ফারজানা শেহরীন (রূপন্তী):
জীবনের অন্যতম সোনালী সময় কাটে বিদ্যালয়কে ঘিরে। তাই সকল ছাত্রের জীবনের এক আলাদা আবেগ থাকে তার বিদ্যালয় কে ঘিরে। তেমনি আমার জীবনের এই ঘিরে থাকা আবেগ আমার প্রাণপ্রিয় ভিকারুননিসা নূন কে নিয়ে। শৈশবের কাটানো স্মৃতি থেকে কৈশোরে পদার্পন পর্যন্ত আমার জীবনের ১২ টা বছরের সাক্ষী এই ভিকারুননিসা। কখনো ভালোবাসা, কখনো মনোমালিন্য, কখনো বা ঝগড়া কত ধরণের স্মৃতি এই প্রতিষ্ঠানটাকে ঘিরে। ১৯৪৭ সালে তৎক্ষণাত পশ্চিম পাকিস্তানি গভর্নর ফিরোজ খান নূন এর স্ত্রী অস্ট্রিয়ান-পাকিস্তানি সমাজকর্মী ভিকার-উন-নিসা-নূন রমনা প্রিপারেটরি স্কুলের চালনা শুরু করলে তাঁর স্বামী কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হন। এরপর স্বামীর সহায়তায় ১৯৫২ সালে বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বে স্বাধীনতার আগে ভিকারুননিসা পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানে উভয়তেই ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর দেশ স্বাধীনের পর তা আলাদা হয়ে যায়।
বর্তমান বাংলাদেশে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোট ৪টা শাখা রয়েছে। এই ৪টা শাখা আনুমানিক ১০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। ৪টি শাখার মধ্যে আছে বেইলি রোড, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা এবং আজিমপুর। প্রধান শাখা বেইলি রোড। এটি ৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২৫,০০০ ছাত্রী এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি গার্লস স্কুল। এখানে ২ শিফটে ক্লাস হয়। আমাদের স্কুলের নীতিবাক্য হচ্ছে ‘Light Through Learning’ অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে আলো। আমাদের বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘নূন প্রবাহ’। বছরে অর্ধ-বার্ষিক এবং বার্ষিক দুটো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দুটো শ্রেণি পরীক্ষা তো রয়েছেই।
পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের মেয়েরা অন্য সব ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক, আর্ট, খেলাধুলা এবং সব ক্ষেত্রেই। আমাদের রয়েছে অনেকগুলো ক্লাব যেমন আর্থ,এনিম, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট, বিতর্ক, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ, এনভায়রনমে, ফটোগ্রাফি, সায়েন্স, স্পোর্টস, ডান্স এবং গ্রাফিকস ক্লাব। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল আয়োজিত বিচিত্র ইভেন্টসে অংশগ্রহণ করে তারা কুড়িয়ে আনে সুনাম এবং পুরষ্কার। দেশ এবং দেশের বাইরেও আমাদের মেয়েরা বেশ ভালো সুনাম অর্জন করছে। আমাদের কলেজ কামাই করার জন্য আলাদা কোনো শাস্তি নেই ঠিকই কিন্তু মেয়েদের দুস্টুমির আর অনেক স্মৃতির ও কোনো শেষ নেয়। ক্লাস না করে মাঠে যেয়ে বসে থাকা, আপাদের বকুনি খেয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালানো,ক্লাস না করার জন্য বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে বসে থাকা, একজন আরেকজনের টিফিন খেয়ে ফেলা – এসব স্মৃতি একজন এক্স-ভিকিদেরকে কাঁদায়।
যখন এই বিদ্যালয়ের দিন শেষ হয়ে আসে তখন সবাই অপেক্ষা করে কবে আবার সবার সাথে দেখা হবে। এজন্য সুদীর্ঘ ৬৩ বছরের রিইউনিয়নের আয়োজন করে ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় ‘১ম রিইউনিয়ন অব ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকার প্রথম সারির স্বনামধন্য স্কুল ও কলেজ। প্রতিবছর এর অসামান্য ফলাফলের জন্য এখনো আমাদের বিদ্যালয়টি সর্বশিখরে। এই স্কুলের প্রত্যেকটি মেয়ের এবং সব শিক্ষকের ইচ্ছা আমাদের স্কুল যেন আরও এগিয়ে যায় এবং আরও ভালোভালো সাফল্য বয়ে আনতে পারে।