গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধ না হলে এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, আগামী সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির এমন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল-শেইখ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও বৈধতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি প্রতিশ্রুতির পুনঃনিশ্চয়ন। তিনি আরও বলেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
‘সাহসী পদক্ষেপ’ বলছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘোষণাকে ‘একটি সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যা ব্রিটেনকে ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড় করিয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বৈধতা ও আরব শান্তি প্রস্তাবনার ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি পথ উন্মোচন করবে।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এমন দেশগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যারা এখনও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
ব্রিটেনের শর্ত ও আন্তর্জাতিক সমর্থন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, তার সরকার সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে—যদি ইসরাইল গাজায় সামরিক আগ্রাসন বন্ধ না করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ না নেয়।
এর আগে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংখ্যা বাড়ছে বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন শুরুর পর।
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অঞ্চলটি চরম খাদ্য সংকটে বিপর্যস্ত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করছে।
সম্প্রতি, ইসরাইলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ব’তসেলেম এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে এবং সংগঠিতভাবে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টার অংশ হিসেবেই এই হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
এর আগে, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।