রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভূমিকম্পের চেয়ে বড় আশঙ্কার কারণ হয়ে ওঠে সুনামির সম্ভাবনা। কিন্তু কেন সুনামি হয়? এবং কেন এটি এতটা ধ্বংসাত্মক?
সুনামি কীভাবে সৃষ্টি হয়
সাধারণ সমুদ্রের ঢেউ সৃষ্টি হয় বাতাসের প্রভাবে, যেখানে কেবল পানির উপরিভাগে অস্থিরতা দেখা যায়। কিন্তু সুনামি তৈরি হয় সমুদ্রের গভীর তলদেশে, যেখানে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত অথবা ভূমিধস হঠাৎ করে পানির বিশাল স্তম্ভকে স্থানচ্যুত করে। এর ফলে গভীর সমুদ্র থেকে শুরু হয় অত্যন্ত গতিশীল ও শক্তিশালী তরঙ্গের যাত্রা।
টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষই মূল কারণ
পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে থাকা টেকটোনিক প্লেটগুলো যখন একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খায় বা একটির নিচে অন্যটি ঢুকে যায়, তখন সেখানে বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হতে থাকে। হঠাৎ এই শক্তি মুক্ত হয়ে গেলে সমুদ্রতলের বড় অংশ একসঙ্গে সরে যায়। এর ফলে সাগরের পানি উচ্চতা ও শক্তি নিয়ে বিশাল তরঙ্গের সৃষ্টি করে, যা পরে সুনামিতে রূপ নেয়।
গভীর সমুদ্রে গতি, উপকূলে ধ্বংস
গভীর সমুদ্রে সুনামির তরঙ্গ ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার গতিতে এগোয়। সে সময় তরঙ্গের উচ্চতা মাত্র ১-২ মিটার হলেও উপকূলের কাছে আসার সময়, সমুদ্রের তলদেশ ধীরে ধীরে উঁচু হওয়ায় তরঙ্গের গতি কমে যায় এবং উচ্চতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর ফলে সৃষ্ট জলরাশি উপকূলে আঘাত হানে এক ভয়াবহ জলপ্রাচীর হিসেবে।
ইতিহাসের ভয়াবহ সুনামিগুলো
২০০৪ সালের সুমাত্রা ভূমিকম্প ও সুনামি: প্রাণহানি প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার
২০১১ সালের জাপান: ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত্যু প্রায় ২০ হাজার
১৮৮৩ সালের ক্রাকাতোয়া: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামিতে প্রাণহানি ৩৬ হাজার
১৯৭৬ সালের ফিলিপাইন: ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামিতে মৃত্যু প্রায় ৮ হাজার
কেন সুনামির ঢেউ এত ভয়ংকর
সুনামির তরঙ্গ সাধারণ ঢেউয়ের মতো শুধু উপরিভাগে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি পুরো পানির স্তম্ভ একযোগে অগ্রসর হয়। ফলে এর ধাক্কা প্রচলিত ঢেউয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধ্বংসাত্মক হয়। অনেক সময় প্রথম ঢেউ তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও পরবর্তী ঢেউ আরও বড় ও ভয়াবহ হতে পারে।
সতর্কতা এবং প্রস্তুতিই একমাত্র রক্ষাকবচ
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটির বেশি মানুষ উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে, যারা সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই আগাম সতর্কতা, দ্রুত আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্রযুক্তি—যেমন ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ, বুয়ি সেন্সর এবং উপগ্রহ চিত্র—সতর্ক সংকেত দিতে পারলেও ব্যক্তি বা সামষ্টিক প্রস্তুতি ছাড়া ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয়।
বিশেষত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘রিং অব ফায়ার’ এলাকায়, যেখানে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা বেশি, সুনামির ঝুঁকি সবসময়ই বিদ্যমান।