Saturday, July 5, 2025
31 C
Dhaka

ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’র ৫২ বছর পূর্ন আজ

শোভন

১৯৬৫ সালের আজকের এই দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’।ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিনেমা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । তার দেশভাগ নিয়ে ট্রিলজির শেষ সিনেমা হচ্ছে এটি।এর আগের দুটি হচ্ছে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) ও ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১)। তার কখনোই ট্রিলজি বানানোর পূর্বপরিকল্পনা ছিলো নাহ। কিন্তু পরপর একই বিষয় কেন্দ্র করে টানা তিনটি সিনেমা নির্মাণ করায় হয়ে গেলো ট্রিলজি। তার সিনেমায় রাজনীতি, দেশভাগ আর দারিদ্রের কষাঘাত সবসময়ই প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে এই দেশভাগ ব্যাপারটি। তিনি এই বাংলার বুক চিরে দু’ভাগ করাকে কখনোই মেনে নিতে পারেননি।

ঋত্বিক ঘটকের জন্ম পুরান ঢাকায় ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। তার বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি নাটক ও কবিতা লিখতেন। বড় ভাই মণীষ ঘটকও বিখ্যাত লেখক। ফলে ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠেন তিনি। রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলকাতা চলে যান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু পূর্ব বঙ্গকে এবং বিশেষ করে পুরান ঢাকার জিন্দাবাহারে হৃষিকেষ লেনে তাদের বাসস্থানের কথা তিনি ভুলতে পারেননি কখনো।

দেশভাগের ফলে মানুষদের নামের আগে ‘উদ্বাস্তু’ ট্যাগটি সবসময়ই তার মনে কষ্ট দিতো।তার সেই অভিমান আর ক্ষোভের প্রতিফলন হলো এই দেশভাগ ট্রিলজি। সুবর্ণরেখাতেও দেশভাগকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা,দারিদ্রতা, জাতিবিভক্তি আর দারিদ্রতার কষাঘাত। এই সিনেমার গল্পটাই একটা টুইস্ট। গল্পটা না জেনে দেখলেই যেনো বেশী ভালোলাগে। এই সিনেমার শেষ দৃশ্যটা খুবই করূন ও নিও-নয়ার ধাচের। ইউরোপের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পাঠানোর আগে একজন ইউরোপিয়ান ফেস্টিভ্যালের কেউ একজন তাকে অনুরোধ করেছিলেন সিনেমাটির শেষ দৃশ্যটা বাদ দিয়ে দিতে কারণ ইউরোপের পরিবেশে শেষ দৃশ্যটা মানুষরা কখনোই মেনে নিতে পারবে নাহ। আর তাছাড়া ঐটুকু বাদেও পুরো সিনেমা যথেষ্ট স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিলো। কিন্তু তিনি তা অগ্রাহ্য করেন। তিনি বলেন- “এই দেশের সংস্কৃতির ও পরিস্থিতির বিবেচনা অনুযায়ী শেষ দৃশ্য ঠিকই আছে।” তিনি শেষ পর্যন্ত ঐ দৃশ্যটুকু রেখেই দিয়েছিলেন এবং ঐটুকু সিনেমাটির অন্যতম শক্তিশালী দৃশ্য।

অভিনয়ে মাধবী মূখার্জী, অভি ভট্টাচার্য্য, বিজন ভট্টাচার্য্য,জহর রায়,গীতা দে সহ একটি বিশেষ দৃশ্যে ঋত্নিক ঘটক নিজেও ছিলেন। দেশভাগ পরবর্তী সিনেমায় উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রে যে কয়েকটি সিনেমা ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলো তাদের দুটি হলো -অপু ট্রিলজি ও দেশভাগ ট্রিলজি। এ দুটি ট্রিলজি বিশ্বদরবারে বাঙ্গলা সংস্কৃতি, তৎকালীন পরিবেশ ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থার প্রকাশ ঘটায়।

তাই, এই ‘সুবর্ণরেখা’ সিনেমাটিও এই উপমহাদেশের বিশেষ করে বাঙ্গলা সংস্কৃতির সাথে আজীবন মিশে থাকবে আর থাকবেন ঋত্নিক ঘটক।

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

আকারে বাড়ছে প্রমোদতরি, দাম কত পড়ছে?

বড় হচ্ছে প্রমোদতরির আকার, কত পড়ছে দাম? আন্তর্জাতিক বাজারে প্রমোদতরি...

গাজায় ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারে’ ৩১ ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু

গাজায় নিজেদের গুলিতে ৩১ ইসরায়েলি সেনা নিহত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর...

কুমিল্লায় মা-সন্তান হত্যাকাণ্ডে আরও ৬ জন গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় আরও ৬ জন...

নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার প্রয়োজন: নাহিদ ইসলাম

বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়: বগুড়ায় এনসিপি আহ্বায়ক...

শেরপুরে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্য হাতির মৃত্যু, মরদেহ উদ্ধার করেছে...

শুটিং সেট থেকে হাসপাতালে স্বস্তিকা দত্ত, কী হয়েছিল অভিনেত্রীর?

শুটিং সেটে গুরুতর আঘাত, হাসপাতালে অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত টালিউড অভিনেত্রী...

জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারায় আমার আফসোস রয়ে গেছে: আসিফ মাহমুদ

জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারায় আফসোস প্রকাশ আসিফ মাহমুদের জুলাই...

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ময়নুল...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img