ইভান পাল
গত ১৩ ও ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো অবন মেলা উৎসব এর।
এদিন ভোরের আলো ফুটতেই রবীন্দ্র সংগীতের মন মাতানো সুর ভেসে আসছিলো রবীন্দ্রভারতীর ক্যাম্পাস থেকে।
একদিকে ছিলো প্রকৃতির রাজ্যে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা, পত্র পল্লবে হাল্কা শিশির ভেজা আবহাওয়া তো ছিলোই সাথে মন মাতানো হাওয়া দিচ্ছিল চারদিকে।

আর অন্যদিকে জোড়াসাঁকোর এই ঠাকুর বাড়িতে চলছিল অবন মেলার আয়োজন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়েই ছিলো সাজ সাজ রব। শিক্ষার্থীরাও সেজেছিলেন বেশ করে সাথে আবার তারা খুব ব্যস্ত নিজেদের স্টলগুলো সাজাতে।
একদিকে রবীন্দ্রসংগীত অন্যদিকে এই প্রকৃতি সাথে আবার অবনমেলা অর্থাৎ সবটা মিলিয়ে মিশিয়ে পুরো পরিবেশটা ছিলো অসাধারণ!
১৯৯৯ সাল থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহী এ অবনমেলা। আর এবার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব টি ২০ বছরে পদার্পণ করল। এনিয়ে অনেকটা যদি সাহিত্যের রসেই বলি, তবে বলতেই হয়~ “শৈশব, কৈশর পেরিয়ে আজ সে (অবন মেলা) তরুণ (২০বছরে পা রাখলো)।
এ প্রসঙে যদি একটু বলি—-
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন খ্যাতিমান ভারতীয় চিত্রশিল্পী, নন্দনতাত্ত্বিক এবং লেখক। আবার তারঁ অন্য পরিচয় হচ্ছে — তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের একজন সদস্য। গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। আর সে দিক থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তারঁ পিতৃব্য (কাকা) ।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে অবন ঠাকুর ও বলা হতো। তো, অবন ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ ই আগষ্ট ১৮৭১ সালে। আর তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ৫ই ডিসেম্বর ১৯৫১ সালে।
বলা হয়ে থাকে, যেহেতু অবন ঠাকুর ডিসেম্বর মাসে দেহান্তরিত হয়েছিলেন তাই ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মরণে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার এ অবনমেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর এরপর থেকেই প্রতিবছর এ অবনমেলা উৎসব টি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত জাকঁজমকভাবে এবং বর্ণিলভাবে উদযাপন করে আসছে।
অনেকেই মনে করেন, নন্দন মেলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই অবন মেলার পথ চলা। ভারতের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল পদের দায়িত্ব পান ১৯২২ সালে। নন্দলাল বসুর জন্মদিন হলো ১৮৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর। আর এ উপলক্ষ্যে তাঁর জন্মদিনের আগের দু’দিন শান্তিনিকেতনের কলাভবন চত্বরে আয়োজিত হয় এই নন্দন মেলা।
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী তে চলে নন্দন মেলা আর রবীন্দ্রভারতীতে চলে অবনমেলা ।।

অবন মেলায় এলে পাওয়া যাবে রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে প্রস্তুতকৃত সুন্দর সুন্দর সব পেন্টিং, গয়নার সামগ্রী, মাটির বিভিন্ন পণ্য।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এই মেলায় অংশ নেয়।
মূলত: এতে ভাস্কর্য, পেইন্টিং, অ্যাপ্লাইড আর্ট, ভিজুয়াল আর্ট, হিস্টোরি অব আর্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতকৃত হাতে তৈরি পণ্য সামগ্রী ই পাওয়া যায়।
মেলায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাই যৌথভাবে বিভিন্ন হাতে তৈরি পণ্যের দোকান বা স্টল দিয়ে থাকেন। তারাই ঐ দুদিনের জন্য বিক্রেতা হিসেবে তাদের ই প্রস্তুতকৃত এসকল পণ্য সামগ্রী বিক্রি করেন। মেলা টি ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত।

আর দু-দিন ব্যাপি এ মেলা শুরু হয় দুপুর ১২ টা থেকে মেলা শেষ হয় রাত ৯ টায়। এসময় বিভিন্ন দশর্নাথীরা আসেন এবং মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। আর তাদের পছন্দসই, প্রয়োজনীয় কিংবা শৌখিন সব হাতে তৈরি পণ্য সামগ্রী তারা কিনে থাকেন।
তবে মেলাতে যে শুধুমাত্র পণ্য সামগ্রী ই পাওয়া যায়, তা কিন্তু একেবারে ই নয় এতে খাবারেরও বিভিন্ন স্টল ছিল। মেলা মানেই তো খাওয়া-দাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো।
গত ১৩ ই ফেব্রুয়ারি দু-দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত এই অবনমেলার শুভ উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী।

এই মেলা সম্পর্কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়্যাল আর্টস ডিপার্টমেন্টের ৪র্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মহুয়া নওশিন জানান, “প্রতি বছর ই আমাদের ক্যাম্পাসে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রতি বারই এই মেলা কে ঘিরে আমাদের বিশাল রকমের প্রস্তুতি থাকে। নতুন শিল্পকে সৃষ্টি করার কিংবা পুরনো শিল্প গুলোকে আরো সমৃদ্ধ করবার ই একটা প্রয়াস আমাদের এই অবনমেলা। আমাদের প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই নিরলস পরিশ্রম আর চেষ্টা ছিলো মেলায় দর্শনার্থীদের সৃজনশীল, সুন্দর আর সার্থক কিছু উপহার দেবার ।”
উল্লেখ্য, এ মেলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে~ মেলায় পণ্য সামগ্রীর বিক্রীত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-কল্যাণ ফান্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়।