সরকার ঘোষিত নগদ প্রণোদনা হাতিয়ে নিতে আলু রপ্তানির ভুয়া বিল তৈরি করে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন চট্টগ্রামের বর্তমান ও সাবেক ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা এবং ৫ ব্যবসায়ী। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এ চক্র অ্যাসিকিউডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম ব্যবহার করে ‘কাগুজে রপ্তানি’ দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে ২০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করে।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ‘অন্তরা কর্পোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৯৬টি বিল অব এক্সপোর্ট জমা দেয়। এসব বিলের মাধ্যমে তাজা আলু রপ্তানির ভুয়া নথি তৈরি করে ব্যাংক থেকে প্রণোদনার টাকা তোলা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাস্তবে কোনো পণ্য রপ্তানি করা হয়নি; অফ-ডক কর্তৃপক্ষও কোনো চালান গ্রহণ করেনি।
দুর্নীতির পদ্ধতি
দুদক জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া শিপিং বিল, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সার্টিফিকেট, জাহাজীকরণ রেকর্ড ও ক্রেডিট রেটিং তৈরি করেন। এরপর সেসব নথি উত্তরা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়ার দিলকুশা শাখায় জমা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা উত্তোলন করা হয়। মোট ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭ মার্কিন ডলার (প্রায় ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা) তোলা হয়।
আসামিদের তালিকা
মামলায় আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাসুদেব পাল, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, দিদারুন নবী, রনি বড়ুয়া ও মো. আরিফুর রহমান, বর্তমান রাজস্ব কর্মকর্তা ফারহানা আকরাম ও মো. মাহবুবুর রহমানকে।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন অন্তরা কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. মুশতাক খান, মেসার্স এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার মো. আবদুল জলিল আকন ও মো. আলতাফ হোসেন, মেসার্স প্যান বেঙ্গল এজেন্সির মো. সেলিম, এবং জিআর ট্রেডিং করপোরেশন সিএন্ডএফ লিমিটেডের মো. আব্দুল রহিম।
মামলার বিবরণ
৩০ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর সংশ্লিষ্ট ধারায়ও মামলা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, এটি কেবল একটি উদাহরণ; ভবিষ্যতে এ ধরনের কাগুজে রপ্তানির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অন্যান্য মামলাও পুনরায় তদন্তের আওতায় আনা হবে।
সিএ/এমআর


