগে পড়া।
চলুন প্রিয় পাঠক, জেনে আসি বাংলাদেশের নবীন এবং তরুণ এই উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক।
মুহাইমিনুল ইসলাম রাহুল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদশের একজন ছাত্র। তিনি মালয়েশিয়াতে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলেন। আর সেখানে গিয়ে তারঁ সাথে আলাপ হয় বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির দুইজন ছাত্রের সাথে। পরিচিত হওয়ার পর চলে তিনজনের জম্পেশ আড্ডা। আড্ডার ফাকেঁ বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে বাংলাদেশের ছাত্রদের হোস্টেল জীবন সম্পর্কে। হোস্টেল জীবনে থাকা ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা হয় এই তিনজনের। যার মধ্যে অন্যতম হল ফার্নিচার কেনা এবং হোস্টেল জীবনে তা ব্যবহার করা।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হোস্টেলে বসবাস করা ছাত্ররা সবসময়ই বাসা বা হোস্টেল পরিবর্তন করার সময় ফার্নিচার কেনা এবং বহন করা নিয়ে বেশকিছুটা সমস্যার সম্মুখিন হয়ে থাকেন৷ এছাড়া কমদামি ফার্নিচার ব্যবহারের ফলে ছাড়পোকার কামড়ে বিভিন্ন রোগ বালাইও দেখা দেয়।
আলাপের ফাকেঁ ঐখানেই এনিয়ে তাদের মাথায় একটা আইডিয়া চলে আসে। ঐযে শুরুতে বলেছিলাম না, কখনো কখনো কিছু কিছু বিষয় নিয়মমাফিক না হয়ে হুটহাট করেও হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের হোস্টেল জীবনে থাকা ছাত্রদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য “লেটস ফার্নিশ” নামের একটি রেন্টাল ফার্নিচার কোম্পানির কথা মাথায় আসে এই তিন উদ্যোক্তাদের৷
তবে শুরুর পরের গল্পটা খুব বেশি মসৃণ ছিল না। কেনোই বা হবে। কারণ, উদ্যোক্তা মানেই তো ঝুকিঁর খেলা, কঠিন খেলা। অনেক কঠিন। সাথে যেকোন কিছুতে ঝুকিঁও কম না।
একজন উদ্যোক্তাকে এইসব ঝুঁকি, এইসব বাধাঁ বিপত্তিকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবেই।
বিভিন্ন ইনভেস্টরের কাছে এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা তাদের করা আইডিয়াটা নিয়ে আলোচনা করার পর কখনো কখনো হতাশ হতে হয়েছে তাদের।
কিন্তু তবুও তারা থেমে থাকেন নি। ঐযে বললাম না, একজন উদ্যোক্তাকে এইসব ঝুঁকি, এইসব বাধাঁ বিপত্তিকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবেই।
ইনভেস্টদের এত বাধঁ সাধা, তাদের কাছে এতবার রিজেক্ট হবার পরও এই তিন উদ্যোক্তা থেমে থাকেননি। নতুন আলো খুঁজতে, তাদেরঁ দেখা সেই নতুন ভোরের স্বপ্ন কে সার্থক করতে তারাও কারো মুখ চেয়ে বসে না থেকে নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন সার্ভে করে এবং একটি নতুন স্বপ্ন নিয়ে অবশেষে পহেলা জানুয়ারি, ২০১৯ এ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম ফার্নিচার রেন্টাল কোম্পানি “লেটস ফার্নিশ“৷
তাঁদের সবথেকে মজার এবং সাফল্যগাঁথা ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রনালয়ের আয়োজনে ” স্টুডেন্ট টু স্টার্টাপঃ চ্যাপ্টার ১” এ অংশগ্রহণ করে তাঁরা উইনার হয়। এই চার মাসে তারা প্রায় ৫০ জন ক্রেতা পেয়েছেন এবং তাদের ক্রেতার সংখ্যা আরো বাড়বে বলে এই তিন স্বপ্নদেখা এবং সফল তরুণ উদ্যোক্তা আশাবাদি৷
“লেটস ফার্নিশ” এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন ইফাজ আহমেদ -সিইও , মুহাইমিনুল ইসলাম রাহুল – সিডিও এবং তৌহিদুল ইসলাম -সি এমও। এছাড়াও আরো ১০ জন নিয়ে তাদের একটি দলও রয়েছে৷
বর্তমানে যে কেউই এই “লেটস ফার্নিশে” ফার্নিচার রেন্ট করতে হলে তাদের www.letsfurnishbd.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ফার্নিচার রেন্ট করতে পারবেন।
বিভিন্ন আকর্ষণীয় এবং সুলভমূল্যে এই ফার্নিচার সামগ্রী যেমন : খাট, টেবিল, আলমারি, ড্রইং টেবিল ইত্যাদি রেন্ট হিসেবে পাওয়া যাবে। খুব শীঘ্রই তারা ফ্রিজ, টিভি, এসি এমন কিছু সৌখিন ফার্নিচারও যোগ করতে যাচ্ছে যেন তরুন কর্মজীবী মানুষরাও এই সেবা খুব শীঘ্রই গ্রহণ করতে পারে৷
সেই সাথে রেন্ট করার কাজটা আরো সহজ করতে এপস এর মাধ্যমে পুরো ঘর সাজানোর প্রায় সব সামগ্রীই পাওয়া যাবে বলে তারা আশাবাদী।
চ্যানেল আগামী পরিবারের পক্ষ থেকে এই তিন তরুণ স্বপ্নবাজ এবং সফল উদ্যোক্তার জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা, শুভকামনা। আগামী পরিবার তাদের উত্তরোত্তর উজ্জ্বল সাফল্য কামনা করছে।