জুবায়ের ইবনে কামাল
তার বাবা শখের বসে হাত দেখতেন। হাত দেখে তারকারাজি হিসাব করে আয়ু বলতেন। একবার তার মেঝো ছেলের হাত দেখে বললেন, সে বাঁচবে আশি বছর। সে তো নিখাদ বাচ্চা ছেলে। একশো ছাড়া বাকী সব সংখ্যায় তার কাছে নিতান্তই কম। সে ভাবলো আশি বছর অনেক কম। হয়তো পরের শুক্রবার আসার আগেই শেষ হয়ে যাবে। সে দুপুরের পর থেকে কাঁদতে লাগলো। মাঝরাতে তার বড় ভাই বাবাকে ডেকে তুললেন। বললেন, ‘বাবা! আপনি নিয়ে ওকে বলুন, ও একশো বছর বাঁচবে!’ বাবা তার বড়ছেলের কথামত কাজ করলো। মেঝো ছেলের কান্নাও থেমে গেলো। চাঁদের আলোয় ভরা সেই মাঝরাতে বাবার সাথে হাসতে থাকা দুই ভাই ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ আর মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

জীবনের যত রকমের বৈচিত্র্যতা থাকতে পারে সবই ছিলো এই ব্যক্তিটির জীবনে। জীবন নামের উপন্যাসটি দুটি মেরুতে গিয়ে পৌছেছে দুই বিয়ের কারণে। দুই পক্ষেই রয়েছে একাধিক সন্তান। পেশাগত জীবনে প্রথমে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। একসময় শিক্ষকতা ছেড়ে আটঘাট বেধে নেমে পড়েন লেখালেখির জগতে। নিজেকে প্রায় গুটিয়ে নেন বাইরের পৃথিবী থেকে। দু’শো বইয়ের পাশাপাশি তৈরী করেছেন নাটক ও সিনেমা। তার হাত ধরে উঠে এসেছে বর্তমানের জনপ্রিয় অনেক অভিনেতা ও গায়ক। এত কিছুর পরেও সবার কাছেই সে রহস্যময়।
সে ম্যাজিক দেখাতে পারতেন। বাংলাদেশের বড় মাপের যাদুকর জুয়েল আইচকে তিনি যাদু দেখিয়ে বিমুগ্ধ করতেন। তিনি চলে গেলেও হাজার যাদু আটকে আছে তার লেখা শত শত বইয়ের রঙ্গিন মলাটে।

তার সম্পর্কে ভুরি ভুরি লেখার কোন দরকার নেই। নতুন কিছু লেখাও প্রায় অসম্ভব। কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি করেছেন মিসির আলি, হিমু, বাকের ভাইয়ের মত অসাধারণ সব চরিত্র। যা ছাড়য়ে গেছে আনন্দ-বেদনার বাস্তবতাকে।
ধানমন্ডির ছোট্ট বাসার পরে তার শেষ জীবন কেটেছে নিউয়র্কের ঝকঝকে কোন নার্সিংহোমে। তিনি জোৎস্নাকে খুব পছন্দ করতেন। চাঁদের আলো তার মাঝে ঘোর সৃষ্টি করতো। চাঁদের আলো আয়োজন করে দেখার জন্য শহুরের বাইরে বানিয়েছিলেন নিজের এলাকা ‘নুহাশ পল্লি’। নিউইয়র্কের এক সকালে তিনি যখন পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে তখন বাংলাদেশের রাতটা ছিলো জোৎস্না ভরা।
আজ এই ম্যাজিশিয়ানের জন্মদিন। হাজার হাজার হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে মোড়ানো হিমুরা রাস্তায় খালি পায়ে হেটে তাকে স্মরণ করবে। তিনি সবার হৃদয়ে হয়ে আছেন অমর। এক্ষেত্রে তার সেই বিখ্যাত কথাটিই বাস্তবায়ন হলো। হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, “একদিন হয়তো অমরত্ব আসবে, কিন্তু সেদিন আমি থাকবোনা।”