রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ধীরে ধীরে একের পর এক ইউক্রেনীয় এলাকা দখলে নিচ্ছে রুশ বাহিনী। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনজুড়ে ক্রমবর্ধমান হামলা ও আগ্রাসনের ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের বিস্তৃতি ও ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে।
৭২ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় বাসিন্দা ভ্যালেন্টিন ভেলিকিই জানান, তার গ্রাম মালিয়িভকা এখন সরাসরি রুশ হামলার আওতায়। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমার ঘরের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র যেতে শুরু করেছে। আকাশে ধোঁয়ার রেখা দেখা যায়। বিস্ফোরণের শব্দ অসহনীয়।”
গ্রামটি দনিপ্রোপেত্রোভস্ক ও দোনেৎস্ক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। একসময় রুশ সেনারা অনেক দূরে থাকলেও এখন তারা পৌকোভস্ক শহর ঘিরে ফেলেছে এবং আশপাশের উন্মুক্ত প্রান্তর একে একে দখলে নিচ্ছে।
রুশ আগ্রাসনের ধারা
প্রায় ৯৬৫ কিলোমিটার ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি রাতে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। এতে সাধারণ মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে।
মে মাসে মালিয়িভকায় তীব্র লড়াই শুরু হয়। হামলায় প্রথমে একটি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পরে পুরো গ্রামেই হামলা চালানো হয়। বাসিন্দাদের বড় অংশ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। গ্রামে মাত্র কয়েকজন থেকে গিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে একজন ভেলিকিই।
তিনি জানান, একটি রাশিয়ান গ্লাইড বোমা সরাসরি তার বাড়িতে আঘাত হানে, যা মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়। প্রাণে রক্ষা পেয়ে তিনি ঘর ছেড়ে পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
কৌশলগত অগ্রগতি ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন
২০২২ সালে ক্রেমলিন ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ– লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া– রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা দেয়। তবে শুধু লুহানস্কই তারা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে। সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে দনিপ্রোপেত্রোভস্ক এখন রুশ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক আলোচনায় সামান্য গতি এলেও সমাধান এখনও দূরে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করার দাবি থেকে পিছু হটেননি। তিনি চান, ইউরোপের নতুন মানচিত্রে রাশিয়ার আধিপত্য বাড়ুক।
মানবিক সংকট
আক্রমণের মুখে গ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। বহু পরিবার নিজেরা সরিয়ে নিচ্ছেন সন্তান-পরিজনদের। দাতব্য সংস্থা প্রোলিসকার সহায়তায় বহু বয়স্ক ও অসহায় বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী, যদিও ফ্রন্টলাইনকে ‘স্থিতিশীল’ বলছে, বাস্তব পরিস্থিতি অনিশ্চিত। সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা স্বীকার করছেন, গোলাবারুদ, ড্রোন ও সৈন্যসংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে। তবু তাঁরা রণক্ষেত্রে অবস্থান ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
কামিকাজে কৌশল ও সামরিক বাস্তবতা
রাশিয়া এখন “কামিকাজে” কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে—যেখানে সেনারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে ধীর গতির আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানি পাইলটদের অনুকরণে এই পদ্ধতি রাশিয়া সামরিক সাফল্যের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।