Thursday, July 31, 2025
26.3 C
Dhaka

ইতিহাসের পাতায় ২৩ শে জুন

হাসান ইনাম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম ‘পলাশী’। পলাশী নামটি এসেছে লাল রঙের ফুল পলাশ থেকে। ‘পলাশী’ শব্দটা শুনলেই অবচেতন মনে চোখের সামনে ভেসে ওঠে একই সাথে বেশ কয়েকটা নাম – নবাব সিরাজোদ্দৌলা, রবার্ট ক্লাইভ, মীর জাফর। ১৭৫৭ সালের আজকের এইদিনে পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের মুখোমুখি হন বাংলার শেষ নবাব সিরাজোদ্দৌলা। ইংরেজ বাহিনীর ছিলো – ইউরোপীয় সৈন্য ২,১০০ জন ভারতীয় সিপাহি ১০০ বন্দুকবাজ, ৯টি কামান (আটটি ৬ পাউন্ডার ও একটি হাওইটজার) অপরদিকে নবাবের পক্ষে ছিলো প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ সৈন্য আর ৫৩টি কামান।

যুদ্ধের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই মীর মদন ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তাঁর প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। মীর মদন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু মীর জাফর, ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ যেখানে সৈন্য সমাবেশ করেছিলেন সেখানেই নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁদের সামান্য সহায়তা পেলেও হয়ত মীর মদন ইংরেজদের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করতে পারতেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সিরাজউদ্দৌলার গোলাবারুদ ভিজে যায়। তবুও সাহসী মীর মদন এবং অপর সেনাপতি মোহন লাল ইংরেজদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গোলার আঘাতে মীর মদন মারাত্মকভাবে আহত হন ও মারা যান। নবে সিং হাজারী ও বাহাদুর খান প্রমুখ গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধানও একইসাথে মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধের এই পরিস্থিতে নবাব তার দুই সেনাপতি মীর জাফর ও রায় দূর্লভকে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা উভয়ই অযুহাত দেখিয়ে নবাবের নির্দেশ অমান্য করেন। তাদের অযুহাত ছিলো গোলান্দাজ বাহিনীর সাহায্য ছাড়া সামনে অগ্রসর হওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

যুদ্ধের এমন পরিস্থিতে সেনাপতি মীর জাফর এবং তার সহযোগীরা নবাবকে যুদ্ধ বিরতি করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহন লাল নবাবকে পরামর্শ দেন যুদ্ধবিরতি ঘটলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সিরাজ মীর জাফর এবং তার সহযোগীদের পরামর্শে পশ্চাৎপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিকেল পাঁচটায় সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী নির্দেশনার অভাবে এবং ইংরেজ বাহিনীর গোলন্দাজি অগ্রসরতার মুখে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে অর্থাৎ পরাজয় স্বীকার করে। নবাবের ছাউনি ইংরেজদের অধিকারে আসে। ইংরেজদের পক্ষে ৭ জন ইউরোপীয় এবং ১৬ জন দেশীয় সৈন্য নিহত হয়। তখন কোনো উপায় না দেখে সিরাজউদ্দৌলা রাজধানী রক্ষা করার জন্য ২,০০০ সৈন্য নিয়ে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু রাজধানী রক্ষা করার জন্যেও কেউ তাঁকে সাহায্য করেনি। সিরাজউদ্দৌলা তাঁর সহধর্মিণী লুৎফুন্নেসা ও ভৃত্য গোলাম হোসেনকে নিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়ে স্থলপথে ভগবানগোলায় পৌঁছে যান এবং সেখান থেকে নৌকাযোগে পদ্মা ও মহানন্দার মধ্য দিয়ে উত্তর দিক অভিমুখে যাত্রা করেন। তাঁর আশা ছিল পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারলে ফরাসি সেনাপতি মসিয়ে নাস-এর সহায়তায় পাটনা পর্যন্ত গিয়ে রাজা রামনারায়ণের কাছ থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে ফরাসি বাহিনীর সহায়তায় বাংলাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তাঁর সে আশা পূর্ণ হয়নি। সিরাজ পথিমধ্যে বন্দি হন ও মিরনের হাতে বন্দি অবস্থায় তাঁর মৃত্যু ঘটে।

নবাবের মৃত্যুর পর ইংরেজরা মীর জাফর আলী খানকে সিংহসনে বসায়। কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকের সিংহাসন সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ইংরেজদের সাথে চুক্তিনামা রক্ষা করতে না পারায় তাকেও সিংসাহনচ্যুত হতে হয়।
তথ্যসূত্র – *উইকিপিডিয়া *রজতকান্ত রায় (১৯৯৪)। পলাশীর ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স।

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর অর্ধেকই জুলাই মাসে

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের...

তিন বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস, সারাদেশেই বৃষ্টি

সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।...

বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

সিলেটের জকিগঞ্জে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক...

সিরাজগঞ্জে প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার শিলংদহ গ্রামে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে...

বিভাজন নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার...

সাপে কাটা সাপুড়ে নিহত, সেই সাপ কাঁচা খেয়ে চাঞ্চল্য

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে সাপ ধরতে গিয়ে বিষধর সাপের ছোবলে প্রাণ...

পাকিস্তানে আরও তিনজনের শরীরে পোলিও শনাক্ত, বছরজুড়ে আক্রান্ত ১৭

পাকিস্তানে নতুন করে আরও তিন শিশুর শরীরে পোলিও ভাইরাস...

জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে তথ্যচিত্র দিল সুপ্রিম কোর্ট

গত বছরের ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর সময় রাজধানীর...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img