চলচ্চিত্রে কোটি কোটি টাকার বাজেট থাকলেও নেপথ্যের শিল্পীদের অনেক সময়ই তাঁদের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়—এমন অভিযোগ নতুন নয়। সেই পুরনো অভিযোগই আবারও সামনে এনেছেন অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই ঘটনা শুধু আমার নয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অহরহ ঘটে। কোটি টাকার প্রোজেক্টে কাজ করিয়ে অল্প কিছু পারিশ্রমিক পর্যন্ত দেয় না তারা।”
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে এই অভিযোগ করেন তিনি। শাকিব খানকে নিয়ে নির্মিত আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’-এর পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এই অভিনেত্রী।
দোয়েল জানান, ‘হৃদয়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো, সে আমার বন্ধু। কিন্তু সম্পর্ক দিয়েই কি পেশাদার মূল্যবোধ ঢাকা যায়? আমি একজন সিঙ্গেল মাদার, অভিনয়ই আমার একমাত্র পেশা। আমাকে কেউ কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক না দিলে সেটা মানা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ডাবিংয়ের জন্য আমাকে খুব রাত করে ফোন করে ডেকে পাঠানো হয়, তখন যেতে পারিনি। পরদিন সকালে আমি ডাবিং করি এবং পারিশ্রমিকের কথা তুললে সহকারী পরিচালক বলেন বিকেলে পাঠানো হবে। এরপর একদিন, দুদিন করে সময় কাটিয়ে দেয়। আমি তখন শ্রীমঙ্গলে আরেকটি শুটিংয়ে ছিলাম। সেখানে থাকার সময় সহকারী পরিচালক আবারও ডাবিং কারেকশন করে দিয়ে যেতে বলেন, কিন্তু তখনও সময় মেলেনি। তখনই সহকারী পরিচালক খারাপ ব্যবহার করেন, আমার দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সেই আচরণে খুবই অপমানিত হই। এমন ব্যবহার কোনো শিল্পীর প্রাপ্য নয়। পরে তারা আমার পারিশ্রমিকও দেয়নি।’
শিল্পীদের সম্মানজনকভাবে কাজ করার পরিবেশ না থাকা এবং স্বচ্ছতা না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে দোয়েল বলেন, ‘এটা শুধু আমার সাথে না। ঈদের আগে এক মেকআপ আর্টিস্ট কান্না করছিল—জানালো ঈদের আগেই কয়েকটি কাজ করেও পারিশ্রমিক পায়নি। তার বাসায় কিছুই নেই, খাবার নেই। তখন আমার বিকাশে যা ছিল তাই পাঠিয়ে দিয়েছি।’
পারিশ্রমিক সংক্রান্ত রসিদ বা চুক্তির অনুপস্থিতিকে এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন দোয়েল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এনওসি (No Objection Certificate) বা কোনো ধরনের চুক্তির ব্যবস্থা নেই। যে কাউকে “দুই টাকার আর্টিস্ট” বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সেই দুই টাকারও রশিদ দেওয়া হয় না। কেন? কারণ তারা চায় যেন কাউকে কিছু প্রমাণ করতে না হয়। অথচ যদি রশিদ বাধ্যতামূলক করা হতো, তাহলে কেউ কাউকে ঠকাতে পারত না।’
তিনি মনে করেন, “এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই বসা উচিত। দুই টাকা পারিশ্রমিক হলেও রশিদ থাকা উচিত। স্বচ্ছতা না থাকলে এ ধরনের অবমাননাকর ও অমানবিক আচরণ চলতেই থাকবে।