Monday, April 28, 2025
28 C
Dhaka

শাহরুখ খানঃ শূন্য থেকে বলিউড ডন!

ইভান পাল
বিনোদন ডেস্ক, চ্যানেল আগামী

আজ এক বলিউড ডনের গল্প জুড়বো প্রিয় পাঠক আপনাদের সাথে। তবে তার আগে, এক বাক্যে বলিউড টা কি তা একটু বলে নেই। আপনারা হয়তো আমার মুখের উপরেই বলবেন, বলিউড আমরা জানি। মুম্বায়ের মুভি বানানোর বিখ্যাত আর বিশাল কারখানাই হচ্ছে এই বলিউড।

হুম! একদম তাই, তবে এর এই বলিউড নাম টা কিভাবে আসলো তা নিয়ে ছোট্ট কথার ছোট্ট পরিচয় দিচ্ছি।

বলিউড হচ্ছে — ভারতেরই সব থেকে উন্নত শহর, মুম্বাইয়ে অবস্থিত হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের পীঠস্থান। বলিউড নামটি হলিউডের নামের সাথে মিল রেখে দেওয়া। আসলে এক সময় মুম্বাই এর নাম ছিলো বম্বে। আর তার জন্যই সেই বম্বে থেকে বলিউড।

যাক গল্প টা বলিউডের না, বলিউডের এক ডনের। আচ্ছা দেখুন তো এই উক্তি গুলো চিনতে পারেন কিনা-

সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোই জীবনের ই অংশ, দুটোই অস্থায়ী। সফলতা একেবারেই ভালো শিক্ষক না। কিন্তু ব্যর্থতা আমাদের নম্র হতে শেখায়

(হিন্দি ভাষায় বলা ছিলো)

কি প্রিয় পাঠক, চিনতে পারলেন কি, কে এই উক্তি প্রদানকারী ব্যক্তি? আচ্ছা দাড়ানঁ এবার ক’টা গানের লাইন বলি। এ গান গুলো যে মুভির, সে মুভিতেই তিনি অভিনয় করেছিলেন।

তুযে দেখা তো ইয়ে জানা সানাম, পেয়ার হোতা হি দিবানা সানাম

কিংবা যদি বলি,

তুম পাস আইয়ে, ইউ মুসকুরায়ে।
তুম নে না যানে ক্যায়া কুচ কুচ হোতা হ্যায়

আমি জানি পাঠক মহল এবার মনে মনে বলছেন, ব্যাস ব্যাস আর বলতে হবে না। বুঝতে পেরেছি কার কথা বলছেন।

ঠিক ধরেছেন এতক্ষণ যাবৎ এত্ত ইনিয়ে বিনিয়ে আমি সেই ডনের কথাই বলবার চেষ্টা করছি। আরে বাবা কেউ কি ডনের নাম ধরে? যদি কিছু করে বসে আবার!

ঠিক তাই! তবে এই ডন তো কিছু করবেই, কেনো করবে না। কারণ, ডন বলে কথা! তবে এই ডন আবার- গুলি বন্দুক দিয়ে, ডিশকাও করে গুলি কিংবা বুম বলে বোমা ফেলবে না। এ ডন যা করার অলরেডি করে ফেলেছেন কিংবা করছেন আজো।

সোজা বাংলা ভাষায়- কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার গুলি আর অভিনয় নামক শৈল্পিকতার বোমা কিংবা জাদু দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

কথা বলছি, এই পৃথিবীর বহু রমনীর স্বাপ্নিক পুরুষ বহু তরুণ শিক্ষানবিস অভিনেতার গুরু ও বলা যেতে পারে কিংবা হাজার হাজার ভক্তের ভালোবাসার আরেক টি নাম বলিউড ডন কিংবা বলিউড বাদশাহ “শাহরুখ খান” এর।

তিনি জন্মেছিলেন ১৯৬৫ সালের ২রা নভেম্বর দিল্লির একটি মুসলিম পরিবারে। তারঁ পিতা তাজ মোহাম্মদ খান ছিলেন পাঠান বংশদ্ভুত এবং একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী। শাহরুখ খানের মতে, তার দাদা ছিলেন আফগানিস্তানের নাগরিক। তাঁর মায়ের নাম লতিফ ফাতিমা। যিনি ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস এর দত্তক মেয়ে।

Shahrukh Khan Parents
শাহরুখ খানের বাবা মা এবং বোন

শাহরুখের পিতা ভারত বিভাগ হওয়ার আগে কিসা খাওয়ানি বাজার, পেশাওয়ার থেকে নয়া দিল্লি চলে আসেন।

শাহরুখ তারঁ বাল্যকাল অতিবাহিত করেন দিল্লীর রাজেন্দ্র নগর এলাকায়। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলেন, যে পরিবারে সন্তান যদি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়, তবে তা ছিলো অনেক বড় ব্যপার।

তারঁ বাবা দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার একটি ক্যান্টিন চালাতেন। তারঁ বাবা পড়াশোনা হয়তো খুব একটা করেন নি, কিন্তু তারঁ মনোভাব ছিলো অনেক উচুঁ দরের। তাইতো তিনি শাহরুখ কে উৎসাহ যোগাতেন, সাহস দিয়ে বলতেন-

সব সময় আমাদের স্বপ্ন নিয়ে বাচাঁ উচিৎ। তোমাদের বয়সে আমরা অনেক কিছু করেছি। তোমরাও স্বপ্ন দেখো এবং নিজেকে সামনের দিকে নিয়ে যাও।

যাক এবার তারঁ পড়াশোনা নিয়ে একটু কথা বলি। তিনি কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত। অনেকেই ভাবেন যে, যারা টিভি তে কাজ করেন কিংবা শিল্পী রা বোধ হয় পড়াশোনা খুব একটা করেন না। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। বরং তারাঁ আমাদের থেকে ও আরো বেশি পড়াশোনা করেন বা করেছেন। আর শিল্পী জীবনের এই শৈল্পিকতাও কিন্তু একটা কলা। শিল্পকলা। আর এটা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যার সাথে জড়িয়ে থাকে মানব মনের সব ইচ্ছে গুলো।

বলিউড বাদশা পড়াশোনা করেন দিল্লীর সেন্ট কলম্বিয়া স্কুলে। এখান থেকে তারঁ স্কুল জীবন শেষ করেন। সাথে ছিলেন খেলাধুলার দারুণ ভক্ত। খেলাধুলাও করতেন সফলতার সাথে। আবার তারঁ ঝোক ছিলো ড্রামার দিকে। ওইযে তিনি তারঁ পিতার সাথে দেখা করতে যেতেন। পিতার কর্মস্থল সেই দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে। সেখানে তিনি পরিচালক ও শিল্পীদের অভিনয় আর তাদের কাজ খুব ভালোভাবে নজরবন্দি করতেন।

পরবর্তীতে তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং দিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তে মাস কমোনিকেশনে মাস্টার্সে ভর্তি হোন। কিন্তু ফৌজি নামের তারঁ জীবনের ১ম সিরিয়ালে কাজ করতে গিয়ে কোর্স শেষ না করেই পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ফেলেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান।

শাহরুখকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি বড় হয়ে কি হতে চান?

তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তিনি বলিউডে অভিনয় করতে চান। এটা অবশ্য তারঁ মায়েরও স্বপ্ন ছিলো। যেহেতু তারঁ ছেলের অভিনয়ে শখ ছিলো তাই তারঁ মাও চাইতেন, যে তারঁ ছেলে বলিউডে অভিনয় করুক।

কিন্তু তারঁ শিক্ষক অনেক ভাবেই তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলের পক্ষে কোন ভাবেই এটা সম্ভব না। তখন সেই শিক্ষকের উত্তরে তারঁ মা বলেছিলেন,

আমার ছেলে যদি মনে করে, ও ওটা করবে তবে আমি বিশ্বাস করি সে ওটা করতে পারবে।

তারঁ মায়ের সেই বিশ্বাস কিন্তু মিথ্যে হয়নি। আজ কিন্তু তারঁ সেই ছেলে – বলিউডের কিং খান। তারঁ দু:খ ছিলো, তারঁ মা বাবা তারঁ সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না। আর তারঁ সেই শিক্ষক তারঁ এই সফলতা দেখে আফসোস করে বলেন, ইসস! আমি কেনো শাহরুখের মায়ের মতো শাহরুখের স্বপ্নকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমার তাকেঁ বিশ্বাস করা উচিত ছিলো”।

খুব অল্প বয়সে পিতা- মাতা দুজনকেই হারান। প্রথম ক’দিন শোকে মুহ্যমান থাকলেও ভেঙ্গে পড়েন নি। একটু একটু করে নিজেকে গড়ে তোলেন তিনি।

তো তিনি যখন জামিয়া ইস্লামিয়া তে মাস কমিউনিকেশনে পড়ছিলেন, তখন তারঁ এক প্রতিবেশী একটা টিভি সিরিয়াল বানাচ্ছিলেন। তো সেই প্রতিবেশীর ইচ্ছে ছিলো, তার ছেলে সেই সিরিয়ালে কাজ করবে। কিন্তু সে এ কাজে এত্ত আগ্রহী ছিলো না। তখন সে প্রতিবেশীর কথায় তার ছেলের পরিবর্তে শাহরুখ কে অভিনয় টি করতে বলা হয়। আর শাহরুখ তার এই প্রস্তাবে সন্মতি জানান। আর তখন থেকে ই তারঁ ভাগ্যের চাকা চলতে শুরু করে। তারঁ প্রথম সিরিয়াল ফৌজি (FAJI) যার কথা আমি আগেই বলেছি, যা ১৯৮৮সালে প্রকাশিত হয়। এরপর ই তিনি একে একে আরো অনেক সিরিয়ালেই কাজ করতে থাকেন।

এরপর ১৯৮৯ সালে সার্কাস সিরিয়ালে তিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন। আবার ঠিক একই বছর তিনি অরুন্ধতী রায়ের In Which Annie Gives it Those Ones টেলি-চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আর এভাবেই একটু একটু করে খুলতে থাকে শাহরুখের ভাগ্যের মুখ।

In Which Annie Gives it Those Ones এর একটি দৃশ্যে শাহরুখ খান

শোনা যায়, একদিন নাকি বলিউড বাদশাকে কল করেছিলেন, ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেত্রী আর প্রযোজক “হেমা মালিনী”।

তিনি নাকি বলিউড বাদশার প্রথম সিরিয়াল ফৌজি দেখেই তাকে ক্যাপচার করেন তারঁ ছবিতে অভিনয়ের জন্য।

এজন্য বলিউড বাদশাকে নাকি তিনি কলও দিয়েছিলেন, কিন্তু বলিউড বাদশা তখন বিশ্বাস করতে পারেননি এত বড় একজন সুপারস্টার বুঝি আমাকে কল দিবে। তাই তিনি কল কেটে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন কেউ বুঝি তার সাথে মজা করছে।

পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে লজ্জাও পেয়েছিলেন।

আচ্ছা, এবার একটু তারঁ প্রেম পর্বের গল্পে আসি। তিনি ভালোবাসতেন গৌরি চিব্বর নামের পাঞ্জাবেরই এক মেয়েকে। তবে তাদের পরিবার থাকতো দিল্লিতে। আর গৌরি ছিলেন হিন্দুদের ব্রাম্মণ পরিবারের মেয়ে। গৌরির পরিবার যখন দেখলেন যে, মেয়ের মতিগতি সুবিধার ঠেকছে না। তারা বুঝতে পারছিলেন, মেয়ে বুঝি শাহরুখ কেই বিয়ে করতে যাচ্ছে। শাহরুখ যেহেতু তখন বেকার ছিলেন তাই তারা এই সম্পর্ককে কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। ঠিক এই অবস্থায়, তারা কাউকে কিছু না বলে তাদের মেয়েকে মুম্বাই পাঠিয়ে দিলেন। শাহরুখ একথা শোনার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনিও মুম্বাই তে পাড়ি জমাবেন। তখন তো এটির নাম ছিলো বম্বে, আগেই বলেছি। তবে তা অভিনয়ের জন্য নয়। গৌরীকে খুঁজতে, তার ভালোবাসাকে খুঁজতে। তবে আমাদের জীবনে আমরা এই নীতিবাক্য খুব বেশী বলি, তা হচ্ছে- সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন”।

আসলেই ভালোর জন্য ই করেছিলেন। তবে তা আমার জন্য না, শাহরুখের জন্য।

শাহরুখ যখন মুম্বাইতে পৌছুলেন, তখন তারঁ কাছে যে অর্থ ছিলো তা তিনি ব্যয় করে ফেলেছিলেন তার ভালোবাসাকে খুজতে। আর খাবার দাবারের পেছনে। কারণ, ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় এই শহরটি একটু বেশীই ব্যয় বহুল।

মুম্বাই তে কখনো রাস্তার পাশে কিংবা কখনো দোকানের সামনে রাত কাটিয়েছিলেন।

এসবের মাঝেই একদিন এক সমুদ্র সৈকতে তিনি আবিষ্কার করলেন তার সেই ভালোবাসাকে। যার খোজেঁ তিনি এখানে। তখন গৌরি তাকে বলেন যে, তিনি যেনো গৌরির মামা মামির সাথে কথা বলেন, যাতে করে গৌরির মামা মামি তখন তার বাবা মাকে বোঝাবে।

শাহরুখ মুম্বাই থাকাকালীন অনেক কষ্ট করেছিলেন। মুম্বায়ের জীবনযাত্রা এতটাই কষ্টের যে তিনি তারঁ প্রিয় ক্যামেরাটি পর্যন্ত অভাবের তাড়নায় বিক্রি করে দেন। আর সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,

একদিন এই মুম্বাই শহরকেই তিনি কিনে নেবেন

আজ কিন্তু সত্যিই তাই ঘটেছে। কাগজে কলমে হয়তো কেউই তা বলবেন না। কিন্তু এটাই সত্য। জেরী সেন ফিল্ডের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী অভিনেতা কিন্তু বলিউডের এই কিং খান। যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬শ মিলিয়ন ডলার।

যাক এসবের মাঝে একদিন এক দোকানে বিবেক ভাসোয়ানি নামের প্রযোজকের সাথে তারঁ দেখা হয়। তখন সেই প্রযোজক শাহরুখকে জিপি সিপির মুভিতে অভিনয় করতে বলেন। জিপি সিপি হচ্ছেন- খুব দামি একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক। যিনি বিখ্যাত ভারতীয় মুভি শোলেতেও কাজ করেছিলেন। শাহরুখ সে প্রস্তাবে রাজি হন আর সেই প্রযোজক বিবেক ভাসোয়ানি তাকেঁ নিয়ে জিপি সিপ্পির কাছে। তখন জিপি সিপ্পি তাকে দেখে বলেছিলেন, এই ছেলে একদিন অনেক বড় স্টার হবে।

এরপর থেকেই শাহরুখের জীবনে ওঠা শুরু। তাকেঁ আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এরপরে তিনি হেমা মালীনির কাছে যান। হেমা মালিনী তারঁ অভিষেক ছবি, “দিল আশনা হ্যায়তে” শাহরুখ কে অভিনয়ের সুযোগ দেন।

তবে তারঁ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র দিওয়ানা। কেননা “দিল আশনা হ্যায়” ছবিটির আগে দিওয়ানা ছবিটি প্রথমে মুক্তি পায়। একই বছরে তিনি আরও কিছু ছবি তে কাজ শুরু করেন। চমৎকার ছবিটি তার মধ্যে বেশ উল্লেখ্য যোগ্য।

আর ১৯৯১ সালে সব বাধাঁ পেরিয়ে তিনি বিয়ে করেন তারঁ দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষ গৌরি চিব্বর কে। তারা দুজন দু’ধর্মের হলেও ধর্ম কোন ভাবেই তাদের সম্পর্কে দুরত্ব আনতে পারে নি। তাদেরঁ সে সম্পর্ক আজো অটুটই রয়েছে। আসলে, সেলিব্রেটিদের জীবনী ঘাটলে আমরা দেখতে পাই বেশিরভাগ সেলিব্রেটিরই খুব অল্পতেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। কিন্তু সেই দিক দিয়ে বলতে গেলে — বলিউড ডন বা বলিউড কিং যাই বলি না কেনো তিনি ই সেরা। আসলে, ভালোবাসার সম্পর্ক টা যখন আত্মার হয় তখন তা ভাঙ্গা জানি অসম্ভব।
আর এই দম্পতির রয়েছে, তিন সন্তান। আরিয়ান খান, সুহানা খান আর আব্রাম খান।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে- তিনি কাজকে খুব ভালোবাসতেন। সে কাজ ছোট হোক আর বড় হোক। যার জন্য বলিউডে খুব তাড়াতাড়ি জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন।

যেসব ছবির কাজ অন্যদের দ্বারা রিজেক্ট হয়ে গিয়েছিলো, সে কাজ গুলো শাহরুখ খুব দক্ষতার সাথে করতে পেরেছিলেন। এই সুযোগ গুলো কিং খান কাজে লাগাতে তো পেরেছিলেন ই সাথে নিজের অভিনয় নৈপুণ্যতায় জয় করেছিলেন সব্বার মন।

তারঁ সবর্কালের সেরা মুভি ছিলো, “দীল ওয়ালে দুল হানিয়া লে জায়েঙ্গে”। যেটিকে ভারতের সব থেকে শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র “শোলে” এর সাথে তুলনা করা হয়। এটি শাহরুখ খান অভিনীত এমন একটি ছবি যা, প্রায় বারো বছর ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রায় ১২ বিলিয়ন রুপির চেয়েও বেশি অর্থ আয় করেছে।

তারঁ প্রথম আয় টিকিট বিক্রি করে মাত্র ৫০টাকা। তারঁ কাছে আসলে কাজের ক্ষেত্রে কোন রকম বৈষম্যতা ছিলো না। বড় কাজ, ছোট কাজ এরকম কিছু ছিলো না বলেই তিনি আজ কিং খান।

তিনি বলেছিলেন, “আমি শুধু চাই, কাজ করতে। আরো ভালোভাবে”।

এবার একটু তারঁ অভিনীত ফিল্ম গুলো কথা বলি, তিনি প্রথমবার ডর আর বাজিগর মুভিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। বাজিগর ছবির জন্য তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি “আঞ্জাম” ছবিতে অভিনয় করেন যেটি ফ্লপ হয়। তবে যে চরিত্রে তিনি কাজ করেছিলেন, সেটিতে তারঁ অভিনয় সবার নজর কাড়ে। আর তিনি ১৯৯৫ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ ভিলেন পুরস্কার লাভ করেন। (উইকিপিডিয়া)

এছাড়াও কিং খান অভিনীত তারঁ আরো কিছু শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র হচ্ছে- পরদেশ, দিল তো পাগল হ্যায়, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, মোহাব্বতে, কাভি খুশি কাভি গাম, কাল হো না হো, বীর-জারা।
(উইকিপিডিয়া)

২০০৭ সালে শাহরুখের অন্যতম সেরা ছবি ছিল “চাক দে! ইন্ডিয়া”। ছবি টি তো ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হয় ই সাথে এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলিউড বাদশা সপ্তমবারের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। ব্যবসায়িক দিক থেকে তারঁ অভিনীত আরেকটি সফল ছবি- “ওম শান্তি ওম”।।

২০০৮ সালে শাহরুখের “রব নে বানা দি জোড়ি” ছবিটি তারঁ ই অভিনীত আরেকটি সফল ছবি।

তাঁর অভিনীত এখনো পর্যন্ত ৩টি ছবি- হে রাম , দেবদাস এবং পহেলি ভারত থেকে অস্কার এর জন্য পাঠানো হয়েছিল।

আর বলিউডের সেরা জুটি- “শাহরুখ-কাজল জুটি”, গোটা বলিউড জুড়েই স্বীকৃত।

প্রযোজক হিসেবেও তিনি কাজ করেছিলেন। তারঁ প্রথম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান- “ড্রিমজ আনলিমিটেড”।। যদিও বা এটি খুব একটা সফলতা পায়নি।

২০০৪ সালে তিনি এবং তারঁ স্ত্রী গৌরি আরেকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। যার নাম “রেড চিলিস এন্টারটেনমেন্ট”। এখান থেকে প্রযোজনা করেন- “ম্যায় হুঁ না (২০০৪) চলচ্চিত্রটি। যা বলিউড জুড়ে দারুন ব্যবসা করে।

রেড চিলিস এন্টারটেনমেন্ট থেকে নির্মিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি “ওম শান্তি ওম” যার কথা আগেই বলেছি। এটি ২০০৭ সালের সবচেয়ে সফল ছবি। আর এই ছবিটিতে ৩০ জনের বেশি নামী অভিনেতা একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছেন।

যাক এবার একটু শাহরুখের খেলাধুলার জগত নিয়ে বলি। আগেই বলেছি, শাহরুখ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলো খুব ভালোবাসতেন। তবে এতে আগ্রহ টা একটু কম ছিলো। যা ছিলো সব ড্রামাতে।

আমরা কম বেশি প্রায় সব্বাই ই এশিয়ার সেরা ক্রিকেট লীগের খেলা, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ভক্ত। যাকে সংক্ষেপে- আইপিএল বলা হয়।

বলিউড কিং শাহরুখ খান, তাঁর রেড চিলিস এন্টারটেনমেন্ট এর মাধ্যমে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ এর দল – “কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনে নেন। তিনি এর অন্যতম মালিক। তিনি এবং তাঁর বন্ধু ও অভিনেত্রী জুহি চাওলার স্বামী জয় মেহতা এই দলটিকে কিনে নেন।

২০০৮ সালে নিউজউইক তাঁকে বিশ্বের ৫০ ক্ষমতাশীল ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেয়। আর ওয়েলথ-এক্স সংস্থার বিচারে বিশ্বের সবথেকে ধনী হলিউড, বলিউড তারকার তালিকায় শাহরুখ খান দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন।
( উইকিপিডিয়া)

“স্কটল্যান্ডের় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়” সেরা অভিনেতা হিসেবে শাহরুখ খান কে বৈশ্বিক অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছে। আর “লিজিয়ন অব অনার অওয়ার্ড” পেয়েছেন ফ্রান্স সরকার থেকে। আর ভারত সরকার দিয়েছেন তাকেঁ সন্মান সূচক “পদ্মশ্রী অওয়ার্ড”।

ওহ হো তারঁ আরেক টি বিখ্যাত মুভি, চেন্নাই এক্সপ্রেস এর কথা যে বাই পড়ে যাচ্ছিলো । সে মুভির বিখ্যাত গান- “লুঙ্গি ডান্স, লুঙ্গি ডান্স” আজো সব্বার মুখে মুখে।

বলিউড বাদশা কিংবা বলিউড ডনকে নিয়ে বলা শুরু করলে সত্যিই শেষ করা যাবে না। তার এত্ত মুভি, এত্ত এ্যাওয়ার্ড, এত্ত সন্মাননা তা সত্যি বলার বাইরে। হয়তো এখানে না বলা, অনেক ছবি আড়ালে থেকে গেছে। ঐযে বললাম, বলে শেষ করা যাবে না। তাই তারঁ ছবির পরিক্রমা সংক্ষিপ্তই করলাম।

একবার, তাকে এক পরিচালক বলেছিলেন, “ এখন তো তোমার আর এই মেক আপ ম্যানের প্রয়োজন নেই। যেহেতু তুমি এখন একজন সুপারস্টার।”

তখন সে পরিচালকের এই কথাতে তিনি বলেছিলেন- “ তাহলে আমার আর এই সিনেমাটিরও প্রয়োজন নেই। কোন স্টারই নিজের একার পরিশ্রমে তৈরি হয় না। আমি বিশ্বাস করি, আমি আজ যা তার ৮০% কৃতিত্ব আমার সঙ্গীদের”।

এ থেকে বোঝা যায়, তিনি কতটা সন্মান করতেন তারঁ আশ পাশের মানুষ গুলো কে। আর তাইই বোধ হয়, তিনি এই পৃথিবীতে তারঁ অসংখ্য ভক্তের কাছে একজন শ্রেষ্ঠ সন্মানীয় ব্যক্তি।

এরকম একজন গুনী অভিনেতা, যাকে আমরা ভালোবেসে বলিউড ডন কিংবা বলিউড কিং ডাকি কিংবা SRK কে বলেও অনেকে ডাকি। তিনি সুস্থ থাকুন, বেচে থাকুন বাদশাহ হয়ে তার অসংখ্য ভক্তের হৃদ মন্দিরে।

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরপিএল: সম্ভাবনা ও গুরুত্ব

আরপিএল বর্তমান বিশ্বে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি...

কালীগঞ্জে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অভিভাবক সমাবেশ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ‘নরুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষার মানোন্নয়নের...

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন বর্ষিয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।...

বিয়ের কাজ সারলেন তালাত মাহমুদ রাফি

বিয়ে করেছেন সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। সোমবার (১৭ মার্চ)...

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সাথে কথা বলবে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার রুশ...

সিআইডি প্রধান হলেন গাজী জসীম

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন...

দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দেশের মাটিতে পা রাখলেন...

পিরোজপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পিতা-পুত্র আটক

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে জোর করে...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img