মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এপ্রিল মাসে ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এশিয়ার রপ্তানিনির্ভর দেশগুলোর ওপর, বিশেষ করে যেসব দেশ মার্কিন বাজারে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ১ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে গেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—কে কতটা সফল এবং কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে?
উন্নত পারফর্মার: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া মূলত গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে তাদের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিলেও, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তা কমিয়ে ১৫% করা হয়েছে। ২২ জুলাই ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি” বলে উল্লেখ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয় ৩০ জুলাই।
তাইওয়ান, যা সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাদের ওপর ৩২% শুল্ক ধার্য হলেও তা কমিয়ে ২০% করা হয়েছে। যদিও এই খাতের জন্য ভবিষ্যতে আলাদা শুল্ক কাঠামো প্রণয়নের ইঙ্গিত রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ওপর এপ্রিলে ১০% শুল্ক আরোপ করা হলেও তা এখনও বাড়ানো হয়নি, তবে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে এই হার ১৫% হয়েছে।
চীন ও ভারতের পরিস্থিতি
চীন সরাসরি এই শুল্ক ঘোষণায় না থাকলেও দেশটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার শর্তে চীন বিরল খনিজ সরবরাহে সম্মতি দিয়েছে। পাশাপাশি, মার্কিন কোম্পানির বাজারে প্রবেশাধিকার, ফেন্টানিল উৎপাদন হ্রাস এবং মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর দাবিও রয়েছে।
ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা প্রাথমিক ২৭% থেকে কমানো হয়েছে। রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও তেল কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। যদিও ট্রাম্প ভারতকে ‘ভালো বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন, দেশটির অর্থনীতি এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: বৈচিত্র্যময় প্রভাব
আসিয়ান (ASEAN) অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় ভিয়েতনাম। তারা প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে শুল্ক হার ৪৬% থেকে কমিয়ে ২০%-এ নামিয়ে আনে। এর মাধ্যমে ভিয়েতনাম অন্য দেশগুলোর জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করে।
বর্তমানে কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের ওপর গড়ে ১৯% থেকে ২০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ব্রুনাইয়ের ক্ষেত্রে হার কিছুটা বেশি—২৫%-এর উপরে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে লাওস এবং মায়ানমার, যাদের ওপর ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। হিনরিখ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক প্রধান ড. ডেবোরা এলমস মনে করেন, এই দেশগুলোর সীমিত বাজার প্রবেশাধিকার ও চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শুল্ক নীতিতে প্রভাব ফেলেছে।
দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য দেশসমূহ
সিঙ্গাপুরের জন্য শুল্ক হার অপরিবর্তিত (১০%) রাখা হয়েছে, কারণ দেশটি তুলনামূলকভাবে কম রপ্তানি করে। পাকিস্তানের ওপর ১৯% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় কম। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে পাকিস্তানের টেক্সটাইল রপ্তানি খাত কিছুটা স্বস্তিতে আছে।
আফগানিস্তান, ফিজি, নাউরু, পাপুয়া নিউ গিনি—এই দেশগুলোর ওপর ১৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কাজাখস্তানের ক্ষেত্রে হার ২৫%।
শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ: অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে
ড. এলমস বলেন, “এই হারগুলো এখনও চূড়ান্ত নয়। প্রেসিডেন্ট নিজের সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমস্যা সমাধানে স্বাধীনতা দিয়েছেন।” অর্থাৎ, শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের সংজ্ঞার ওপর।
সূত্র: বিবিসি