গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ২২ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে শিশু ও নারীসহ অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি অবরোধের ফলে চরম খাদ্যসংকটে পড়ে দুর্ভিক্ষের মুখে উপত্যকাটি। ইতোমধ্যে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ১৪৭-এ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা প্রতিদিন গড়ে ৯০ জনের বেশি মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জন।
আজ মঙ্গলবারও গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলার শিকার হন। গত ২৪ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন আরও ৬৩৭ জন।
ইসরায়েল দাবি করছে, তারা হামাসকে নির্মূল করতে অভিযানে নেমেছে। তবে বাস্তবে নিহতদের বড় একটি অংশই শিশু, নারী ও বেসামরিক মানুষ। ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েলভিত্তিক দুটি মানবাধিকার সংস্থাও একই অভিযোগ তুলেছে।
ত্রাণ প্রবেশে বাধা, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে কিছুটা শিথিলতা আনলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) দাবি, প্রতিদিন যা প্রয়োজন, তার অনেক কম ত্রাণই উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারছে।
WFP-এর কর্মকর্তা রস স্মিথ জানান, গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য তারা যতটুকু অনুমতি চেয়েছেন, তার পুরোটাই মেলেনি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন। এর মধ্যে ৯০ হাজার নারী ও শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC)-এর তথ্যমতে, গাজায় প্রতি মাসে প্রয়োজন ৬২ হাজার টন খাদ্য, অথচ মে মাসে মাত্র ১৯ হাজার ৯০০ টন এবং জুনে ৩৭ হাজার ৮০০ টন খাদ্য প্রবেশ করেছে।
এই সংকটে মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৭ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।
দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানেই শান্তির পথ
ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের মধ্যে সোমবার শুরু হয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক সম্মেলন। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে আয়োজিত সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে পশ্চিম তীরকে বিচ্ছিন্ন করা এবং নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ—উভয় প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকেই একমাত্র পথ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে, গাজায় পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানাতে নেদারল্যান্ডস সরকার ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং দুই ইসরায়েলি মন্ত্রীর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।