– সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত
ক্যানভাসের জাদুকর, তুলির এক আঁচড়েই যিনি ফুটিয়ে তুলতেন বাঙলা মায়ের জীবন্ত অবয়ব, অর্ধগলিত লাশ, শিশুর অস্ফুট আর্তনাদ; চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের জন্মদিবস আজ। তিনি ১৯২১ সালের দোসরা ডিসেম্বর ব্রিটিশ শাসিত ভারতের কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
কলকাতা মাদ্রাসায় তাঁর আঁকা একটি পাখির ছবি প্রকাশিত হবার পর তাঁর চিত্রোৎসাহ আরো বৃদ্ধি পায়। এরপরই বাবার সিদ্ধান্তে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। চিত্রজগতে কামরুন হাসানের অণুপ্রবেশ ওপাড় বাঙলার থেকে এপাড় বাঙলায় ব্যাপক বিপ্লব এনেছে। তিনি কলকাতা মাদ্রাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে স্নাতক পাশ করেন। এর পরবর্তী সময়ের পুরোটাই তিনি তাঁর চিত্রশিল্প চর্চায় ব্যয় করেন। ১৯৪৮ এর ভারত বিভাগের পর তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সান্নিধ্যে থেকে একত্রে ‘ঢাকা চারু ও কারুকলা অনুষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগের অন্তর্গত। পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি তার কাগজ ও তুলি হাতে নিয়েই প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি মূলত তেল রঙের মাধ্যমে তাঁর আঁকার ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতেন।
চিত্রশিল্পে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘পটুয়া কামরুল’ উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি “প্রেসিডেন্ট’স স্বর্ণপদক” (১৯৬৫), “স্বাধীনতা পদক” (১৯৭৯), “বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা” (১৯৮৪), “বাংলা একাডেমী পদক” (১৯৮৫)- সহ ছোটবড় নানা উপাধি আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
তাঁর “চিত্র’৭৪” শীর্ষক সিরিজটি তৎকালীন রাজনৈতিক জাঁতাকলে আটকে যাওয়া সাধারণ মানুষদের আত্মত্যাগের প্রবণতার ভয়াবহ জীবন্ত দৃশ্য প্রদর্শন করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি বইমেলায় পাঠক সমাবেশে বসে তিনি রাজাকারের একটি কার্টুন চিত্র এঁকে পোস্টার রূপে দেওয়ালে দেওয়ালে সেঁটে দেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী সারা ফেলে।
‘জাতীয় কবি উৎসবে’ তিনি তাঁর শেষ চিত্র ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ আঁকেন। সেখানে।স্বরচিত কবিতা আবৃতির সময় আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ভোগার পর তিনি ১৯৮৮ সালের দোসরা ফেব্রুআরি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সসম্মানে সমাধিস্থ করা হয়।
কামরুল হাসানের অসামান্য অবদানের মাধ্যমেই বাংলাদেশের চিত্রশিল্প নিজেকে বিশ্বদরবারে একটি গৌরবমণ্ডিত আসনে স্থান দিতে পেরেছে। শুভ হোক তাঁর জন্মদিন।