ফারহানা ইসলাম
শপথ গ্রহন
যদি নবাগত ম্যাসন্রী স্বীয় অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে তাকে মস্তকাবনত করে পবিত্র ধর্মগন্থ (যেমন – তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন)দেখিয়ে চীফ বলে – তুমি আঁধার কক্ষে অনেক কালাতিপাত করেছ। সংগঠন তোমার রক্তের শেষ ফোঁটা পর্যন্ত প্রবাহিত করার শপথ নিয়ে তোমার দায়িত্ব গ্রহন করছে। তুমি কি এখনও এর সদস্য হতে উদগ্রীব? যদি নবাগত ইতিবাচক মস্তক নাড়া দেয় তাহলে শোধানো হয়- তুমি এখন কি চাও? ‘ম্যাসন্রী আলো’র অভিলাষের ফলে চীফ বলে- তোমাকে তা বিতরণ করা হবে। তাবৎ তার আঁখিযুগল কালপট্টি ও গ্রীবাদেশ রশি দ্বারা বাঁধা রয়েছে। এই শপথগ্রহণের পর তা- থেকে মুক্ত করা হলে সে দেখতে পায়-তীক্ষ কোষমুক্ত তরবারী মুখ ও বুক বরাবর তাক করা। তাকে বলা হয়- ‘এই তরবরীগুলো তোমার সংরক্ষক। তুমি যদি শপথভঙ্গ কর তাহলে এগুলোই হবে তোমার ভক্ষক। আর এই গলদেশের রশিই হবে ফাঁসির কাষ্ঠ। এখন তুমি আমাদের সহোদরের মত। তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্যান্য সহোদরের মতই’। এমনি ভাবে নবাগত প্রথম এভাবে নবাগত প্রথম স্তরের সদস্য হয়। (আল-মাসূনিয়াহ ফিল আরা, হক্বীক্বাতুল মাসূনিয়্যাহ)
পদোন্নতি
তারপর ধীরে ধীরে তার যোগ্যতা ও সংগঠনে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের ভিত্তিতে পদোন্নয়ন করা হয়। সে প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তর, ধীরে ধীরে বিশতম স্তরে উন্নীত হয়। প্রতিটি স্তরে উন্নীত হওয়ার সময় তার শপথের নবায়ন করতে হয়। ডঃ যু’বী তাঁর ‘আল-মাসূনিয়াহ ফিল ‘আরা’ গ্রন্থে এই শপথনামাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মোদ্দাকথা এই- পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শপথনামা অত্যাধিক দুস্কর ও তিক্ত শর্তারোপ করা হয়। উদাহারণ স্বরূপ: আমি শপথ করছি যে-
(ক) সংগঠনের যাবতীয় সংকেত ও কোড অত্যন্ত গোপন রাখব।
(খ) সংগঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কোন দায়িত্বহীনতা প্রকাশ করব না। কারও ভয় প্রদর্শনে বিচলিত হব না। তাতে আমার প্রাণ পাখি উড়ে গেলেও।
(গ) আত্মীয়তার বন্ধন, রক্ত ও বংশের টান ও জাতীয় স্বার্থের উর্ধে আমার মিশনকে অগ্রাধিকার দিব।
(ঘ) মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব-সবার সঙ্গ পরিত্যাগ করব। যাতে কেউ-ই আমার মিশনের অন্তরায় না হয়।
সংকেত ও ভাষা
যেভাবে পৃথিবীর নানা জাতির স্বতন্ত্র ভাষা ও লিখন পদ্ধতি আছে, তেমনি ম্যাসন্রীদের ও স্বতন্ত্র ভাষা ও ইঙ্গিত আছে। যা তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে পড়ে ও লেখে। এই বৈচিত্র্য শুধু অক্ষর আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সংখ্যা দ্বারাও তারা অক্ষরের সমাধা করে নেয়। প্রত্যেক অক্ষরের একটি সমার্থক সংখ্যা আছে
ফ্রীম্যাসনের বাহ্যিকরূপ
এই আন্দোলনের বাহ্যিক দিকগুলো অত্যন্ত লোভনীয় ও মনোমুগ্ধকর। বাহ্যত বুঝা যাবে – এটি একটি সামাজিক বা ধর্মীয় সংগঠন। কিন্তু প্রকৃত রূপ সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ। আসুন, প্রথমে বাহ্যিক দিকগুলোর প্রতি নজর বুলিয়ে নিই, তারপর অভ্যন্তরীণ রহস্য নিয়ে আলোচনা করব।
আল্লাহর উপর ঈমান
তাদের দাবী- তারা ঈমান বিল্লাহর প্রতি আহবান করে। একথার দলীল তাদের প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘পুরাতন অসিয়তসমূহ’ – যা ১৭৩৮ সালে প্রণয়ন করা হয়। এই গ্রন্থের প্রণেতা দাউদ ক্যাসিলীর হস্তলিখিত পান্ডুলিপিটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বাইবেল সেকশন ষ্টোর:১৭, সেল্ফ: অতে সংরক্ষিত আছে। তার সংক্ষিপ্ত অসিয়তগুলো একটু দেখুন:
‘প্রত্যেক (ম্যাসন্রী) ভাইয়ের উপর কর্তব্য হলো- গির্জা, পাদ্রী ও রাব্বীদের সমীহ ও শ্রদ্ধা করা। এই তিনটিকে স্বীয় আত্মার মত হেফাজত করা’। যে নবাগত সদস্য হয় তাকে সর্বপ্রথম এই নুসখাটি দেয়া হয়। এ দ্বারা যে নবাগত সদস্য হয় তাকে সর্বপ্রথম এই নুসখাটি দেয়া হয়। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে- তাদের কাছে আল্লাহর উপর ঈমান অবশ্য কর্তব্য। তাদের সেমিনারের সূচনাও সমাপ্তি প্রথানুসারে আল্লাহর নাম দ্বারা করা হয়।