গাজায় পানির তীব্র সংকটের মধ্যেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা। আজ রোববার মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রের সামনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন শিশু। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৬ জন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শরণার্থীশিবিরে সরবরাহ করা পানি পানযোগ্য না হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত নিরাপদ পানির জন্য বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজার চিকিৎসা সূত্র বলছে, পানি সংগ্রহের সময়ই হতাহত হন এরা। এ নিয়ে গেল কয়েক মাসে পানির খোঁজে বের হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ১০ বার হামলা চালাল ইসরায়েলি বাহিনী।
রোববার সারাদিন গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে মোট ৫৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগের দিন শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১১০ জন, যাদের মধ্যে ৩৪ জন নিহত হন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময়।
অনাহারে মৃত্যু এবং মানবিক বিপর্যয়
ইসরায়েলি অবরোধে খাদ্য ও পানির চরম সংকটে থাকা গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনের পর এখন পর্যন্ত অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৭ শিশুর। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত মার্চ থেকে গাজায় অপুষ্টির হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। অবরোধের ফলে ইউএন সংস্থাগুলোর ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জিএইচএফ বিতরণ করছে সীমিতসংখ্যক খাবারের পার্সেল, যা একটি পরিবারের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ। সংস্থাটির বিতরণ ব্যবস্থা এবং খাদ্যের মান নিয়ে জাতিসংঘও ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ও আলোচনা ব্যাহত
গাজায় চলমান সহিংসতার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ। কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান পরোক্ষ আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আলোচনায় আসে। তবে সূত্রমতে, ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহারের পরিবর্তে গাজায় সেনা মোতায়েনের মানচিত্র উপস্থাপন করায় আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়।
মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষকে আলোচনা স্থগিত রাখতে বলেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দূত স্টিভ উইটকফের দোহা সফরের আগপর্যন্ত।
তবে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, “আমরা নমনীয়তা দেখানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু হামাসের অনমনীয় অবস্থানই চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।”
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পানি ও খাদ্যের খোঁজে গিয়ে শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও পূর্ণাঙ্গ মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।