কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১৪ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়ভাবে সালিশে এক লাখ টাকার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর স্বজনদের। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেন্টমার্টিনে শিশু ধর্ষণে অভিযুুুুক্ত জামায়াত নেতার ভাইকে রক্ষায় বিএনপির নেতা ও প্রভাবশালীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগী পরিবার এলাকা ছাড়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সংঘটিত ঘটনাটির বিষয়ে শনিবার দুপুরে শিশুটির মা সমকালকে জানান, তাদের ১৩ বছর বয়সী শিশুকে জিম্মি করে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি আলী হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৩৫)।
ভুক্তভোগী শিশুটির মা বলেন, ‘মুরগি আনতে গিয়ে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে আব্দুল্লাহ। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করায় মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে সে কাঁদতে কাঁদতে তার সঙ্গে হওয়া ঘটনার বর্ণনা দেয়।’
বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী শিশুটির মা বলেন, ‘অভিযুক্ত আবদুল্লাহ এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালীসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল আলম এক লাখ টাকা নিয়ে আমাদের চুপ থাকতে বলেন। আমরা এক লাখ টাকায় মেয়ের জীবন বিক্রি করতে রাজি নয় জানলে অব্যাহতভাবে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকির কারণে বর্তমানে দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আত্মগোপনে রয়েছি।’
সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমার টাকার দরকার নেই। কোনো ক্ষতিপূরণ চাই না, আমি মেয়ের বিচার চাই। আমরা দরিদ্র মানুষ। স্বামী জেলে। এই প্রভাবশালীদের ভয়ে থানায় যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। মেয়েও অসুস্থ, গোপনে চিকিৎসা করাচ্ছি, কিন্তু আমি কারও থেকে কোনো টাকা নেয়নি।’
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা বলছেন, গত মঙ্গলবার ঘটনার দিন সমুদ্রে জোয়ারের ভাঙন দেখতে বাড়ি থেকে বের হয় শিশুটির মা। বিকেলে মুরগি খুঁজতে বের হয় তার মেয়ে। তখন ওই গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন কৌশলে মেয়েকেটিকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করায় তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে তার সঙ্গে হওয়া ঘটনার বর্ণনা দেয় পরিবারকে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় নুর আলম, মো. নজরুল, মো. হাসিম, মো. শামসুসহ কয়েকজন মাতব্বর গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। তখন বৈঠকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ধর্ষণের বিষয় নিয়ে একটি পরিবার এসেছিল। পরে তারা থানায় যাওয়ার কথা বলে ফাঁড়ি ত্যাগ করেন। কিন্তু দ্বীপে শিশু ধর্ষণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
দ্বীপের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, আলী হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির এবং বর্তমান জেলা সদস্য আবদুর রহিম জিদাহীর ভাই। তাদের আরেক ভাই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহমান। দ্বীপে তারা প্রভাবশালী। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাদের সঙ্গে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলমও।
এ বিষয়ে সেন্টমর্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি সত্য না। আমি তাদের আইনী সহায়তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।’
ঘটনার প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আবদুল্লাহর সঙ্গে আলাপ করার জন্য কল করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তার ভাই জামায়াত নেতা আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, ‘আমরা ১৭-১৮ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার। মূলত তারা (ভুক্তভোগীরা) আওয়ামী লীগের লোকজন। এছাড়া আমাদের সঙ্গে একটি জমির বিরোধ রয়েছে। সেটিকে কেন্দ্র করে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা কেউ মৌখিক বা লিখিতভাবে অবহিত করেনি। লিখিত পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ধর্ষণের খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি। আবদুল্লাহ নামের এক যুবক এক শিশু কন্যাকে ধর্ষণের বিষয়টি দ্বীপের সবাই জেনে গেছে। এখন পরিবারটি কোথায় তা কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরত চিকিৎসক ইনজামামুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার দাবি করে সেন্ট মার্টিনের এক শিশু হাসপাতালে এসেছে। তাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।’