Home বিশ্ব জাতিসংঘ ও সিরিয়া ইস্যু

জাতিসংঘ ও সিরিয়া ইস্যু

0

ফাতিহা অরমিন নাসের

আচ্ছা, আপনি কী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন? ব্যবহার করে থাকলে নিশ্চয়ই দেখেছেন সিরীয় শিশুদের রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া নিষ্পাপ মুখগুলোর এ বীভৎস ছবি যেন সমগ্র সিরিয়ারই প্রতিনিধিত্ব করছে।

পুরো সিরিয়াজুড়েই চলছে এমন ধ্বংসযজ্ঞ। বাশার সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যকার এ সংঘর্ষে রাশিয়ার মদদ আরো উসকে দিচ্ছে পুরো পরিস্থিতিকে। ফলাফল, আকস্মিক এক বোমা হামলায় দেড়শো’রও‌ বেশী সিরীয় শিশুর মৃত্যু। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, এতবড় গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিশ্ব শান্তিসংস্থা জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এমন নির্বাক দর্শকের ভূমিকা বাড়িয়ে দিচ্ছে যুদ্ধের ভয়াবহতা।

সমস্ত হত্যাযজ্ঞটি সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ বলে এতে হস্তক্ষেপ করতে পারছেনা অন্যান্য দেশগুলো। তবে “সিভিলিয়ান অ্যাক্টস” এর আওতায় জাতিসংঘের ষোলআনা অধিকার বর্তায় এই গৃহযুদ্ধের হাত থেকে সাধারণ মানুষ ও শিশুদের বাঁচানোর। কিন্তু আরো অনেক গণহত্যা ইস্যুর মতো সিরিয়া ইস্যুতেও জাতিসংঘ হাত গুটিয়ে বসে আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন সংকট থেকে শুরু করে হালের রোহিঙ্গা সংকটেও‌ জাতিসংঘের একমাত্র ভূমিকা ছিলো নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ, স্মৃতিসৌধ নির্মান ও ত্রাণবিতরণ করা। দিনদিন জাতিসংঘ যেন শান্তিসংস্থা থেকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থায় পরিণত হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের অস্তিত্ব ও যৌক্তিকতা-সফলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। জাতিসংঘের পূর্বসূরী লীগ অব নেশনসের উদ্দেশ্যও শান্তি প্রতিষ্ঠা হলেও এ উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বিফল হয়। ফলে ভেঙে যায় সংস্থাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম নেয় জাতিসংঘ। শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এর জন্ম হলেও আদতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার আইনসমর্থিত প্রতিফলন ঘটানোর কাজই করে চলেছে সংস্থাটি। যার অন্যতম উদাহরণ দেখা গেল সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ও সিরিয়া সংকটে। নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ায় ৩০ দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হলেও বাস্তবে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি জারি করেছে মাত্র পাঁচঘন্টাব্যাপী। এ পাঁচঘন্টাতেও সাধারণ মানুষ পালাতে পারেনি বিদ্রোহী পক্ষের কারণে। ফলে আবারো বলির পাঁঠা হয়েছে সাধারণ মানুষ। এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতাধর রাষ্ট্র তো বটেই, এমনকী বিদ্রোহী যোদ্ধাদের তুলনায়ও‌ জাতিসংঘ কতটা অসহায়!

থিতিয়ে পড়া রোহিঙ্গা ইস্যু বা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সিরিয়া ইস্যু সন্দেহ জাগায় জাতিসংঘের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা সম্বন্ধে, প্রশ্ন তোলে, সত্যিই শান্তি রক্ষায় কতটুকু ভূমিকা রাখছে বৈশ্বিক শান্তিসংস্থা জাতিসংঘ?

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version