ইভান পাল
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি নাম প্রায় প্রতি মূহুর্তেই উচ্চারিত হয়, প্রত্যেক সংস্কৃতি কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠকরা যাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি — রণজিৎ রক্ষিত।।
সংস্কৃতির পালকজুড়ে রঙিন এক মুহূর্তের জ্বলজ্বলে নাম বরেণ্য সাংস্কৃতিক সংগঠক রণজিৎ রক্ষিত।
যিনি এ পরিমন্ডলে উল্লেখযোগ্য সময় অতিক্রান্ত করেছেন শিল্পের বিভিন্ন শাখায়। চট্টগ্রামের আবৃত্তিশিল্পকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তাঁকে বলা হতো আবৃত্তির জাদুকর।। একি সাথে তিনি কাজ করেছেন মঞ্চ নাটকে, আবার অভিনয়ও করেছেন বেশ কয়েকটি টেলিফিল্মে।।
যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুড়িয়েছেন অসংখ্য শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা।।
তিনি বোধন আবৃত্তি স্কুলের আমৃত্যু অধ্যক্ষ ছিলেন। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । তাঁর প্রাণান্ত প্রেরণায় আজ বোধন সর্বমহলে প্রশংসিত পরিচিত এক অধ্যায়।
এছাড়া মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন জেলা শিল্পকলা একাডেমী চট্টগ্রাম’র কার্যকরী পরিষদের প্রথম সহ-সভাপতি।।
আজ ১০ জানুয়ারি, শুক্রবার তাঁর ৭২ তম জন্মবার্ষিকী। আবৃত্তিশিল্প ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এ মহান ব্যক্তিত্বের জন্মদিন উদযাপন করেছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম।
এদিন সকালে বোধন আবৃত্তি স্কুল এর প্রশিক্ষণ স্থান অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে রণজিৎ রক্ষিতের সহধর্মিনী দীপ্তি রক্ষিত বোধন রূপকার ও সংস্কৃতির এ প্রাণের মানুষের জন্মদিনের কেক কেটে এক আবেগময় আবহে আপ্লুত হন।।
এসময় বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টগ্রাম’র সভাপতি সোহেল আনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল সোহেল, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সঞ্জয় পাল, অনুষ্ঠান সম্পাদক মৃন্ময় বিশ্বাস, অর্থ সম্পাদক অনুপম শীল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিপ্লব কুমার শীল, দপ্তর সম্পাদক পল্লব গুপ্ত, সদস্য পার্থ বড়ুয়া, শুভাশীষ পাল অর্ক, জসিম উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেনসহ বোধনের বিভিন্ন আবর্তনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপস্থিত সকলে বোধনের এ প্রাণপুরুষের সাথে নিজেদের স্মৃতিগুলো তুলে ধরেন এবং বরেণ্য এ শিল্পীকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তাঁকে উৎসর্গ করে আবৃত্তি করেন বোধনের আবৃত্তিশিল্পীরা।
বাংলাদেশের বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী আবৃত্তির জাদুকর রণজিৎ রক্ষিত ১৯৪৮ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিপ্লবী যতীন্দ্রমোহন রক্ষিত ও মা রানি রক্ষিত। ষাটের দশকে নিয়মিত আবৃত্তিচর্চার পাশাপাশি নাট্য আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৬৫ সালে শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কুনজরে পড়েন এবং কারাবরণ করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম সহায়ক সমিতির সদস্য ছিলেন।
স্বাধীনতাত্ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম পথনাটক গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের ‘যায় দিন ফাগুন দিন’ এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
তখন থেকেই গণায়ন ও নান্দীকার নাট্য সম্প্রদায়ে কাজ করেন।
১৯৬৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বেতারে নিয়মিতভাবে কাজ করেন।
গুনী এই শিল্পী চারটি টেলিফিল্মে অভিনয়ও করেন। দেশের বাইরে ভারত, যুক্তরাজ্য, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে আবৃত্তি পরিবেশন করে প্রশংসিত হন।
সম্মাননা দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেছে কলকাতার সাংস্কৃতিক সংগঠন সুচেতনা কলকাতা। এরপর— ঢাকার সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বনন, চট্টগ্রামের প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, অবসর, বান্ধব পাঠাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ, বর্ণ আবৃত্তি সংসদ, বিশ্বজনীন শান্তি সংঘ, মোপলেসসহ নানা সংগঠন।
তিনি মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে দীর্ঘ ৪১ বছর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন।
চট্টগ্রাম একাডেমি, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান পরিষদ, প্রবর্তক সংঘসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য ছিলেন।
গুণী এই শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেছিলেন।।
বাংলাদেশের বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রয়াত রণজিৎ রক্ষিতের জন্মদিনে চ্যানেল আগামী পরিবারের পক্ষ থেকে রইল শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা ।।