ফেনীর সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত দেশের প্রথম পরীক্ষামূলক বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জনবল সংকট, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প এখন কার্যত পরিত্যক্ত।
এর পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভুয়া দলিলপত্র দেখিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
২০০৪–০৫ অর্থবছরে ডেনিশ উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার অর্থায়নে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। চারটি উইন্ড টারবাইন থেকে সর্বোচ্চ ০.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান নেবুলা টেকনো সল্যুশন লিমিটেড এই টারবাইন স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে পুনরায় মেরামত করে কেন্দ্রটি চালু করা হয়, যা ২০২১ সালের প্রথম দিকে আবার অচল হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি চালু থাকা অবস্থায় জাতীয় গ্রিডে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল।
২০২১ সালে কেন্দ্রটির কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সাতটি পদে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বাস্তবে কেউ যোগ দেননি। বর্তমানে টারবাইনগুলো অকেজো, যন্ত্রাংশে মরিচা পড়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং বিদ্যুৎ সরঞ্জামের চুরি লেগেই আছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ট্রান্সফরমার চুরির সময় তিনজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
ভূমি দখলের অপচেষ্টা
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার গাজী কেফায়েত জানান, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভূয়া ইজারা দলিল দেখিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছে। এসব দলিলে মৌজা, দাগ বা জমির পরিমাণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরকারের তরফে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হলেও এই প্রকল্পের প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
নেতিবাচক প্রভাব
মৎস্যচাষি শাহীন মিয়া বলেন, “এত বড় প্রকল্প পড়ে থাকবে—এটা মানা যায় না। বিদ্যুৎ দরকার আমাদের, লোক দেখানো প্রকল্প নয়।”
একই কথা বলেন স্থানীয় এক ইমাম বোরহান উদ্দিন।
স্থানীয় ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম জানান, “বিপিডিবির লোকজন বলছেন বরাদ্দ ও জনবল নেই। অথচ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।”
প্রকৌশল বিশ্লেষণ ও প্রশাসনিক বক্তব্য
প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, “প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার মতো সম্ভাবনা এখনো রয়েছে, তবে এজন্য প্রকৌশলী ও রক্ষণাবেক্ষণের লোকবল নিশ্চিত করতে হবে।”
সোনাগাজীর ইউএনও রিগ্যান চাকমা বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।”
বিপিডিবির ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উপসংহার
বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান ঘাটতির সময়ে সাড়ে চার বছর ধরে অচল থাকা এ প্রকল্পটি আবার সচল হলে তা জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।