
বদরুল ইসলাম (বরগুনা)
প্রাচ্য খাবারের রান্নায় এমন অনেক উপাদান আছে, যেগুলোর ব্যবহার স্বাদ এবং সুগন্ধের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ঠিক তেমনই একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো পোলাও পাতা—যা শুধু রান্নায় সুবাস ছড়ায় না, বরং শরীর ও মনকে আরাম দেওয়ার এক অসাধারণ ভেষজ উপাদান হিসেবেও পরিচিত।
খাবারে স্বাদ ও ঘ্রাণের জাদু
পোলাও পাতার নাম শুনলেই অনেকের মনে পোলাও, জাউভাত, স্যুপ কিংবা ফিরনির কথা ভেসে ওঠে। রান্নার শেষ ধাপে কয়েকটি পাতা ছড়িয়ে দিলেই বদলে যায় পুরো খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ। এটি শুধু পোলাওয়ের সুগন্ধ বাড়ায় না, বরং পায়েস, নারকেল দুধে তৈরি নানা পদেও এর ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন।
প্রাকৃতিক মুখশুদ্ধি হিসেবে ব্যবহার
অনেকেই খাওয়ার পর মুখশুদ্ধি হিসেবে পোলাও পাতার একটি ছোট টুকরো চিবিয়ে থাকেন। এতে মুখ হয় সুগন্ধিত, মুখের ব্যাকটেরিয়াও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে ধারণা করা হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে।
ওষুধি গুণে অনন্য
আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় পোলাও পাতা ব্যবহারের ইতিহাস দীর্ঘ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি—
মাথা ব্যথা ও অনিদ্রা দূর করতে পারে
হজমে সহায়তা করে
মুখে রুচি ফেরাতে সাহায্য করে
হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগে উপকারী হতে পারে
ত্বকের নানা সমস্যা (যেমন খোসপাঁচড়া, গুটি বসন্ত) উপশমে ভূমিকা রাখতে পারে
জ্বর কমাতেও কার্যকর হতে পারে
পুষ্টিগুণ ও ভেষজ শক্তি
যদিও পোলাও পাতার পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম, তবে ধারণা করা হয় এতে থিয়ামিন (B1) এবং নায়াসিন (B3) জাতীয় কিছু ভিটামিন থাকতে পারে, যা স্নায়ুতন্ত্র ও হজম প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী। এর পাশাপাশি ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সহায়ক হতে পারে।
ব্যবহার পদ্ধতি
পোলাও, জাউভাত, পায়েস, ফিরনি বা স্যুপে রান্নার শেষে কয়েকটি পাতা যোগ করুন
নারকেলের দুধে পাতা সিদ্ধ করে খাবারে ব্যবহার করতে পারেন
মুখশুদ্ধি হিসেবে ছোট টুকরো চিবাতে পারেন
হালকা মাথা ব্যথা বা অনিদ্রার ক্ষেত্রে পাতা শুকিয়ে গন্ধ নেওয়া যেতে পারে
পোলাও পাতা কেবল রান্নার স্বাদ বাড়ানোর উপকরণ নয়, বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করে। এটির নিয়মিত ব্যবহারে যেমন খাদ্যে সুগন্ধ যুক্ত হয়, তেমনি কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ উপকারিতাও মিলতে পারে। লোকজ ধারা আর আধুনিক বিজ্ঞান যদি একত্র হয়, তবে পোলাও পাতার গুণ আরও অনেক গভীরে উদ্ঘাটিত হবে নিঃসন্দেহে।