সানিলা আহমেদ
দুর্ঘটনা কার জীবনে না আসে? সবার জীবনে কোন না কোন দুর্ঘটনা আসেই। কিছু কিছু দুর্ঘটনাতে আমাদের প্রাণহানি ঘটে। তবে এমন কিছু দুর্ঘটনা আছে যা ঘটার পর আমরা নিজেদেরকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারি। সঠিক সময়ে এসব পন্থা অবলম্বন করলে প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারবে অনেকেই,আপনি নিজেও। তাহলে চলেন,জেনে নেই সেইসব দুর্ঘটনাগুলো এবং সেসব থেকে বাঁচার কৌশলগুলো।
বরফের পানিতে পড়ে গেলে:
বহিঃদেশে শীত আসলেই তুষারপাত শুরু হয়। তুষারপাত এ সব জলের উৎস হিমায়িত হয়ে যায়। যদি কোন কারণে আপনি ঐ হিমায়িত জলে পড়ে যান,তাহলে আপনার কাছে ১০ মিনিট আছে সেখান থেকে বেঁচে ফেরার। ১০ মিনিট এর বেশি সময় আপনি যদি হিম জলে থাকেন তাহলে আপনার দেহ অবশ হতে শুরু করবে। যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার পেতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে ভয় না পাওয়া। আপনি যদি পানির নিচে চলে যান তাহলে কোন শ্বাস নিবেন না,পানির উপরে থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই শ্বাস নিবেন। আপনার পরিধানে যে পোশাক-টি থাকবে সেটা খুলবেন না কারণ,পোশাকের ভিতর যে বায়ু রয়েছে সেটা আপনাকে ভেসে থাকতে সাহায্য করবে। আপনি যে রাস্তা দিয়ে পানিতে পরে গিয়েছেন সেই রাস্তা দিয়েই উঠে আসবেন,কারণ আপনি যেহেতু ঐ রাস্তা দিয়ে পরে যাওয়ার সময় বরফ ভেঙে যায় নি সুতরাং সেই রাস্তা দিয়ে উঠতে গেলেও তা ভাঙবে না। পানি থেকে উঠে আসার জন্য আপনার দু হাত বরফের উপর রেখে সামনের দিকে প্রসারণ করবেন এবং কনুই এর উপর ভর দিয়ে বরফের উপর উঠে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
বরফের উপর উঠে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো করবেন না কারণ এতে বরফ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি বরফের উপর উঠে হামাগুড়ি দিয়ে অথবা রোল করে সামনে এগিয়ে যাবেন। যত দ্রুত সম্ভব নিজেকে উষ্ণ করার চেষ্টা করবেন এবং খেয়াল রাখবেন যেন কোন প্রকার বরফের নাগালে আপনি না আসেন।
পতনশীল লিফট এর ভিতর থাকলে:
লিফট নষ্ট হয়ে নিচে পরে যাওয়ার ব্যাপারটা কমন না হলেও যেকোনো সময় আপনি এই অবস্থায় পরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার কিছু করণীয় এবং অকরণীয় রয়েছে। আপনার প্রথম অকরণীয় হবে লিফট নিচে পরার সময় যেন আপনি লাফ না দেন,এতে লিফট এর ছাদের সাথে আপনার মাথা আঘাত পেতে পারে। পতনের সময় কখনো আপনার পা দুটো অর্ধ নত রাখবেন না,এতে ব্যাল্যান্স হারিয়ে আপনি পরে যাবেন। তাহলে আপনার যা করণীয় তা হল,যত দ্রুত সম্ভব লিফট এ অনেক জায়গা নিয়ে শুয়ে পরবেন যতটুকু জায়গা নিয়ে আপনি পারবেন। আপনার এক হাত মাথার নিচে এবং অপর হাত দিয়ে দু চোখ রক্ষা করবেন,এতে ঝাঁকুনির সময় আপনি মাথায় বেথা পাবেন না এবং কোন কিছু পরে গেলে আপনার চোখ রক্ষা পাবে। একটা কথা মাথায় রাখবেন,পতনশীল লিফট এ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, ০.০০০০০০১৫ এর মধ্যে ১% মাত্র। সুতরাং ভয় না পেয়ে নিজের মস্তিষ্ক কে ঠাণ্ডা রাখবেন।
গাড়ি সহ পানিতে পড়ে গেলে:
আমরা গ্রামে যাওয়ার সময় কিভাবে যাই? কেউ কেউ বাসে,কেউ কেউ ট্রেন,নৌকা ইত্যাদি কত কিছুতে যাই। তবে গ্রাম এ যাওয়ার সময় প্রায়ই শোনা যায় গাড়ি পানিতে পরে এক্সিডেন্ট করেছে এবং তার যাত্রীরাও শেষ। আমাদের জীবনে যদি কখনো এমন সময় আসে যেখানে আমরা গ্রাম কিংবা অন্য কোথাও যাওয়ার সময় গাড়িতে থাকা অবস্থায় সেই গাড়ি পানিতে পরে গিয়েছে,তাহলে আমরা সেই সময়ে কি করব? বেশিরভাগ মানুষ গাড়ির দরজা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করবে,তখন শুরু হবে হুড়োহুড়ি। কিন্তু দেখা যাবে কেউই গাড়ির দরজা দিয়ে বের হতে পারছে না,এর কারণ হল,পানির চাপ দরজা খুলতে বাধা দিচ্ছে। তাহলে তখন সবার উচিত অবশ্যই জানালা দিয়ে বের হওয়া। যদি জানালা না খোলা যায় তবে জানালা ভেঙ্গে সেখান দিয়ে বের হওয়া,জানালা ভাঙ্গার জন্য মাঝখান দিয়ে না ভেঙ্গে কোনা অর্থাৎ সাইড দিয়ে ভাঙ্গা। যদি জানালা দিয়ে কোন কিছুতেই বের হওয়া না যায়,তবে তখন করণীয় হবে গাড়িতে সম্পূর্ণ পানি ভরা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। হ্যাঁ গাড়িতে সম্পূর্ণ পানি ভরা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কারণ, গাড়ির ভিতরেও যখন পানি এবং বাইরেও যখন পানি,তখন গাড়ির দরজা খোলা সম্ভব হয়। গাড়ির দরজা খোলার সময় খেয়াল করবেন কোন দিক দিয়ে বুদবুদ বের হয়ে উপরে যাচ্ছে। দরজা খোলার পর যেই দিক দিয়ে বুদবুদ উপরে উঠবে সেই রাস্তা দিয়েই আপনি সুবিধা মত সাঁতার কেটে উপরে উঠে যেতে পারবেন কারণ সেখানে কোন ঢেউ থাকবে না। তাই সকলের উচিত সাঁতার শিখে নেওয়া,কখন জীবনে কী এসে যায় আমরা জানি না,সুতরাং নদীমাতৃক দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত সাঁতার শিখে নেওয়া।
স্ট্রোক কিভাবে সনাক্ত করবেন:
স্ট্রোক সনাক্ত করার উপায়টি হল F. A. S. T. । এফ. দিয়ে বোঝায় ফেস বা মুখমণ্ডল কে। যদি কোন ব্যক্তি হাসতে গিয়ে তার হাসি হালকা বাঁকা কিংবা তির্যক থাকে,জিহ্বা বের করতে বললে তা হালকা বাঁকানো থাকে,তাহলে বুঝতে হবে স্ট্রোক এর একটি লক্ষণ দেখা গিয়েছে। অ্যা. দিয়ে বোঝায় আর্ম কিংবা হাতকে। স্ট্রোক করবে বা করেছে এমন ব্যক্তিকে যদি তার এক হাত কিংবা দু হাতকে উপরে ওঠাতে বলা হয় তবে সে তা পারবে না,হাত উঠতে তার অনেক অসুবিধে হবে। এস. দিয়ে স্পিচ বা বক্তব্য বা কথাকে বোঝায়, স্ট্রোকের রোগীকে যদি তার নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তবে সে প্রশ্নগুলো দিতে ইতস্তত করবে। টি. দিয়ে টাইম বা সময় কে বোঝায়, F. A. S. এর মধ্যে যেকোনো একটি অথবা একের অধিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণার্থী হতে হবে।
ডুবন্ত ব্যক্তিকে কিভাবে বাঁচাবো:
পানিতে সাঁতার কাটার সময় প্রায়ই দেখা যায় কেউ না কেউ ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যার বিষয় হল কে যে ডুবে যাচ্ছে আর কে-ই বা অপক্ব ভাবে সাঁতার কাটছে তা বোঝা কঠিন। তবে ডুবন্ত ব্যক্তির কিছু লক্ষণ মনে রাখলে আমরা তা বুঝে তাকে সাহায্য করতে পারব। আমরা যখন সাঁতার কাটি তখন আমাদের মুখ পানির নিচে থাকতে পারে,কিন্তু মাথা কখনো পানির নিচে থাকে না,কারণ আমরা পানিতে শয়ান অবস্থায় সাঁতার কাটি। কিন্তু যখন কেউ ডুবে যায় বা ডুবে যাওয়ার পথে,তখন সে বাঁকা কিংবা শয়ান অবস্থায় থাকবে না,সে প্রায় দণ্ডায়মান অবস্থায় পানিতে ভেসে থাকবে। তাই সেই সময় তাদের মাথাও সাধারনত পানির নিচে থাকবে। ডুবন্ত ব্যক্তির মুখ সর্বদা খোলা থাকবে কারণ সে দ্রুত শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং তার হাত-পা বেশি ছোটাছুটি করতে থাকবে। উপরে উঠার জন্য হাত-পা এত নড়াচড়া করার কারণে সে আরও পানির নিচে যেতে থাকবে এবং সে একবার উপরে উঠবে এবং একবার নিচে নামবে। সাঁতারুরা সাঁতার কাটার সময় ডানে,বায়ে এবং সামনে বারবার তাকায় কিন্তু ডুবন্ত ব্যক্তি তা করে না,তার চোখ,হয় কোন নির্দিষ্ট দিকে স্থির থাকবে নতুবা চোখ বন্ধ থাকবে। তাদের দুহাত থাকবে তাদের দু পাশে এবং পা থাকবে স্থির। এবার আমরা তাহলে কিভাবে তাদের বাঁচাবো?
আপনি যদি একমাত্র ভাল সাঁতারু হন এবং ব্যাকস্ট্রোক আর ফ্রিস্টাইল খুব ভাল ভাবে পারেন তবেই আপনি অন্য কাউকে বাঁচাতে যাবেন। কাউকে বাঁচানোর সময় আপনি ব্যাকস্ট্রোক স্টাইল ব্যবহার করবেন যাতে আপনি পিছন থেকে তাদের বাঁচাতে পারেন। আপনি যদি তাদের নিয়ে সামনের দিক দিয়ে যান তাহলে তারা আপনাকেই তাদের সঙ্গে পানির নিচে নিয়ে যাবে। যদি তারা সম্পূর্ণ পানির নিচে চলে যায় তবে আপনি প্রথমে পানির নিচ দিয়ে সাঁতার কেটে যাবেন কারণ পানির নিচ দিয়ে খুব দ্রুত যাওয়া যায়। পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে আপনি তাদের কাছে যাবেন এবং তাদের হাত নাহয় বাহুমূল ধরে পানির উপরে নিয়ে যাবেন এবং ব্যাকস্ট্রোক ব্যবহার করবেন। পানি থেকে বের হয়ে যত দ্রুত সম্ভব পানি তাদের শরীর থেকে বের করার চেষ্টা করবেন। আশা করি আপনাদের সবার এই লেখাটি ভাল লেগেছে এবং লেখাটি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন উক্ত পরিস্থিতি থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে এবং অন্যকেও বাঁচানো যাবে।