পারমিতা হিম একজন সাংবাদিক, লেখক, উপস্থাপক। দৈনিক কালের কণ্ঠ তে ফিচার রাইটার হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে মিডিয়াতে যাত্রা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তিনি সময় টিভিতে প্রতিবেদক এবং উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রাণের মেলা নামক অনুষ্ঠান নিয়ে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচটায় হাজির হন সময় টিভির পর্দায়। ২০১৮ সালে তিনি প্রকাশ করেন তার লেখা প্রথম উপন্যাস নারগিস। এবার বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস “উত্তম ও মানসীর রহস্যময় প্রেম”। বইটি পাওয়া কথাপ্রকাশের স্টলে। বইটি নিয়ে কথোপকথন হয় তার সাথে…..
সীমান্ত: আপনার দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ছোট করে যদি বলতেন উপন্যাসটি কি নিয়ে লেখা?
পারমিতা হিম: উপন্যাসটি এ সময়ের মানুষদের নিয়ে। ব্যক্তির চাহিদার সঙ্গে সমাজের প্রত্যাশার দ্বন্দ্ব, প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যক্তিমানুষের টানাপোড়েন ও সম্পর্ক, সবোর্পরি প্রেম এ উপন্যাসের মূল বিষয়। তবে এ প্রেম গতানুগতিক নয়, রহস্যময়। কারণ পুরো উপন্যাস জুড়েই চরিত্রগুলোর প্রেম বিষয়ক ঘটনা ও সংলাপ বেশ রহস্য তৈরি করে। কখনো মনে হয় এটা আদৌ প্রেম না কল্পনা, আবার কখনো মনে হয় এটাই প্রেম।
সীমান্ত: আপনার দ্বিতীয় উপন্যাস পাঠক মহলে কেমন সাড়া ফেলছে?
পারমিতা হিম: ১৪ তারিখ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চারশোর বেশি বই বিক্রি হয়েছে। বিক্রিত বইয়ের সংখ্যার চেয়েও আমি গুরুত্ব দেই পাঠকের পাঠ প্রতিক্রিয়াকে। এ কয়দিনেই অনেকেই ভালো-মন্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, অর্থাৎ তাঁরা পড়েছেন। তাই আমিও খুশি।
সীমান্ত: প্রায় অর্ধেক বইমেলা শেষ। বইমেলায় কোন শ্রেণির পাঠকের আনাগোনা বেশি দেখছেন আপনি?
পারমিতা হিম: মধ্যবিত্তরাই আসে বইমেলায়। তাদের যত সমালোচনাই করুন, এ মেলার প্রাণ তারাই। ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যাও বেশি। অভিভাবকরা তাদের সঙ্গে আসেন, তবে বই কেনেন না বেশি। কিনে দেন।
সীমান্ত: একজন লেখক হিসেবে আপনার কি মনে হয়, আস্তে আস্তে পাঠকেরা বইমেলায় আসা কমে যাচ্ছে অনলাইনে বই অর্ডারের মাধ্যমে?
পারমিতা হিম: আরে না! অনলাইনে বই অর্ডার ধনীদের বিষয়। যাদের সময়ের অনেক দাম। আর কিছু অলস তো রয়েছেই। প্রবীণরা রয়েছেন, যাদের জন্য মেলায় এসে বই কেনা সত্যিই কঠিন। বইমেলায় বই খুঁজে বের করা খুব কঠিন বিষয়। এটাই আনন্দ দেয় মধ্যবিত্ত পাঠকদের। শিক্ষার্থীদের। ঘুরে ঘুরে দেখে দেখে বই কেনার আনন্দ অনলাইনে কীভাবে পাবে! বইমেলার পাঠক সহসাই কমার কোনো কারণ দেখছি না আমি।
সীমান্ত: আপনার নিজ জায়গা থেকে বইমেলা কি কি পরিবর্তন আনা হলে বইমেলাটা আরো পরিপূর্ণ হত বলে আপনি মনে করেন?
পারমিতা হিম: বইমেলাকে পাঠকবান্ধব করা জরুরি। প্রবেশপথে সবার হাতে যদি মেলার একটা সম্পূর্ণ ম্যাপ দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে স্টল, প্যাভিলিয়নগুলো খুঁজে পেতে খুব সুবিধা হবে সবারই। কিছু স্বেচ্ছাসেবকও থাকা দরকার পাঠকদের জন্য। যে কাজটা এখন স্টলের বিক্রেতাকর্মীদের করতে হয়, মানে ওদের গিয়ে সবাই জিজ্ঞাসা করে এই বই কোথায় পাবো, ওই প্রকাশনী কোথায়—সেটা করার জন্য। বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইটে প্রকাশনাগুলোর বইয়ের ক্যাটালগ পাঠকবান্ধবভাবে রাখতে হবে। তাহলে সহজেই জানা যাবে কোন বইটি কোথায় আছে। পাঠকদের লেখকদের আড্ডা দেয়ার জায়গা বাড়াতে হবে। মেলার কোথাও চা পাওয়া যায় না। এটা ভীষণ দুঃখজনক। মেলায় ওয়াইফাই আছে বলে দাবি করা হয়, আজ পর্যন্ত সংযোগ পাইনি। যারা একসঙ্গে অনেক বই কেনেন, বিশেষ করে প্রবীণরা, তাদের এত বই হাতে নিয়ে মেলায় হাঁটা সম্ভব নয়। কোনো কাউন্টার করে রাখার ব্যবস্থা করলে খুব ভালো হতো।
সীমান্ত: একসঙ্গে সাংবাদিকতা, লেখালেখি, উপস্থাপনা কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়?
পারমিতা হিম: যেটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন সেইটাকেই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হবে। আমি এই তিনটির মধ্যে লেখালেখিকেই এগিয়ে রাখি। কারণ সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা এগুলো আজকালকার বিষয়। আজ এর রেশ থাকবে, কাল থাকবে না। লেখাগুলি যুগের পর যুগ রয়ে যাবে। সময়কে অতিক্রম করে যাওয়ার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর কোন কাজে আছে?
সীমান্ত: একজন তরুণ লেখককে আপনি কি কি উপদেশ দিবেন?
পারমিতা হিম: তরুণ লেখককে উপদেশ দেওয়ার মতন অবস্থান আমার নাই। আমার মন্তব্য জানাতে পারি বড়জোর। আমি মনে করি বাংলা সাহিত্য তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যের ক্ল্যাসিক বইগুলো পড়া যে কোন লেখকের জন্য খুব কাজের।
সাক্ষাতকার নিয়েছে: গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত