নাশিত আখন্দ
সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলছে দেশ তথা বিশ্ব। বিভিন্নক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে যা জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে অনেকটাই আনন্দঘন ও সহজ। ক্লেইনার পারকিনস এর তথ্য মতে মানুষ এখন ডিজিটাল মিডিয়াতে সময় বেশি কাটাচ্ছেন। গত বছর প্রাপ্ত বয়স্করা দিনে গড়ে যেখানে ৫ দশমিক ৯ ঘন্টা ফোন, ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ ব্যবহার করতেন, সেখানে ২০০৮ সালে তা ছিলো মাত্র ২ দশমিক ৭ ঘন্টা। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিলোইটির তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আগে যেখানে গড়ে দিনে ৪৭ বার তারা ফোন চেক করতেন এখন সেখানে ৫২ বার ফোন চেক করেন। এসব ডিজিটাল মিডিয়াতে সময় দেয়ার অন্যতম কারণ হলো ফেসবুক, টুইটার, ইস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহের ব্যবহার। শুধু সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাই নয় বরং ব্যস্ত জীবনে এইসব সামাজিক মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিনোদনের অন্যতম সেরা মাধ্যম। পিউ রিসার্চের গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এখন মানুষের জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮ শতাংশ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন যাদের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন ফেসবুকে ঢোকেন। শুধু তাই নয়। সেদেশে ১৮-২৪ বছর বয়সী তরুণ ও যুবকদের ৭৮ শতাংশ ¯œ্যাপচ্যাট, ৭১ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম ও ৪৫ শতাংশ টুইটার ব্যবহার করেন। আমাদের দেশেও ঠিক একই দৃশ্য চোখে পড়ে। বিশেষ করে এদেশের তরুণ ও যুবকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অভিভাবকদের মাঝে চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে। শুধু ফেসবুক ব্যবহারের পরিসংখ্যান দেখলেই এ ব্যপারে ধারণা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ‘সোশ্যাল বেকারস.কম’ এর সর্বশেষ গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ৫০ হাজার ৩০০ জন যাদের মধ্যে ১৮-২৪ বছরের তরুণরাই বেশি। অন্যদিকে দ্য ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশের ঢাকা শাখার উদ্যোগে ‘এশিয়া ইন্টারনেট সিম্পোজিয়াম ২০১৫’ শীর্ষক আয়োজনে অনুষ্ঠিত দুটি সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশের এখন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন যাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ১৮-২৪ বছর বয়সী।
এসব সামাজিক মাধ্যমসমূহের অতিরিক্ত ব্যবহাররের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। এক গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটসমূহের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের একাকিত্ব ও বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার প্রসঙ্গে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বললেও এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য সম্প্রতি তুলে ধরা হয় এক গবেষণার ফলাফলে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত গবেষণাটির ফলাফল অনুযায়ী দৈনিক আধা ঘন্টার মতো সময় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ রাখা ভালো। এতে একাকিত্ব ও বিষন্নতা উভয় থেকেই মুক্তি সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমসমূহের সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে একদিকে যেমন অন্যয়-অপকর্ম, বিভিন্ন শারীরিক-মানুসিক জটিলতার সৃষ্টি হবে তেমনি ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রহস্থ হবে। এতে করে তরুণ সমাজকে পড়তে হবে বিরাট হুমকির মধ্যে। তাই সুন্দর সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন অভিভাবকদের সামাজিক মাধ্যমসমূহ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে ঠিক তেমনি তাদের সন্তানদের প্রতিও দিতে হবে নজরদারী এমনটাই মনে করেন বিজ্ঞজনেরা ।