রাজীব বসাক বাংলাদেশের একজন অন্যতম জাদুশিল্পী হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে জাদু দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছেন। তার জাদু দেখে চমকে যায় নিহ এমন মানুষ খুজে পাওয়া খুবই কম। শুধু দেশেই নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরের জাদু দেখিয়ে হয়েছেন প্রশংসিত। বর্তমানে যাদুর বিজ্ঞান বিজ্ঞানের যাদু নিয়ে দুরন্ত টিভিতে প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার “সোনার কাঠি রূপার কাঠি” অনুষ্ঠান টিতে হাজির হন তিনি। এবার বইমেলায় বাচ্চাদের জন্য লিখেছেন ছোটদের ১ডজন ম্যাজিক নামে একটা বই। কিভাবে জাদুশিল্পী হওয়া, পেশা হিসেবে জাদুকেই কেন বেছে নিলেন এসব বিষয়ে কথোপকথন হয় তার সাথে…….
সীমান্ত: জাদুকর হওয়ার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই ?
রাজীব বসাক: জন্মগতভাবে আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু এক একজন জাদুকর। জেনে কিংবা না জেনেই নতুন কিছু করে দেখাতে চাই আমরা।
জাদু বিষয়টা আমাকে খুব কাছে টানতো। জাদুকরই হবো- ভেতরে ভেতরে লক্ষ্যটা স্থির করাই ছিলো। স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডী পেরিয়েছি ঠিকই, কিন্তু জাদু’র গন্ডীটা থেকে বেরুতে পারিনি আজও। জাদু নিয়ে এখনো আমি শিখে চলেছি নিরন্তর। ইচ্ছে- জাদু’র পরশেও একদিন জেগে উঠবে আমার বাংলাদেশ।
সীমান্ত: পেশা হিসেবে জাদু’কে কেন বেছে নিলেন ?
রাজীব বসাক: কিছু একটাকে তো পেশা হিসেবে গ্রহন করতেই হতো। আমি না হয় জাদু’কেই পেশা হিসেবে বেছে নিলাম। তবে সত্যি বলতে কি- আমি যে সময়ে জাদু’কে পেশা হিসেবে গ্রহন করেছি, সে সময়টাই বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিছু করতে চাইনি বলেই জাদুকর হয়ে উঠা।
সীমান্ত: জাদু শিখলেন কিভাবে ?
রাজীব বসাক: নির্দিষ্ট কোন গুরু ধরে আমার জাদু শেখা হয়নি। তবে প্রয়াত বাল্যবন্ধু সুকান্ত পালকেই আমি আমার জাদুগুরুর স্বীকৃতি দিতে চাই। পরবর্তী সময়ে আমি কলকাতা’র জাদুকর শুভ্রাংশু চক্রবর্তী’র কাছে জাদু’র উপর বিশেষ তালিম নেই।
সীমান্ত: জাদুশিল্পী হিসেবে আপনি কি কারো জাদু অনুসরণ করে থাকেন ?
রাজীব বসাক: সর্বনাশ ! তেমনটা করলে নিজস্ব স্বকীয়তা বলতে কিছু আর থাকতো না। শুরু থেকেই আমার চেষ্টা ছিল – নিজেকে নিজের মত করে গড়ে তুলতে। অনেক ভাঙ্গা গড়ার ভেতর দিয়ে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করে চলছি এখনো।
সীমান্ত: ব্ল্যাক ম্যাজিক বলতে কিছু কি আছে ?
রাজীব বসাক: বিনোদনের জন্যে থাকতে পারে। তবে বাস্তবে লোক ঠকানোর কাজে ব্ল্যাক ম্যাজিকের কোন অস্তিত্ব আছে বলে আমার জানা নেই।
সীমান্ত: জাদু কি শিল্প ? নাকি শুধুই মানুষকে বোকা বানানো ?
রাজীব বসাক: মানুষকে বোকা বানানোটা কোন অর্থেই শিল্প নয়। আর তাছাড়া জাদু’র শেকড়টা রয়েছে বিজ্ঞানে, বাদবাকীটুকুন চর্চা। বিজ্ঞানে ব্যাখ্যাটা প্রকাশ করতে হয়, আর জাদু’তে ব্যাখ্যটা গোপন রাখতে হয়। তফাৎ শুধু এটুকুই।
সীমান্ত: তরুনরা পেশা হিসেবে জাদু’কে বেছে নেন না কেন ?
রাজীব বসাক: শিল্পচর্চা করে তার রসবোধ নিংড়ে জীবিকা নির্বাহটা সত্যিই কঠিন। আমাদের দেশে শিল্পীদের এখনো অব্দি সেই চোখে দেখা হয় না। সুতরাং অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে কে জীবন চলতে চাইবে !
সীমান্ত: জাদু দেখানোর দীর্ঘ জীবনে স্মরনীয় কোন ঘটনা ?
রাজীব বসাক: শুধুমাত্র জন্মান্ধদের জন্যে বিশেষ পদ্ধতিতে একবার একটি জাদু প্রদর্শনী করেছিলাম। প্রদর্শনী শেষে তাদের হাসিমাখা মুখগুলো এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। জাদু প্রদর্শন করে কাউকে আনন্দ দেয়া কিংবা কারো মুখে হাসি ফোটানোর মত মজা আর কিছুতে আছে বলে আমার মনে হয় না।
সীমান্ত: জাদু দিয়ে বাস্তব জীবনের শুধু একটা জিনিস পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে কি করতে চান ?
রাজীব বসাক: পৃথিবী’র সমস্ত ঘৃণা’কে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করে দেব।
সীমান্ত: যদি আপনাকে বলা হয়- জাদু দিয়ে আপনি যাকে চাইবেন, তাকেই ভ্যানিস করে দিতে পারবেন। তবে কাকে ভ্যানিস করবেন ?
রাজীব বসাক: যার উদ্দেশ্য সৎ নয়, তাকে।
সীমান্ত: জাদু নিয়ে আপনার ভবিষ্যতে কোন পরিকল্পনা কি আছে ?
রাজীব বসাক: নিশ্চয়। তবে এজন্যে সবার সহযোগিতায় প্রথমেই নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করাটা জরুরী। আর তখনি কেবল সম্ভব নিজের পরিকল্পনাগুলো একে একে বাস্তবায়ন করা। নচেৎ পরি’টা উড়ে গিয়ে কেবল কল্পনাগুলোই ছটফট করতে থাকবে আমার ঝুলিতে।শেষকথা, শিল্প হিসেবে জাদু’ই কেবল আমাদের দেশের নিজস্ব একটি ঘরনা। জাদু’কে ভালোবাসুন, ভালোবাসুন জাদুকরদেরও…
সাক্ষাতকার নিয়েছে: গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত