আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস;

0
27

(৭১’র সেই নিষ্ঠুর, ভয়াবহ আর ঘৃণিত গণহত্যা’র ৪৮ বছর আজ)

ইভান পাল

আজ ২৫শে মার্চ।।

১৯৭১ সালে ঠিক আজকের এই দিনটায় অর্থাৎ ২৫শে মার্চের রাতে এই বাংলার সহজ-সরল, ঘুমন্ত, নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি।

নিশংসভাবে হত্যা করেছিল এদেশের( তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হাজার হাজার মানুষকে।

পাকিস্তানিবাহিনীর ভয়বহ নিষ্ঠুরতার একটি খন্ডচিত্র

আহা! কি সেই নিষ্ঠুর দৃশ্য! কি যে পাষণ্ডতা।।

সে রাতে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, কাউকে গুলি করে ঝাজরা করে দিয়েছিল সে পাষন্ড পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।।

আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনির বাঙ্গালিদের ওপর এই বর্বরোচিত আক্রমণ ইতিহাসে “অপারেশন সার্চলাইট”  নামে পরিচিত।

যদি একটু ফিরে দেখতে চায় তবে

১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। কিন্তু কুচক্রী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিরদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বদলে বেছে নিয়েছিল বিশাল এক ছককষা ষড়যন্ত্রের ।

পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইয়াহিয়া খান।। তিনি নির্বাচনে বাঙ্গালিদের এরুপ সসংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখে পূর্ব নির্ধারিত জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করেন। আর ইয়াহিয়া’র এই স্থগিতাদেশে সারাবাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

আবার এরমধ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কে সর্তক করে বাঙ্গালিদের অধিকার, বাঙ্গালিদের মর্যাদা বাঙ্গালিদের ন্যায্য  ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার জন্য সেইসাথে বাঙ্গালিদের মানসিকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঝাকঁ মানুষের সামনে জনতার কবি এসে দাড়ালেন।।

 

আর সেই এক ঝাকঁ স্বপ্নদেখা, সহজ-সরল বাঙ্গালিদের জন্য তিনি তারঁ সেই মহান এবং ঐতিহাসিক ভাষণ খুব সহজভাবেই দিলেন। তালি পড়ল সেদিন প্রতিটি বাঙ্গালিদের  হাতে, সর্বস্তরের বাঙ্গালিরা সেদিন উজ্জীবিত হয়েছিলেন। প্রস্তুতিই নিয়েছিলেন যুদ্ধের। মহান মুক্তিযুদ্ধের।

আর সেই ভাষণ দেওয়া মানুষ টি বাঙ্গালিদের জন্য খুব দূরের কেউ নেন। যিনি এদেশের সেই খেটে খাওয়া মানুষের বড্ড আপনজন ছিলেন। আর তিনি হলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আর এইসব ক’টি ঘটনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি শাসকরা চেয়েছিল খুব চুপিসারেই এদেশের মানুষকে মুখবন্ধ করিয়ে দেওয়া যাবে। যার জন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা একটি সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় ৭১এর সেই ২৫শে মার্চ গণহত্যা চালানো হবে। মুখবন্ধ করিয়ে দেওয়া হবে এদেশের সহজ সরল বাঙ্গালিদের।

মার্চের শুরু থেকেই তারা ভারী অস্ত্র শস্ত্র মজুত শুরু করে। ২৫শে মার্চের সেই ঘুটঘুটে কালো

অন্ধকার রাতে ট্যাংক, কামান সহ অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনি।

লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, আর গুলি দিয়ে ঝাজড়া করবার বিভৎসতা তো আছেই। এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার পাচশঁ সত্তর বর্গমাইলের এই ছোট্ট সুন্দর বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) কে তারা সেরাতে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করেছিল। কেবল ঢাকা শহরেই নিহত হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ।

যুদ্ধকালীন অবস্থা ছাড়া বেসামরিক জনগণের ওপর এধরনের জঘন্য, ঘৃণিত,  নৃশংস হামলা, এমন গণহত্যা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

আর তাই পঁচিশে মার্চ বাঙালির ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। বাঙ্গালিরা দিনটিতে সূর্যাস্তের পর পরই প্রদীপ প্রজ্জলন করে, আয়োজন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আর গভীর শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করে সেইদিনের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার সেইসব বীর বাঙালীদের।

আর আজ ১৯৭১ এর সেই নিষ্ঠুর গণহত্যার ৪৮তম বার্ষিকী।

চ্যানেল আগামী পরিবার ১৯৭১’র ২৫শে মার্চের সেই কালরাত্রির গণহত্যায় নিহত সকল বীর বাঙ্গালিদের গভীর শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করছে।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here