বদরুল ইসলাম (বরগুনা)
বন্ধু—এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে যেন লুকিয়ে থাকে বিশাল এক অনুভূতির জগৎ। বন্ধুত্ব এমনই এক সম্পর্ক, যার কোনো রক্তের বাঁধন নেই, নেই সামাজিক চুক্তি বা পারিবারিক বাধ্যবাধকতা, তবুও এই সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর, সবচেয়ে নির্ভরতার। আর সেই বন্ধুত্বকেই উদযাপন করার দিন আজ—Friendship Day বা আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস।
ইতিহাস ও উৎপত্তি
বন্ধু দিবসের সূচনা হয় ১৯৩৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সে বছর আগস্টের প্রথম রবিবার এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়, যার প্রতিক্রিয়ায় তার এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর, বন্ধুত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আগস্টের প্রথম রবিবারকে ‘Friendship Day’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
এরপর জাতিসংঘ ৩০ জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে আগস্টের প্রথম রবিবারই পালিত হয় বন্ধু দিবস হিসেবে।
বন্ধুত্বের ভাষা: এক মানবিক বন্ধন
বন্ধুত্বের ভাষা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, শ্রেণি—সব কিছুকে অতিক্রম করে। স্কুলজীবনের টিফিন ভাগাভাগি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে চায়ের আড্ডা, কর্মক্ষেত্রের টেনশন ভাগ করে নেওয়া কিংবা জীবনের দুঃসময়গুলোতে কাঁধে মাথা রাখার জায়গা—বন্ধু সবখানেই।

সামাজিক মাধ্যম ও আধুনিক বন্ধুত্ব
এই ডিজিটাল যুগে বন্ধুত্বের রূপ বদলেছে। আগে চিঠি লিখে বন্ধুর খোঁজ নেওয়া হতো, এখন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামেই প্রতিদিনের যোগাযোগ। অনেক বন্ধুই এখন কেবল ভার্চুয়াল, যাদের সঙ্গে কখনও সামনাসামনি দেখা হয়নি, তবুও যেন আত্মার আত্মীয়।
বন্ধু দিবসের আয়োজন
বন্ধু দিবসে অনেকে বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানায়, উপহার দেয়, কবিতা লেখে কিংবা স্মৃতিমাখা কোনো আড্ডায় কাটিয়ে দেয় দিনটি। বিভিন্ন সংগঠনও আয়োজন করে বন্ধুত্বভিত্তিক অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা কিংবা সামাজিক বার্তাবাহী প্রচার।
সমাজে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা
বিভক্ত, বিভাজিত, অসহিষ্ণু এই সময়ে বন্ধুত্বই হতে পারে সবচেয়ে বড় সামাজিক প্রতিষেধক। বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে বৈষম্য কমে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি বাড়ে। বন্ধু দিবস তাই শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক উদযাপনের দিন নয়, এটা এক মানবিক সংস্কৃতির প্রতীক।
বন্ধু দিবস বছরে একদিন হলেও, বন্ধুত্বের প্রয়োজন প্রতিটি দিনে। আসুন, এই দিনে পুরোনো বন্ধুকে একটা ফোন দিই, নতুন কোনো বন্ধুকে সময় দিই। আর মনে রাখি—বন্ধুত্ব শুধু অনুভবের নয়, তা যত্নেরও বিষয়।