-সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত
এক নামেই যাকে চেনা, ‘শিল্পাচার্য’; ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালী চিত্র শিল্পী জয়নুল আবেদিনের আজ শুভ জন্মদিন। বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রচার- প্রসারে জয়নুল আবেদিনের পরিশ্রম ও অবদান অতুলনীয়। চিত্রশিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘শিল্পাচার্য’ অভিধা লাভ করেন।
জয়নুল আবেদিন ২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪ সালে আজকের এই দিনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন পুলিশের দারগা এবং মা জয়নাবুন্নেসা গৃহিণী। ছোটবেলায় তাঁর ছবি আঁকার বিশেষত্ব ছিল, তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েই চিত্রকর্মের উপকরণ তৈরি করতে পারতেন। তাই বেশ দারিদ্রতার মাঝে বড় হয়েও তিনি তাঁর ছবি আঁকা এবং একজন আঁকিয়ে হবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। চিত্রশিল্প চর্চার গভীর অনুরাগ থেকেই মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। তাই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করার আগেই মায়ের অণুসমর্থনে কলকাতা আর্টস স্কুলে ভর্তি হন এবং স্বপ্নের দিকে বহু ধাপ এগিয়ে যান। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা স্কুল অব আর্টসের ড্রইং এন্ড আর্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর সম্মান অর্জন করেন।
পূর্ববাংলার প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের গুরু হিসেবে ভূষিত করা হয় জয়নুল আবেদিনকে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর জয়নুল আবেদিনের উদ্দোগে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সট্রিটিউট যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত চারুকলা অনুষদ নামে খ্যাত। সেখানে পটুয়া কামরুল হাসানের মত গুণী চিত্রশিল্পীও তার সহকর্মী রূপে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালে ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্র সিরিজের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এ ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো হল: ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।তাঁরদীর্ঘ দুটি স্ক্রল ১৯৬৯-এ অংকিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অংকিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। অনুমান করা হয় তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
তিনি ব্যক্তিগত জীবনে জাহানারা আবেদীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
শিল্পজগতে তাঁর এসব মহান কীর্তিমালা উপমহাদেশিয় চিত্রকর্মকে বিশ্বদরবাদে উঁচু আসনে স্থান দিয়েছে। আজও ছোট বড় সব চিত্রশিল্পীরা ছবি আঁকার আগে শিল্পাচার্যের নামই স্মরণ করে।
শুভ জন্মদিন ক্যানভাসের জাদুকর জয়নুল আবেদিন।