অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের লেখা উপন্যাস ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’। বইটি প্রকাশ করেছে মিজান পাবলিশার্স। এ ছাড়া এই উপন্যাস থেকে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন পরিচালক মুরাদ পারভেজ। গতকাল মঙ্গলবার এফডিসিতে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ও নাটকের প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। নিজের লেখা উপন্যাস ও অন্যান্য প্রসঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ড. মাহফুজুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
উপন্যাসের নাম ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’। যত দূর জানি এখানে ‘আল্পনা’ একটি চরিত্রের নাম। এই চরিত্রটি প্রসঙ্গে জানতে চাই…
মাহফুজুর রহমান : ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’ রোমান্টিক উপন্যাস। আল্পনা ব্রাহ্মণ মেয়ে। তাকে ভালোবাসে মুসলমান একটি ছেলে। আল্পনা ছেলেটার ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে সে জানায় তাদের ধর্ম এক নয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে পরবর্তী সময়ে আল্পনার বিয়ে হয় একজন মুসলমান ছেলের সঙ্গে। এভাবে এগিয়ে যায় উপন্যাসের গল্প। সিরিয়ালে আল্পনা চরিত্রে হিমি অভিনয় করছেন। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করছেন নিলয়।
‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘আরো সাবধান’, ‘বিদ্রোহ চরিদিকে’ এই চলচ্চিত্রগুলোর গল্প আপনার লেখা ছিল। তখন বই প্রকাশের কথা চিন্তা করেননি কেন?
মাহফুজুর রহমান : আমার লেখা এই তিনটা চলচ্চিত্রই সুপারহিট ছিল। ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ছবিতে ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন আসলে চলচ্চিত্র ও মেগা সিরিয়ালের জন্যই শুধু গল্প লেখা হতো। ‘ঘর জামাই’ নামে একটা মেগা সিরিয়াল লিখেছিলাম। সিরিয়ালটির ৬০০ পর্ব প্রচারিত হয়েছিল।
যা হোক, পরবর্তী সময়ে ভাবলাম অনেকেই তো বই লিখছে। আমিও তো লিখতে পারি। কারণ আমিও অনেকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে থাকি। আমার বইয়েরও তো মোড়ক উন্মোচনের ফিতা আমি কাটতে পারি, তাই না! (হাসি)
‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’ বইটি দেখার পর আপনার কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
মাহফুজুর রহমান : এটা আমার লেখা দ্বিতীয় বই। প্রথম বইটি ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল বইটি। যেহেতু দ্বিতীয় বই তাই আগের মতো উচ্ছ্বাস ছিল না। আর দেখুন, জীবনে এত পুরস্কার পেয়েছি। এখন পুরস্কার পেলেও পুলকিত হই না।
উপন্যাসটি প্রকাশের পর শুভেচ্ছা বার্তা কেমন পাচ্ছেন?
মাহফুজুর রহমান : মাত্রই তো প্রকাশ পেল বইটি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন বইটি পড়ার পর তিনি আমাকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
শুনলাম আপনি নতুন আরো দুটি চলচ্চিত্রের গল্প লিখেছেন। গল্পগুলো প্রসঙ্গে বলুন।
মাহফুজুর রহমান : খুব শিগগির আমার গল্প নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি হবে। ছবির নাম ‘আমি নায়িকা হব না’। এই ছবিটা অনেক বাস্তবধর্মী হবে। আমাদের দেশে খুলনা, যশোর ও অন্যান্য গ্রাম অঞ্চল থেকে অনেক মেয়ে নায়িকা হওয়ার আশা নিয়ে শহরে আসে। এরপর ঘটে অনেক বৈচিত্র্যময় ঘটনা ও দুর্ঘটনা। এসব নিয়ে ছবির গল্পটি লেখা। এ ছাড়া আরো একটি সিনেমার গল্প লিখছি।
আপনার গল্প লেখার আগ্রহ কখন থেকে তৈরি হয়?
মাহফুজুর রহমান : ছোটবেলায় আমি রূপকথার গল্প বানিয়ে বলতে পারতাম। আমার বন্ধুরা আমার গল্প শুনত। আমি দিনাজপুর জেলা স্কুলে পড়তাম। সেখানকার বাংলা শিক্ষক গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ক্লাসে প্রায়ই ছাত্রদের বলতেন গল্প বানিয়ে বলতে। আমার বন্ধুরা অনেকেই বলতে পারত না। আমাকে তখন তিনি বলতেন, ‘তুই গল্প বানিয়ে বল।’ আমিও বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প বলতাম। এরপর কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রেমের অনেক গল্প বন্ধুদের বানিয়ে বলেছি। তখন আসলে বই লেখার চিন্তা মাথায় ছিল না। কিন্তু গল্প বলার আগ্রহ তো ছিল।
এবার অন্য প্রসঙ্গে জানতে চাই। আপনার তো ফেসবুকে বেশকিছু ফেইক অ্যাকাউন্ট আছে। সেখান থেকে অনেক স্ট্যাটাসও দেওয়া হয়। ফেইক অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার পদক্ষেপ কি আপনি নিয়েছেন?
মাহফুজুর রহমান : বিশেষ একটা শ্রেণি আছে যারা সবসময় আমার পেছনে লেগে থাকে। আমি ভালো করলেও পেছনে কথা বলে আবার খারাপ কিছু করলেও করে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফেসবুক পছন্দ করি না। ফেসবুকের ইতিবাচক অনেক ব্যাপার আছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম এটার অপব্যবহার বেশি করছে।
বই লেখা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহফুজুর রহমান : চলতি বছরে আরো নতুন বই প্রকাশ করব। চার কিংবা পাঁচটা বই প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।