Monday, April 28, 2025
27 C
Dhaka

বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্টের সাত কাহন

ইভান পাল

বলিউড হচ্ছে মুম্বাইয়ে অবস্থিত ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্রের শ্রেষ্টত্বের শ্রেষ্ট একটা স্থান। ভারতের অধিকাংশ শ্রেষ্ট মুভিগুলো কিন্তু এখানেই তৈরি হয়।

যাকগে, তো এই বলিউডে যারা অভিনয় জগতে কাজ করেন, তারা এই বলিউড নামক ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে এসে তাদের শৈল্পিক কাজের দ্বারা যেমন সুনাম আর অর্থ আয় করেন ঠিক তেমনি আরেকটা জিনিস ও তাদের কপালে জুটে যায়। সেটা দর্শকদের ভালোবাসা তো বটেই! কিন্তু আমি দর্শক-ভালোবাসার কথা বলছি না। আমি বলছি নিক নেম এর কথা। যাকে শুদ্ধ বাংলায় বলে ডাক নাম।

এই যেমন, অমিতাভ বচ্চনের নিক নেমে হলো- শাহেন শাহ। তারপর, শাহরুখ খানের নিক নেম- বলিউড বাদশা কিংবা, বলিউড ডন। গোটা বলিউড জুড়েই অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভক্তদের কাছ থেকে ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা ও সন্মান সমেত এরকমই কিছু নিক নেম জুটে। তবে এটা কোনভাবেই খারাপ কিছু না। বরং এটা অভিনয় জগতের মানুষদের প্রতি ভক্তদের নিকট থেকে একরাশ ভালোবাসা।

তো, আজ যার কথা বলবো তাকেঁও ভক্তরা ভালোবেসে একটা না দুটো নিক নেম দিয়েছেন। একটা তো এই মিস্টার পারফেকশনিস্ট। আবার তারঁ আরেকটা নিক নেম হলো- মিস্টার চকোলেট বয়।

কে হতে পারে, প্রিয় পাঠক আচঁ করতে পেরেছেন নিশ্চয়?
আচ্ছা বেশ তারঁ ই অভিনীত কিছু ছবির সংলাপ বলি আপনাদের–

“কউন হিন্দু কউন মুসলমান ঠাপ্পা কিদার দেখা..ইয়ে ফারাক ভগবান নেহি, তুমলোগো নে বানায়া। অর এই গোলা কা সবছে ডেঞ্জার রাং নাম্বার, সবছে খতর নাক রাং নাম্বার — জিসসে লোক মরতা হ্যায়, আলাগ হোতা হ্যায়”

কিংবা যদি বলি —-

“ হোশিয়ার, তারকিদ অর ধোকাঁ তিন ও মিল যায়ে তো লোগ উছে যাদু সামাঝতাহে”

কি, প্রিয় পাঠক বুঝলেন তো কার কথা বলছি?
আচ্ছা বেশ, শেষ ডায়ালগ টাই বলি—
এই ডায়ালগ টা অবশ্য আমরা এই মুভি দেখার পর থেকে, যখনই কোন সমস্যাই পড়ি, তখনই
বুকের বা পাশে হাত খানা রেখে বলি–
“অল ইজ ওয়েল”….

এইবার প্রিয় পাঠক যে সত্যিই বুঝতে পেরেছেন- কার কথা বলছি, এটা আর কেউ না হোক অন্তত আমি নিশ্চিত। কারণ, প্রশ্নকর্তা যে আমিই ছিলাম।

হুম্ম! ঠিক ধরেছেন এত্ত ইনিয়ে বিনিয়ে আমি এতক্ষণ ধরে বলিউডের অন্যতম একজন সফল অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং টিভি উপস্থাপক- “আমির হোসাইন খান কিংবা আমির খান এর কথাই বলছিলাম।

প্রিয় পাঠক, আজ আমি বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত শ্রেষ্ট এই অভিনেতার জীবনের সাত কাহন জুড়বো আপনাদের সাথে।

আমির খান। পুরো নাম- আমির হোসাইন খান। বলিউড থেকে পুরো পৃথিবীই অবশ্য তাকেঁ আমির খান নামেই চিনতে অভ্যস্ত।

তিনি ১৯৬৫ সালের ১৪ ই মার্চ ভারতের মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকার হলি ফ্যামিলী হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিকভাবে বহু আগে থেকেই খানের পরিবার বলিউডে ফিল্ম বানানোর সাথে জড়িত ছিলো। তাঁর পিতার নাম- তাহির হুসেন। তিনি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক।

আর তাঁর চাচা নাসির হুসেন ও ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা। তাঁর পরিবার ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে কয়েক দশক ধরেই জড়িত।

আমির খান এর মায়ের নাম- জিনাত হোসেন।

তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমির খান ছিলেন সব্বার বড়। আর তারঁ বাকি দুই ভাই হলেন- ফয়সাল খান ও ফরহাত খান এবং এক মাত্র বোন “নিখাত খান”। আমির খানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আফগান বংশোদ্ভূত। আমির খান বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, দার্শনিক এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের বংশধর ছিলেন।

amir khan family
আমির খানের পরিবার

এবার তারঁ পড়াশুনার চ্যাপ্টারে ঢুকি একটু। তিন-তিন বার খান সাহেব স্কুল বদল করেছিলেন। জেবি পিটি স্কুল, সেন্ট এন্স স্কুল এবং সবশেষে বম্বে স্কটিশ স্কুলে ভর্তি হন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য তার পারিবারিক কিছু আর্থিক সমস্যা ছিলো। তখন তারঁ বাবার প্রযোজিত মুভিগুলো ঠিকভাবে চলছিলো না। আর যেহেতু তারঁ বাবা মুভি প্রযোজনার ব্যবসা করতেন, তাই তার ব্যবসা একের পর লসে পড়তে থাকে। ফলে, আমির ভীত ছিলো যে– এজন্য না তাকেঁ তারঁ স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়।।

আমির কিন্তু টেনিস এর বিশাল ভক্ত। আর নিজেও খুব ভালো টেনিস খেলতেন। খুব অল্প বয়সে তিনি ছিলেন মুম্বাই মানে মহারাষ্ট্র রাজ্যের টেনিসের চ্যাম্পিয়ন। অনুর্ধ ১২/১৪ গ্রুপের টেনিসে চ্যাম্পিয়নও ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে যতদূর জানা যায়, তারঁ প্রিয় তারকা- টেনিস জগতের আরেক বিখ্যাত মানুষ “রজার ফেদেরার”।

আমির খান তাঁর প্রিয় টেনিস তারকার সাথে

অবশ্য খান সাহেবের এই টেনিস খেলায় আসক্তির জন্য তারঁ শিক্ষক সব সময় ই একটা কথা বলতেন, “আমিরের মনোযোগ সারাক্ষণ পড়াতে না, থাকে ঐ খেলাতে”…

আচ্ছা তখন কি কেউ ভাবতে পেরেছিল এক সময়কার এই টেনিস চ্যাম্পিয়ন, টেনিসের পেছনে না ছুটে আজকে বলিউডের শ্রেষ্টত্বের আসনে বসে এই গোটা পৃথিবীটাই মাতাবেন!

যাক সবশেষে ভর্তি হন- নারসি মোনজি কলেজে (Narsee Monjee College of Commerce and Economics) তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, স্কুলের পাঠ শেষ করলেও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকার জন্য আর সাথে ছিলো ফিল্মে কাজ করার ভীষণ আগ্রহ। যার ফলশ্রুতিতে, তিনি আর পড়াশুনার দিকে এগুননি। অতটুকুতেই তিনি তার শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন।

আচ্ছা, এবার তারঁ শ্রেষ্ট কীর্তি, তারঁ শৈল্পিকতার গল্প শোনাই একটু। যে অভিনয় নামক শৈল্পিকতার জাদুতে তিনি আজ বলিউডে শ্রেষ্টত্বের আসনে বসে আছেন।

তিনি তারঁ জীবনের মাত্র আট (৮) বছর বয়সে তারঁই চাচা নাসির হুসেনের ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয়ের মাধ্যমে তারঁ অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
তারপর সেই শৈশবেই “ মাদহোশ” নামক আরেকটি চলচ্চিত্রতেও শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু ছবিটি খুব একটা সফলতা পায়নি।
তবে মাঝের কিছু টা সময় ছোট্ট একটা বিরতি দেন।

ইয়াদোঁ কি বারাত চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে আমির খান

তারঁ বয়স যখন ১১, তখন তিনি তারঁ তরুণ বয়সের প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন, যার নাম- হোলি। যেটা ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায়। তবে এ ছবি বাণিজ্যিক ভাবে খুব একটা আশার আলো দেখাতে পারেনি।



১৯৮৮ সালে তারঁ ই অভিনীত দ্বিতীয় ছবি- “ কেয়ামত সে কেয়ামত”। যেটা ছিলো ঐ সময়কার বক্স অফিস কাপানোঁ শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র। আর ছবিটির জন্য তিনি “শ্রেষ্ট নবাগত অভিনেতা” র পুরস্কার ও পেয়েছিলেন। আর এই ছবিটির নির্মাতা ছিলেন, তারঁ ই চাচাতো ভাই মনসুর খান। বলা হয়ে থাকে, এই ছবিটি ই হচ্ছে — আমির খানের জীবনে বাণিজ্যিক দিক থেকে প্রথম সফল ছবি।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল। সময়ের দিক থেকে প্রায় দশ বৎসর। আর এই দশ বৎসরের সময়ে সাত সাত বার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু দু:খের ব্যাপার হচ্ছে— একবারো তিনি তা পান নি।
তবে একটা প্রবাদ আছে না, বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবারে ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।
কিংবা যদি বলি, ধৈর্য্যের ফল তীতা হলেও মিঠা হয়।
এদুটো প্রবাদ ই যায় আমির খানের দিকে। কেননা, বার বার মনোনীত হবার পরেও পুরস্কার না পাওয়াটা সত্যি দুর্ভাগ্য জনক ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালে “রাজা হিন্দুস্তানি” ছবির জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। যে ছবিটি বাণিজ্যিক দিক থেকে সেরা একটি ছবি ছিলো।

১৯৮৯ সালে “রাখ” ছবির জন্য খান সাহেব জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।ছবিটির এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো যে, ছবিটি আমেরিকা পর্যন্ত পৌছেছিলো।

১৯৯৩ সালে “হাম হ্যাঁ রাহি পেয়ার ম্যাঁয়” ছবিটিতে অভিনয় করেন। যার চিত্রনাট্যও তিনি ই লিখেছিলেন। শুরুতেই বলেছিলাম, তিনি কিন্তু একজন চিত্রনাট্যকারও।

তার অভিনীত অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্রের নাম হচ্ছে — “ লগান”।
২০০১ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। আর এ ছবিটিতে আমির খান ‘ভুবন’ এর চরিত্রে অভিনয় করেন। যা ছিলো সত্যি অসাধারণ! আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে — এই ছবিটি ভারতীয় ক্রিকেট দলকে অণুপ্রাণিত করেছিলো। ব্রটিশরা এদেশে তথা ভারতীয় দের উপর যে অত্যাচার করেছিলো, তার ই উচিত জবাব যেনো এই হিন্দি ছবি লগান।

২০০১ এর ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ ও ২০০৩-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দল কে এই ছবিটি কিন্তু দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

‘লগান’ ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পায় এবং
সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে ৭৪তম একাডেমী অ্যাওয়ার্ডের জন্য ও মনোনিত হয়।
(উইকিপিডিয়া)।।
আমির খান অভিনীত লগান এমন ই এক ছবি যা বিশ্বখ্যাত ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড “অস্কার” এর জন্য মনোনীত হয়েছিলো। আর এটি ছিলো সমগ্র ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক রাশ গৌরব আর সন্মানের। তবে ছবিটি নিয়ে একটা কথা হচ্ছে— আমির খান তারঁ পছন্দ হচ্ছিল না বলে, ছয়-ছয় বার এই “লগন” ছবির স্ক্রিপ্ট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তবে সপ্তম বারে ছবিটির সংশোধিত স্ক্রিপট তারঁ এতটাই ভালো লেগেছিল যে, খান সাহেব নিজেই এই ছবির প্রযোজনা করেছিলেন।

৫ফুট ৫ইঞ্চির এই খান সাহেব ২বিয়ে করেন। তারঁ ১ম ইস্ত্রির নাম — রীণা দত্ত। যার সাথে বিয়ের পীড়িতে বসেন ১৯৮৬ তে। এই স্ত্রীর ঘরে রয়েছে তারঁ ২টি সন্তান। ছেলে — জুনায়েদ খান ও মেয়ে ইরা খান।
আর ২০০২ সালে এ তাদেরঁ এই সাজানো গুছানো দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।

আর আবারো খান সাহেব বিয়ের পীড়িতে বসেন। কিরণ রাও কে তিনি বিয়ে করেন। সময়টা তখন ২০০৫ সাল।আর এই ঘরে খান সাহেবের রয়েছে একটি পুত্র সন্তান। তার নাম আজাদ রাও খান।

তবে প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদকে খান সাহেব খুব সহজে মেনে নিতে পারেন নি। এ বিচ্ছেদে খুব কষ্ট পান তিনি। একপ্রকার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তাই প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর ফিল্মি দুনিয়া থেকে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিলেন বলা যায়।

যাক, চার বছর ফিল্মি দুনিয়া থেকে বাইরে থাকার পর, আবারো রবি ঠাকুরের সেই খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন এর মতোই ফিল্মি দুনিয়াই ফিরে আসেন এবং আর এসেই কাজ শুরু করেন “মঙ্গোল পান্ডে” ছবিতে। সমালোচকদের মতে, তারঁ অভিনীত চরিত্রটি এই ছবিটিতে সেরা একটি চরিত্র ছিলো। যা তিনি খুব সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

২০০৬ সালে রঙ দে বাসন্তী ছবির জন্য খান সাহেব সেরা অভিনেতা’র ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ছবিটি ২০০৬ সালে বক্স অফিসে সেরা ছবির তালিকায় স্থান করে নেয়।

সারা বছর ধরে ৩/৪টা মুভি করবেন। কিংবা একসাথে অনেক গুলো কাজ হাতে নিয়ে বসে থাকবেন। এমন টা কিন্তু আমাদের এই বলিউড পারফেকশনিস্ট একটু ও নন। তারঁ নিক নেম ই বলছে, তিনি পারফেকশনিস্ট।যেটা ধরবেন, সেটা আগে পারফেক্টলি শেষ করবেন। তারপরেই বাকিটা ধরবেন।

এবারে তারঁ পরবর্তী ছবি “তার ই জামিন পার” নিয়ে একটু বলি। ২০০৭ সালে ছবি টি প্রকাশ পায়। “তার ই জামিন পার” এমন ই এক ছবি,যেখানে আমাদের এই সমাজের বাচ্চাদের জীবনে ঢাকা পড়ে থাকা অদ্ভুদ এক সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবিটির চলচ্চিত্র পরিচালক ও ছিলেন তিনি, আবার প্রযোজক ও ছিলেন তিনি। আবার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় ও করেছেন তিনি। এই ছবিটিতে একটি ডিজলেক্সিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চার গল্প আমাদের সামনে তুলে উপস্থাপন করা হয়। যেখানে একটি বাচ্চা চোখে কম দেখতে পায়, কানে কম শুনতে পায়। কিন্তু বাচ্চাটির পরিবার তা বুঝতে নারাজ। তারাভাবে এটি বাচ্চাটির স্বভাবসুলভ দুষ্টমি। পরে তারা তাদের সন্তান কে এক বোর্ডিং স্কুলে পাঠায় আর আমির ছিলেন সেই স্কুলের ই শিক্ষক। তিনি পরে এই বাচ্চাটির সাথে আস্তে আস্তে মিশে যান এবং সেই বাচ্চাটির এই রোগটি আবিষ্কার করেন ও পরবর্তীতে বাচ্চাটির এই রোগের সমাধান করে তাকে সফলতম ছাত্র হিসেবে দাড়ঁ করান।

এটাও এক রকম সামাজিক সমস্যা। কখনো কখনো আমাদের পরিবারো কিন্তু আমাদের এই রকম কিছু সমস্যাকে বুঝতে পারেন না।
আমাদের দুষ্টুমি বা খাম খেয়ালি বশত অবহেলা করেন।

তো এই মুভি টি কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও দেখানো হয়েছিলো। যাতে করে তারা তাদের শ্রেণীকক্ষে থাকা বাচ্চাটা কে বুঝতে পারে। এরকম কোন সমস্যায় আক্রান্ত কিনা তা ধরতে পারে। আর তার বা তাদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে পারে।

এই ছবিটিতে যখন তিনি কাজ করছিলেন, তখন তারঁ কাছে একটা অফার আসে। প্যারিসের বিখ্যাত জাদুঘর — “মাদাম ত্যুস” জাদুঘর। পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত সব ব্যক্তিবর্গের মূর্তি এই জাদুঘরে মূর্তি হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
তো, মাদাম ত্যুস জাদুঘর কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল আমির খানের সাথে দেখা করতে আসে। তাদের দেখা করবার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— তারা আমির খানের ও একটি মূর্তি গড়তে চায়, তাদের জাদুঘরে রাখবার জন্য। আর তার জন্য খান সাহেবের অনুমতি লাগবে। কিন্তু একথা শুনে খান সোজা ভাষায় “না” করে দেন। কারণ একটিই—
“ তিনি বলেন, যারা তাকেঁ পছন্দ করেন তারা মাদাম ত্যুস’র ঐ মোমের মূর্তিতে না, ছবিতে দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।”

২০০৮ এ করেন গজনী ছবি। এই ছবি টি ও বাণিজ্যিকভাবে বিরাট সাফল্য পায়।

আর এর পরের বছর ই তার অভিনীত শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র, যে চলচ্চিত্রটিকে বলা হয়ে থাকে—
“The most loved film of the decade”….
আর সেটি হচ্ছে— “থ্রি ইডিয়টস”।।
আমির অভিনীত সব থেকে সেরা একটি ছবি হচ্ছে এটি। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি বক্স অফিসে রীতিমতো ঝড় তোলে। ছবিটি সমালোচকদের কাছে শ্রেষ্ট বলে সমাদৃত হয়। এখনো এই ছবিটি সমানভাবে জনপ্রিয়তার ঢেউ তুলছে দর্শকদের কাছে।



আর ২০১২ তে মুক্তি পায় খান সাহেবের পরবর্তী ছবি তালাশ। ৩০ নভেম্বর ২০১২-তে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এই ছবিটি ও বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়।

খান সাহেব বা আমির খান যাই বলি না কেনো তারঁ অভিনীত শ্রেষ্ট আরেকটি ছবির নাম হচ্ছে — “পিকে.”
কি উপমায় উপমিত করবো এই ছবিকে.. বেস্ট, বেস্ট এন্ড বেস্ট একটা মুভি এই পিকে।
যেটি ২০১৪ তে মুক্তি পায়। আমির অভিনীত এ মুভি টি এতটাই সেরা ছিলো যে — প্রথম ছবি হিসেবে শুধু ভারতেই ৩০০ কোটি রুপি আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলো এই ‘পিকে’।। আর এখনো পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কোটি রুপি আয় করে তার এই সিনেমাটি বলিউডের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার শীর্ষে অবস্থান করছে।( সূত্র: উইকিপিডিয়া)।।

মূলত : আমাদের সমাজের ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কার নিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই পিকে মুভিটি। যেখানে নাম ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন আমির খান।
আর এক্কেবারে উপরে দেওয়া ডায়ালগের মধ্যে প্রথমটিই কিন্তু এই পিকে মুভির।
বলিউড বক্স অফিস তো বটেই! তার সাথে সব জায়গাতেই ঝড় তোলে এই পিকে মুভি টি। তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সমকালীন বাস্তবতার গুরুত্বপূর্ণ একটা রুপ( ধর্মীয় কুসংস্কার) এই পিকে মুভিতে তুলে ধরা হয়েছে।

আর এখনো পর্যন্ত এই মিস্টার পারফেকশনিস্টের সর্বশেষ মুভি —- “সিক্রেট সুপার স্টার”

বক্স অফিস ফাটানো বেস্ট আরেকটা মুভি এই — “সিস্ক্রেট সুপার স্টার”।।
এই ছবিটির গল্প মূলত: একটি মুসলমান মেয়ের। যে মেয়েটির স্বপ্ন যে সে গায়িকা হবে। কিন্তু তার বাবা খুব কঠোর মন মানসিকতার একজন মানুষ। তিনি কোনভাবেই এটা মানবেন না। অবশেষে মেয়েটি গান করবে এই চিন্তাধারায় বাড়ি থেকে তার মা আর ভাই সহ পালিয়ে যায়। আর ছবিটির সহ অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেন — আমির খান। তিনি এই ছবিতে ছবির গল্পানুসারে সংগীত পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি ১৮ ই অক্টোবর ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। ছবিটির পরিচালনা করেন– আদ্ভিদ চন্দন(Advait Chandan)। আর প্রযোজনা করেন — আমির খান এবং তার স্ত্রী কিরণ রাও’র যৌথ প্রোডাকশন — আমির খান প্রোডাকশন।। তিনি কিন্তু চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন

সিক্রেট সুপারস্টার আমির অভিনীত সব থেকে সেরা ১টা মুভি। মুভিটির মূল চরিত্র— বাচ্চা মেয়ে যাইরা ওয়াসিম, সে ন্যাশনাল চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেপশ্নাল এচিভমেন্ট এ ভূষিত হয়। আর এই ছবিটির ঝুলিতে জমা হয়, তিন ক্যাটাগরির সেরা ৩টে অ্যাওয়ার্ড। সেরা অভিনেত্রী,সেরা সহ অভিনেত্রী আর তৃতীয় তে সেরা ফিমেল সিঙ্গার এর অ্যাওয়ার্ড। আর বাকি ৭টি ক্যাটাগরি তে জাতীয় পুরস্কারের জন্য ছবিটি মনোনীত হয়। শুধু ভারতে নয়, ভারতের বাইরের দেশ বিশেষ করে চীনে ই এই ছবি হাক পেড়েছে অনেক বেশি। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে চীনেই এই ছবি বেশীবার দেখানো হয়েছে।

পিকে আর দঙ্গল এরপর চীনে এই ছবিটিই হিট ছবির লিস্টে রয়েছে বলে জানা যায়। যতদূর জানা যায়, শুধুমাত্র এই সিক্রেট সুপারস্টার ছবিটি চীনেই ১০০কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

আমির সামাজিক সমস্যা গুলো নিয়ে “সত্যমেব জয়তে” নামে একটি টক-শো পরিবেশনা করেছেন, যেটির মূল উপজীব্য হচ্ছে —- মানুষের সামাজিক বিষয়গুলো কিংবা সমস্যা গুলো নিয়ে এবং তার প্রতিকার নিয়ে।

আমির খান ২০০৩ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সন্মানসূচক পদক, পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন। আর ২০১০ সালে আবারো ভারত সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সন্মানসূচক পদক— পদ্মভূষণ পদক লাভ করেন। আবার তারঁ এরুপ অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ — চীন সরকার তাকেঁ গর্ভনমেন্ট অব চায়না অ্যাওয়ার্ড এ ভূষিত করেন।

আর ২০১৩ সালের এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিনের তালিকাতে বিশ্বের সব থেকে সেরা ১০০জন ব্যক্তিবর্গের তালিকায় নিজেকে নিজের কাজ আর পরিশ্রমের গুণে ঠাইঁ করে নেন এই মিস্টার পারফেকশনিস্ট।

তবে তার সম্পর্কে জানা এক অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে— তিনি কিন্তু খুব ১টা অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে যান না।
বিভিন্ন ম্যাগাজিনের মতে, আমির খান ই হচ্ছেন, ভারতের বলিউড জগতের অন্যতম একজন শ্রেষ্ট versatile অভিনেতা।

আর তারঁ সুদর্শন, চকোলেট হিরো লুকের জন্য ই কিন্তু তাকেঁ চকোলেট বয় কিংবা “টিম আইডল” বলা হয়ে থাকে।

আমি আগেই বলেছি, তিনি বলিউডের একজন সফল প্রযোজক। আর তারঁ প্রযোজিত ছবিগুলো হচ্ছে—-
২০০১ সালে লাগান,২০০৭ সালে তারে জমিন পর, ২০০৮ সালে জানে তু ইয়া জানে না, ২০১০ সালে পিপলি লাইভ, ২০১১ সালে ধোবি ঘাট, ২০১১সালে দিল্লি বেলি, ২০১২সালে তালাশ।।

তিনি কিন্তু নেপথ্য গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন বহু ছবিতে। তার মধ্যে — তার ই জামিন পার ছবিটি অন্যতম।।

আর তারঁ অভিনীত চলচ্চিত্র গুলো হলো—-

১৯৭৩ ইয়াদোঁ কি বারাত, ১৯৭৪ মদহোশ, ১৯৮৪ হোলি, ১৯৮৮ কেয়ামাত সে কেয়ামাত, ১৯৮৯ রাখ, ১৯৯০ আওয়াল নাম্বার সানি, তুম মেরে হো শিব, ১৯৯১ আফসানা পেয়ার কা রাজ, দিল হ্যায় কে মানতা নেহি
দৌলত কি জং, ১৯৯২ জো জিতা ওহি, ১৯৯৩ পরম্পরা, হম হ্যায় রাহি পেয়ার, ১৯৯৪ আন্দাজ আপনা আপনা, ১৯৯৫ বাজি, ১৯৯৬ রাজা হিন্দুস্তানি রাজা হিন্দুস্তানি, ১৯৯৭ ইশক,রাজা, ১৯৯৮ ঘুলাম, ১৯৯৯ সারফারোশ,
২০০০ মেলা কিশান পেয়ারে,২০০১ লাগান,২০০৫ মঙ্গল পাণ্ডে,২০০৬ রং দে বসন্তি, ২০০৭ তারে জমিন পর, ২০০৮ গজনী, ২০০৯ থ্রি ইডিয়টস, ২০১২ তালাশ, ২০১৩ ধুম, ২০১৪ পিকে, ২০১৫ দিল ধ্বকনে দো, ২০১৬ দঙ্গল।।
(উইকিপিডিয়া)

প্রিয় পাঠক জানেন কি— বলিউডে আমির খান হচ্ছেন সেই অভিনেতা, যার ছবি ভারতের প্রথম ১০০কোটি রুপির মুভি ক্লাবে প্রবেশ করে।

যাক, এবার ইতি টানার পালা। সাত কাহন কি, পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা জানিয়ে ইতি টানছি।

পরিশেষে, সাত কাহন শব্দের অর্থ হচ্ছে — অসংখ্য। সত্যি ই তাই মানুষের জীবনের গল্প কিন্তু অসংখ্য। একটা শেষ হলে, কোত্থে আরেকটা এসে নতুন গল্প পাড়ে। তো, শ্রেষ্ট এই অভিনেতার অনেক গুলো গল্প ই আপনাদের সামনে পাড়লাম। আরো যদি কিছু বাকি থেকে থাকে, তবে তা পরের কোন লেখায় নিশ্চয় যুক্ত করবো। ঐযে বললাম, মানুষের জীবনের গল্প অসংখ্য। একটা শেষ হলে, কোত্থে আরেকটা এসে নতুন গল্প পাড়ে। তাই সে দিক থেকে নতুন একটা সংখ্যা আস্তেই পারে।

যাক, ভালো থাকুক আমাদের সক্কলের প্রিয় বলিউডের এই শ্রেষ্ট অভিনেতা। আর আমাদের এরকম ই আরো হাজারো পারফেক্ট ছবি উপহার দিক এটাই প্রত্যাশা।

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরপিএল: সম্ভাবনা ও গুরুত্ব

আরপিএল বর্তমান বিশ্বে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি...

কালীগঞ্জে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অভিভাবক সমাবেশ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ‘নরুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষার মানোন্নয়নের...

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন বর্ষিয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।...

বিয়ের কাজ সারলেন তালাত মাহমুদ রাফি

বিয়ে করেছেন সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। সোমবার (১৭ মার্চ)...

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সাথে কথা বলবে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার রুশ...

সিআইডি প্রধান হলেন গাজী জসীম

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন...

দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দেশের মাটিতে পা রাখলেন...

পিরোজপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পিতা-পুত্র আটক

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে জোর করে...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img