জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অভিযোগ করেছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ না মেনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত সরকারের একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কৌশল, যা বিএনপির স্বার্থ রক্ষার্থেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের মতামত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং কমিশনের সুপারিশকে উপেক্ষা করে সরকার এমন এক প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছে, যাতে গণভোটের গুরুত্ব কমে যায় ও সংস্কার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারে ৮ দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন প্রথম থেকেই একটি প্যাকেজে গণভোটের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল। কিন্তু সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেই প্যাকেজকে চার ভাগে ভাগ করেছে। এতে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা সহজ হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য এতগুলো প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তার মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা তৈরি করে গণভোটের মূল ইস্যুকে গুরুত্বহীন করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কিত মতামতকেও সরকার অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন বলেছিল, এটি ভিন্নমত প্রকাশের নথি মাত্র; গণভোটের প্রশ্নে আলাদা করে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। অথচ সরকার বিএনপির সন্তুষ্টির জন্য সেই নোট অব ডিসেন্টকে প্যাকেজ ভাঙার অজুহাত করেছে, যা আইনি ও সাংবিধানিকভাবে অপ্রচলিত এবং এক বিশেষ দলকে সহায়তার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাহের অভিযোগ করেন, সংস্কার পাস হলে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে তা সাংবিধানিকভাবে বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতাও সরকার তুলে দিয়েছে। এতে সংস্কার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দুর্বল হয়ে গেল এবং বিএনপির আপত্তিকেই মান্য করা হলো। আদালতের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল শিথিল বাধ্যবাধকতা দিয়ে যে সংস্কারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা যাবে না, সেটা বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
তার মতে, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষ গণভোট আলাদা দিনে চায়। কারণ সংস্কারের প্রশ্নে গণভোট এবং সরকার বাছাইয়ের প্রশ্নে জাতীয় নির্বাচন দুটি ভিন্ন বিষয়। একই দিনে ভোট হলে দলগুলো কেবল প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবে, ফলে গণভোটে জনসম্পৃক্ততা কমে যাবে। এরপর সরকার বলতে পারবে—যেহেতু ভোট কম হয়েছে, জনগণ সংস্কার চায়নি।
তাহের বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে তরুণ ভোট একটি দলের বিপক্ষে গেছে। তাই গণভোট আলাদা দিনে হলে সেই দল নেতিবাচক রায় পেতে পারে—এই আশঙ্কায় সরকার একসঙ্গে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিকে ভবিষ্যৎ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে চাইছে। তিনি প্রশাসনে দলীয়করণ, নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে অনুগতদের বসানোর অভিযোগও করেন এবং সতর্ক করেন যে এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত ১৫ বছরের মতো আরেকটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হলে জাতি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে বলে তার মন্তব্য।
তিনি জানান, সরকারের তিনজন উপদেষ্টা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন এবং একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। আট দল ইতোমধ্যেই এসব উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেছে এবং তালিকাও প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আট দল ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন চায় এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিএ/এমআরএফ


