–জুবায়ের ইবনে কামাল
আমার মা নাটক সিনেমা দেখেন না। কাল আমি ‘১৭ই ডিসেম্বর’ নাটকটি দেখার সময় তিনি সামনে বসে নাটক দেখলেন। আর তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘পরিচালক কী সত্যিকারের রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নাটকটি করিয়েছেন?’
নাটকের অভিনয় ছিলো অমায়িক। অভিনয়ের বিষয় পরে আসছি। বর্তমানে যুদ্ধের কোন কাজ সেটা ডকুমেন্টারি হোক অথবা হোক নাটক, সবগুলোতেই একই কাহিনীর ছড়াছড়ি। এরজন্য বলতে খারাপ লাগলেও যুদ্ধভিত্তিক নাটক-টেলিফিল্ম অনেকেই এড়িয়ে যান। সেক্ষেত্রে রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধাকে দুই মেরুতে রেখে একই ফ্রেমে এক করতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক।
আর নাটকের সৌন্দর্য্যটা এখানেই। নাটকের গল্পটা দর্শকরা জানেন। যারা টিভিতে দেখতে পারেননি তাদের জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে নাটকটি আসছে ইউটিউবে। নাটকটিই গল্প বলবে। এখানে বলার প্রয়োজন নেই। তবে এটুকু বলা যেতে পারে, পরিচালক ঘন্টাখানেকের জন্য আপনাকে হিপনোটাইজ করে ফেলবেন।
এবার ফিরে আসি অভিনয়তে। প্রধান চরিত্রে আছেন রাহেলা নামের এক বৃদ্ধা মহিলা। যাকে গ্রামের সবাই রাহেলা নানী বলে ডাকেন। নাটকের প্রথম দিকের দৃশ্যেই দেখা যায় রাহেলা নামের বৃদ্ধা মহিলা এক ছেলেকে ১৭ই ডিসেম্বর উপলক্ষে এক বিশাল ফর্দা ধরিয়ে দেন। মজার ব্যাপার হলো, ওই ফর্দার সবকিছুর পরিমানই ১৭। ১৭ কেজি মিষ্টি, ১৭ কেজি এটা ১৭ কেজি সেটা এরকম করে বলে যেতেই থাকেন। আর এসব কিছুর মুল উদ্দেশ্য ১৭ই ডিসেম্বর।
অদূরে বসেই ঢাকা থেকে আগত এক উঠতি সাংবাদিক বিষয়টা লক্ষ্য করেন। চা-দোকানীর কাছে বিষয়টা জানতে চাইলে তিনি জানান, সবাই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করলেও রাহেলা নানী ১৭ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করে থাকেন। আর এজন্য তিনি ১৭ কেজি করে মিষ্টি কিনে গ্রামবাসীকে খাওয়ান। কিন্তু কেন এরকম চিন্তা তার উত্তর না পেয়ে স্বয়ং রাহেলা নানীর কাছে চলে যান সাংবাদিক। অনেক জোরাজোরি করার পর এক সন্ধ্যা রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে ১৭ই ডিসেম্বরের কাহিনীটা বলতে রাজী হন রাহেলা। আর গল্পের শুরু এখানেই।
আরো পড়ুনঃ একটি অদেখা যুদ্ধের গল্প
রাহেলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনিরা মিঠু। তার অভিজ্ঞসম্পন্য অভিনয় দর্শককে বিমোহিত করবে। সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছে ইভান সাঈর। সঙ্গে রাহেলার যোদ্ধা ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহান। তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দর্শকরা স্ক্রিনেই দেখতে পাবেন।
আরো আছেন শোয়েব মুনির। রাজাকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দর্শক তার অভিনয়ে খুঁত ধরতে পারবেন বলে মনে হয়না। একজন রাজাকার হিসেবে জয় বাংলা সহ্য না করার বাস্তব সব অঙ্গভঙ্গিমা ফুটে উঠেছে তার অভিনয়ে। এ যেন সাক্ষাত স্বয়ং রাজাকার!
মাসুদুল হাসানের গল্পে “১৭ই ডিসেম্বর” নামের নাটকটি পরিচালনা করেছেন মাবরুর রশীদ বান্নাহ। নাটকটির বেশীরভাগ দৃশ্যই চিত্রায়িত করা হয়েছে ঢাকার অদূরেই নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানে।
নাটকে খটকা লাগার মত কোন পথ রাখেননি পরিচালক মাবরুর রশীদ বান্নাহ। গতানুগতিকতার বাইরে কাজ করা এই নির্মাতা দেখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্যরকম এক গল্প। বাস্তব পরিবেশকে একদম হুবুহু তুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন নির্মাতা। বাকীসব দর্শকই বিচার করবেন।
দর্শক রাহেলা নানী থেকে শুনবেন ১৭ই ডিসেম্বরের ইতিহাস।