জাকিয়া সুলতানা প্রীতি
“পৃথিবীটা দেখছি, প্রতিদিন শিখছি” — এই মূলমন্ত্রে ২০০৫ সালের ১৫ই এপ্রিল বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছিলো শিশুবিষয়ক জনপ্রিয় বিনোদনমূলক টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’।
টুকটুকি, হালুম, ইকরি কিংবা শিকু আমাদের দেশের শিশুদের কাছে নামগুলো অতি পরিচিত এবং অতি প্রিয়।
মূলত: সিসিমপুরের লক্ষ্য ছিল —- দেশের শিশুদের শেখাকে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য করা। আর তাই সিসিমপুর এখনো পর্যন্ত গান, অভিনয় এবং খেলার ছলে শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহায়তায় ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠানটি।
আর আজ ১৪ পেরিয়ে পনেরোতে পা রাখলো শিশু বিষয়ক জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি।।
সিসিমপুর প্রচারের বর্তমানে একাদশ সিজন চলছে। তৈরি হচ্ছে ত্রয়োদশ সিজন। শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ টেলিভিশন-এর মাধ্যমে সারাদেশের প্রায় ১ কোটি দর্শক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, যেমন- চ্যানেল আই, দেশ টিভি ও চ্যানেল নাইনে প্রচারিত হয়েছে। বর্তমানে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি আরটিভি ও বিটিভি’তে প্রচারিত হচ্ছে।
২০১০ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট পরিচালিত একটি জরিপে সিসিমপুর শিশুতোষ অনুষ্ঠান হিসেবে শীর্ষস্থানীয় এবং সামগ্রিকভাবে তৃতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়েছে। ২০০৭ সালে পরিচালিত এসিপিআর এর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু সিসিমপুর অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখে তারা তাদের চাইতে এক বছরের বড় শিশু, যারা সিসিমপুর দেখে না তাদের চেয়ে ভাষা ও বর্ণ, গণিত এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তার সকল কার্যক্রমই সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে পরিচালনা করে থাকে। গত চৌদ্দ বছরে সিসিমপুর বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেছে। ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে সিসিমপুর-এর পথচলার শুরু। নিউইয়র্কভিত্তিক সিসেমি স্ট্রিট নামক শিক্ষামূলক টেলিভিশন ধারাবাহিকের যৌথ-প্রযোজনা সিসিমপুর-এর কার্যক্রম বাংলাদেশে পরিচালনা করছে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশ-এর যৌথ অর্থায়নে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সহযোগিতায় ২০১০ সাল থেকে “সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প”টি দেশের ৬৪টি জেলায় ৩৩৪০টি স্কুলে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ-এর কারিগরি সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়াও সিসিমপুর প্রতিনিয়ত নানাধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তার সকল কার্যক্রমই সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে পরিচালনা করে থাকে।
সিসিমপুরের মূলমন্ত্র: পৃথিবীটা দেখছি, প্রতিদিন শিখছি। আর তাই তো, ১৫ পেরিয়ে ২০, ৫০, ১০০ বছর… একদিন সূর্যের সমান প্রাচীন হবার স্বপ্ন নিয়ে চলছে সিসিমপুর, বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর প্রাক-শৈশবকে পূর্ণাঙ্গ ও বিকশিত করবে বলে।
শুভ জন্মদিন সিসিমপুর!
সিসিমপুর অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সকল কলাকুশলীদের চ্যানেল আগামী পরিবারের পক্ষ জানাই অনেক অনেক অভিনন্দন, রইল অনেক শুভেচ্ছা ।।
সিসিমপুরের এই পথচলা আরো বিস্তৃত হোক, আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক, আর সে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিক, প্রতিটি শিশুকে আর তাদের স্বপ্নগুলোকে নিয়ে সূর্যের সমান প্রাচীর গড়ুক, তাদের পূর্ণাঙ্গ শৈশব বিকশিত করুক এটাই প্রত্যাশা।