রংপুরের গংগাচড়ার হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক থানায় চরম লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গালাগাল ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানা চত্বরে। ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক হলেন—কালবেলা’র রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি এবং প্রথম আলো’র নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান।
ঘটনার পটভূমি
রোববার (২৭ জুলাই) রংপুরের গংগাচড়ার সীমানাসংলগ্ন কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নে উত্তেজনাকর পরিবেশে মাইকিং, বিক্ষোভ ও জমায়েতের অভিযোগ উঠে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, কিশোরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে শতাধিক মানুষ সিঙ্গেরগাড়ি বাজারে জড়ো হয়ে ওই হিন্দুপল্লীর দিকে রওনা হন। ওই এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ থানার এলাকার কিছু মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়েই অনুসন্ধান করতে যান সাংবাদিকরা।
‘এই এদের ধরেন তো’: সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওসি
ঘটনার দিন বিকেল তিনটার দিকে সাংবাদিকরা ওসির সঙ্গে থানার গোলঘরে কথা বলেন। মানববন্ধনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি আশরাফুল ইসলাম প্রথমে তা অস্বীকার করেন। পরে সাংবাদিকরা ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন—
‘উসকানি দিতে আসছে ওরা। মিয়া, আপনাদের উসকানি দেওয়ার সব খবর আছে। আপনাদের যোগ্যতা থাকলে ভালো জায়গায় থাকতেন।’
এরপর সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন—
‘চোখ দিয়ে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? এই এদের ধরেন তো।’
সঙ্গে সঙ্গে তিনি উপস্থিত এসআই মহসীনকে নির্দেশ দেন:
‘পুলিশ ডাকেন, ওদের ধরেন। প্লান করছে দুজনে। প্রমাণ আছে আমার কাছে।’
তখন এসআই মহসীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই সাংবাদিককে থানার চত্বর থেকে সরিয়ে নেন। এরপরও ওসি তাদের উদ্দেশে গালাগাল করতে থাকেন।
ওসির অবস্থান ও হুমকি
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন শেখকে ওসি আশরাফুল বলেন—
‘আমি আধুনিক পুলিশ। সাংবাদিকদের ভয় করে চলব, এমন পুলিশ আমি না। আপনি চাইলে এসপি, ডিআইজি, আইজিপিকে অভিযোগ করুন। আমার চাকরি যাবে তাও আমি এই চাকরি করব না। সাংবাদিক, পুলিশ বা রাজনীতিবিদ—যেই হোক, ফাইজলামো করলে পিটিয়ে সোজা করে দেব।’
সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে)-এর সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন—
‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুই সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের শামিল। ওসি আশরাফুল ইসলামের আচরণ সরকার ব্যবস্থার ফ্যাসিবাদী রূপ তুলে ধরছে।’
তিনি অবিলম্বে অভিযুক্ত ওসিকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান, অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
পুলিশের অবস্থান
ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার এএফএম তারিক হাসান খান-এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রশ্নেরও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।