মিয়ানমারের জান্তা সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে দীর্ঘমেয়াদী জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। ওই ঘটনার পর দেশটিতে সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘাত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
জরুরি অবস্থার মাধ্যমে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং রাষ্ট্রের নির্বাহী, বিচার ও আইন বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নির্বাচন আয়োজনকে ‘সংঘাত নিরসনের পথ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে আসছেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, “আজ থেকেই জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। দেশ এখন বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে। নির্বাচন ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।”
তবে এখনও নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশটির সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এ নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এই নির্বাচনকে “প্রতারণামূলক” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি সেনা সরকারের শাসনের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।
বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়ায় দেশজুড়ে নতুন করে সহিংসতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে যারা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তারা নির্বাচনকে টার্গেট করে হামলা চালাতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছর নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিচালিত আদমশুমারিতে দেখা যায়, আনুমানিক ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হিসেবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিকে দায়ী করা হয়েছে।
এর মধ্যেই জান্তা সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে, যার আওতায় কেউ যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বা প্রতিবাদ করেন, তাহলে তার সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এ ছাড়া সামরিক সরকার নতুনভাবে ‘ইউনিয়ন সরকার’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি কমিশন’ গঠনের ঘোষণাও দিয়েছে। উভয় সংস্থার নেতৃত্বে থাকবেন মিন অং হ্লাইং। বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করছেন।