ফিদা আল মুগনি
আজ উনিশ তারিখ তাই না?
হলুদ পাঞ্জাবিটা কই?
কিংবা ওই মোটা ফ্রেমের চশমাটা,শুভ্র পড়ত,মিসির আলি আর রহস্য নিয়ে ভাববেন না,নীল হাতিও হেঁটে হেঁটে
ফিরে আসবে না,রূপা কখনো অপেক্ষা করবে না কারো জন্য।
২০১২ সালের এমনই এক দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে এই জাদুকর চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে।
তিনি সাহিত্যকার ছিলেন,ছিলেন নাট্যকার এবং একইসাথে চলচ্চিত্রকার।বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান
নতুন শৈলীর জনক।তিনশতাধিক বই লিখেছেন।আর প্রতিটি লেখাই ছিল একেকটা আলাদা পৃথিবী,সেই বই হাতে
নিলেই সেই পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে যেত সবাই।হুমায়ুন আহমেদ তাঁর লেখলেখি শুরু করেছিলেন "নন্দিত
নরকের(১৯৭২)" সাথে আর শেষ করেন "লীলাবতীর মৃত্যু"(২০১৪) দিয়ে,যদিও শেষ বইটি তার প্রয়াতের পরেই
প্রকাশিত হয়।নি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্য ভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ জাদু
বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। দখিন হাওয়া অথবা নুহাশপল্লীতে তিনি জীবনের অনেকাংশই কাটিয়ে দিয়েছেন
শুধু লিখে।একা থাকতে ভয় পেতেন তিনি,তাই যেখানেই গিয়েছেন,অনেককে সঙ্গে নিয়ে।যাদের সাথে পরিচয় হয়েছে
তাদের সবাইকেই আপন করে নিয়েছেন একবারে।টিভিতে প্ৰথম নাটক ছিল প্রথম প্রহর, তারপর এইসব
দিনরাত্রি,অযময়ের মত বহু নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি আমাদের।১৯৯২ সালে শঙ্খনীল কারাগার নামে
চলচ্চিত্র তৈরি করেন আর এটার জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে
দেখেছেন খুব কাছ থেকে।পাকিস্তানিদের হাতে ধরাও পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।তাঁর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে
লেখাগুলোতেও দেখা যায় এ ছাপ।হুমায়ুন আহমেদ শিশু কিশোরদের নিয়েও লিখেছেন,বোতল ভুত আর নীল হাতি
এদের মধ্যে অন্যতম।
তিন ভাই তিন বোনের মাঝে তিনি ছিলেন বড় ভাই।বাবা ফয়জুর রহমান ছিলেন পুলিশের চাকুরে এবং একই সঙ্গে
মুক্তিযোদ্ধা।জীবনের অনেকাংশই কেটেছে প্ৰথম ভালোবাসা গুলকেতিন আহমেদের সাথে।পরবর্তীতে তাঁর
বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শাওনের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় আর এর জের ধরেই গুলকেতিনের সাথে বিচ্ছেদ হয়।
হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন অনন্য ধরনের অসাধারন লেখক।তাঁর লেখাগুলোও এত তাড়াতাড়ি সবাইকে আপন করে
নিতে পারত।তিনি ছিলেন জাদুকর।কোলন ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে যেদিন তিনি না ফেরার দেশে চলে যান,সেদিন
রাস্তায় হাজার হিমু নেমেছিল,এসেছিল সবাই শ্রদ্ধা জানাতে।আজও হিমুরা আর রূপারা ভালোবাসেন
জাদুকরকে।সেই হুমায়ুন আহমেদ কে।