ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে এক মার্কিন ফিলিস্তিনি যুবক সাইফুল্লাহ মুসাল্লেত নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার (১২ জুলাই) রামাল্লার উত্তরের সিঞ্জিল শহরে বসতি স্থাপনকারীরা তাঁকে নৃশংসভাবে মারধর করে হত্যা করে।
নিহত মুসাল্লেতের পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্ত ও জবাবদিহির দাবি জানিয়েছে। নিহত যুবক যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ট্যাম্পা শহরের বাসিন্দা এবং স্বজনদের দেখতে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে গিয়েছিলেন।
মার্কিন সরকারের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তবে নিহতের পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিস্তারিত মন্তব্য থেকে বিরত রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) এর উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল বলেন,
“যদি ইসরায়েল একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেও যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা না নেয়, তবে সেটি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নয়, বরং ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ নীতি।”
চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপট
পশ্চিম তীরজুড়ে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনা।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতায় আরও একজন ফিলিস্তিনি, মোহাম্মদ শালাবি, বসতি স্থাপনকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং (IMEU) জানিয়েছে,
“ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারের সহযোগিতায় বসতি স্থাপনকারীরা এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”
তারা যুক্তরাষ্ট্রকে আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে হামাস এক বিবৃতিতে মুসাল্লেতের হত্যাকাণ্ডকে বর্বরতা বলে অভিহিত করে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি ও তদন্ত
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সহিংসতা শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলি গাড়িতে পাথর নিক্ষেপের ফলে। তারা জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।
প্রেক্ষাপটে মানবিক সংকট
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, গাজা ও পশ্চিম তীরে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অনেক সংস্থাই একে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করছে।
সাইফুল্লাহ মুসাল্লেতের মৃত্যু শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক আইন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।