১২ বছরের শিক্ষার্থী শরীফ। এডুকো পাঠশালা মেরাদিয়া বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। পড়াশুনার পাশাপাশি তার মনোযোগ নতুন কিছু তৈরিতে। এই আবিষ্কারের নেশাটা অনেকটা লুকানোই ছিলো বলা যায়। বাসায় পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় তার, ছোট ছোট বাতি, মটর, ব্যাটারি ইত্যাদি উপকরণ মিলিয়ে নানা রকম জিনিস তৈরি করতো সে।
তৈরিকৃত জিনিসগুলো কাছের বন্ধুদের দেখালে কারো কারো প্রশংসা শোনা যেতো, এতে আগ্রহ বাড়তো শরীফের। এভাবেই চলছিলো সব। তবে তার কাজটাকে আরো অনেকটা বড় পরিসরে এগিয়ে নিতে সহায়তা করলো তার বিদ্যালয়। শিক্ষকদের নজরে আসতে প্রশংসার পাল্লাটা আরো ভারী হতে লাগলো শরীফের। আগ্রহটাও অনেক বাড়তে থাকলো।
ইঞ্জিন চালিত ছোট আকৃতির নৌকা, ব্যাটারি চালিত পাখা তৈরি ইত্যাদি নানান কাজে সে তার পারদর্শিতা দেখাতে থাকলো। তার কাজকে স্বীকৃতি মেলানোর সুযোগ পেলো বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান মেলায়। শুধু তাই নয়, আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণের সুযোগ পেলো। বিদ্যালয়কে এনে দিলো নতুন এক সম্মাননা। তার বিদ্যালয়কে তুলে ধরতে সে তৈরি করেছিলেন এটিএম বুথ। কার্ড দিয়ে, নম্বর চেপে এন্টার করতেই একটি বাক্স থেকে বেড়িয়ে আসে টাকা! তার চমৎকার এই কাজ দেখে বন্ধুরা যেমন অবাক হয়েছিলো, তেমনি বাড়তে থাকলো শরীফের আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস। অনেকের জন্য ফেলনা জিনিসগুলো শরীফের কাছে বেশ কাজের।
এটি হয়তো তার ব্যক্তিগত আবিষ্কার নয়, তবে এই যে তার চেষ্টাটা তাকে এই কাজটি করতে সহায়তা করলো এই চেষ্টাই হয়তো এক সময় আবিষ্কার করাবে এমন কিছু যা তার বিদ্যালয়ের বন্ধুদের মতো অবাক করবে পুরো বিশ্বকে।
শরীফ বলেন, তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার শিক্ষকদের কথা। কারণ, তার মতে- “তার শিক্ষকরা তাকে বোঝেন, তাকে তার মতো করে বোঝান। তার স্বপ্নগুলোকে নিয়ে বড় করে ভাবতে সহায়তা করেন।” একদিন এভাবেই হয়তো এই স্বপ্ন আমাদের এনে দেবে একজন নতুন বিজ্ঞানী বা আবিষ্কারক।
শরীফের মতো এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে এডুকো পাঠশালা মেরাদিয়ায় এবং এডুকোর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে। যাদের আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশু বলে থাকি। তবে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বঞ্চিত নয় শিক্ষার সুবিধা থেকে। শুধু পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ নয় তাদের জীবন। তারা জানছে বিশ্বকে, স্বপ্ন দেখছে আকাশ ছোঁয়ার। একদিন এই শিশুদের হাত ধরেই দেশ আলোকিত হবে, আলোকিত হবে পৃথিবী। এমন কিছু স্বপ্ন নিয়েই কাজ করছে এডুকো, বাংলাদেশ। স্বপ্নের বীজ বুনে যাচ্ছে শিশুদের হৃদয়ে।