যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ আরেক দফা তীব্র হলো। ১২৮ পণ্যে চীনের অতিরিক্ত শুল্কারোপের কঠোর জবাব দিতে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র এক হাজার ৩০০ চীনা পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এ তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থ আদায়ের চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে এরই মধ্যে পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান, গাড়ি, সয়াবিনসহ ১০৬টি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র এসব পণ্য রফতানি বাবদ চীন থেকে বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, মেধাস্বত্ব অধিকার বিষয়ে চীনের অন্যায্য চর্চার কারণেই আমদানি পণ্যে এ অতিরিক্ত শুল্কের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকাশিত এ তালিকায় চীনা বিমান পরিবহন, মোটরসাইকেলের মতো জনপ্রিয় বাহন, কলকারখানাসহ নানা শিল্পপ্রযুক্তি, টেলিভিশনসহ তথ্যপ্রযুক্তিও রয়েছে। আছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, বই বাঁধাই সামগ্রীসহ নানা শিক্ষাসামগ্রীও। এসব পণ্যের বার্ষিক আমদানি মূল্য ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিয়ে মধ্যস্থতার দেখভাল করা হোয়াইট হাউসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় জানায়, চীনকে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড, নীতি ও চর্চার পথ থেকে সরিয়ে আনতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কারণে বেইজিংয়ের পণ্যে এ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খসড়া এ তালিকার চূড়ান্ত ও কার্যকর করতে দু’মাসের মতো সময় লাগতে পারে। চীন তার দেশে বিনিয়োগ করতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে প্রযুক্তি ভাগাভাগিতে চাপ দিচ্ছে- তদন্তে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে গত মাসেই ট্রাম্প বেইজিংয়ের কোন কোন পণ্যে শুল্কারোপ করা যায় তার তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ তালিকা প্রকাশের ঘটনায় গতকাল বুধবার চীনও কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ‘তীব্র নিন্দা ও দৃঢ় বিরোধিতা’র কথা জানিয়েছে দেশটি। ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের একতরফা ও সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মৌলিক নীতি ও মূল্যবোধের গুরুতর লঙ্ঘন। ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ চীন-যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের স্বার্থই রক্ষা করবে না। এটি বিশ্ববাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
দূতাবাসটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়. ‘চীনারা যেমনটা বলে আসছে, (এ ক্ষেত্রে) পাল্টা পদক্ষেপই এর একমাত্র শালীন পন্থা। চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় এ বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করবে এবং চীনের আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সমান মাত্রা ও শক্তির পাল্টা পদক্ষেপ নেবে।’ এদিকে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীও ‘শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বিরুদ্ধে একই তীব্রতা ও মাত্রার পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে ঠিক কী ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে না জানানো হলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন, বিমান ও নানা যন্ত্রপাতি চীনের প্রধান লক্ষ্য হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে দেশটির ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ এক প্রকার চরম রূপ নিল। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি দুটি দেশের এমন ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ বিশ্ববাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরই মধ্যে চীনা পদক্ষেপের পর যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শেয়ারবাজার কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের দুর্ভোগে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এতে চড়া দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হবেন ভোক্তারা।