মোশারফ হোসাইন –
সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে শিশু খোকা তার বাবাকে বলতেছিল”বাবা আমি যদি এই সমুদ্রে ডুবে যাই?” বাবা তখন একটা মুচকি হাসি দিয়ে ছেলের হাত শক্ত করে ধরে বলেছিলো “ধুর বোকা ছেলে, তুমি ডুববে না আমি আছি তো ! তুমি স্বাধীন ভাবে সমুদ্র দেখ আনন্দ উপভোগ করো ” এরপর কেঁটে যায় পঁচিশটি বছর এ দীর্ঘ সময় টাতে বাবা তার ছেলেকে ঠিকই আগলে রেখেছিলো কঠিন কঠিন সব ঢেউয়ের হাত থেকে,এক ফোঁটা আঘাতও ছেলেটির গায়ে লাগতে দেয়নি খোকার বাবা ! সময়ের পরিক্রমায় বাবা এক সময় বুড়ো হয়ে যায় । আর ছেলেটি হয়ে ওঠে প্রাপ্তবয়স্ক এক টগবগে যুবক অথচ সেই যুবক হয়ে ওঠা ছেলেটিই একটা সময় তার বৃদ্ধ বাবাকে গভীর এক সমুদ্রে মাঝে এনে ছেড়ে দেয় ।
এটা একটু অন্যরকম সমুদ্র এখানে রয়েছে গভীর এক শূন্যতা যেখানে থাকে না কোন প্রিয় মানুষ জীবনের শেষ সময়টাকে পার করতে একাকিত্ম আর অবহেলাকে সঙ্গী করে । আমরা সে জায়গাটাকে বলি বৃদ্ধাশ্রম ! ছেলে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যাওয়ার সময় বলে , “বাবা আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত ! তোমাকে একদমই সময় দিতে পারছিনা তুমি মন খারাপ করো না ! এখানে তুমি বরং ভালোই থাকবে । ” বাবাটা এবারো একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল “ধুর বোকা ! তুই তোর পথে এগিয়ে যা আমি থাকবো ভালোই থাকবো! তুই বড় হয়েছিস স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে বাঁচ ।
ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে লাখো লাখো বাবা তাদের জীবন বাজি রেখে, দিয়েছে আমাদের স্বাধীনতা এনে সুস্থ্যভাবে নিশ্বাস নিতে ,আর বলেছেন মরলে আমরাই মরি তবুও দেশের খোকারা বাচুক । এই দুঃখী দেশটি আমাদের বড় ভালোবাসার দেশ, বড় মমতার দেশ। যাঁরা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের এনে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞাতা সব সময় থাকবো তাদের আমরা কখনো ভুরবো না । আর যেসব স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধাপরাধী এই স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছে তাদের জন্যে রয়েছে অত্মহীন ঘৃণা। আজ থেকে একশ বছর কিংবা হাজার বছর পরেও যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে, এই দেশের মানুষ স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করবো না । আমরা নতুন প্রজন্ম মাতৃভূমিকে ঘুরে ঘুরে অভিমানী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের হাত স্পর্শ করে বলবো, আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দেয়ার জন্যে ভালোবাসা এবং ভালোবাসা। মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কোমল গলায় বলবো, আমরা তোমাদের কথা দিচ্ছি, তোমরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলে সেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো আমরা । গড়বো সুন্দর আগামী ।
মুক্তিযোদ্ধা বাবা এবং জন্মদাতা বাবা সবাই আগামী প্রজন্ম স্বাধীন ভাবে বাচুক এজন্যই লড়ে তাই তাদের অবহেলা না করে আমরাও তাদের জন্য কিছু করি ।