পুষ্পিতা
তানজিমুল আয়ান তানাফ
ভালবাসা কি ধর্ম মানে? না মানে জাতি? না বোঝে দূরত্ব? তুমি হয়তো সরে দাঁড়াবে। স্যরি, ‘হয়তো না’ সত্যি সত্যি এটাই তো হওয়া উচিত। তাই নাহ? আমার প্রতি তোমার অমন কোনো অনুভূতিই তো সৃষ্টি হয়নি। যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজের মূলে প্রোথিত ধর্ম নামের বিশাল খরস্রোতা নদী হুট করেই সব কেমন করে দিলো! তা না হলে তুমি চাইলেই হয়তো সবকিছুই অন্যরকম হতে পারতো। পুষ্পিতা, আমরা নিজেদের আধুনিক দাবী করি, অথচ এই দেখো কাল যখন জানতে পারলাম, তখন কেমন সব একদম অর্থহীন মনে হলো। আচ্ছা, যে শহরে তুমি থাকবে না সে শহরে আমি সব পূর্ণতায়ও কি ভালো থাকবো, বলো? তুমি ছাড়া অন্য কারো চূড়ির রিনঝিন আমার ভালো লাগবে কখনো? মানুষ বদলে যেতে শেখে, সব কি ভুলতে পারে?
হুটহাট কখন একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ ঐসব বলে বসে বোঝো তুমি? কতটুকু ভালোলাগা থাকলে ওমন লাজলজ্জার মাথা খেয়ে সব বলে ফেলা যায়? আমি জানিনা কি করবো, সত্যিই জানিনা। আমার তোমায় লাগবে, লাগবেই। তোমার ঐ অতি রহস্যময়ী টানাটানা দু’চোখের মায়ার জন্যই তোমাকে আমার লাগবে।
পুষ্পিতা, গত দুই বছর ধরে আমার ডায়রীর ভাঁজে যে মুঠো মুঠো বকুল ফুল অপেক্ষায় অপেক্ষায় বিবর্ণ হচ্ছে, আমি চাই না সেসব ভুল হাতে পড়ুক। আমি কখনোই চাই না সেসব এমন কারো হাত ছুঁয়ে যাক যে হাত যত্ন করে অনুভব করতে জানে না, যে হাত চুইয়ে ভালবাসা ঝরে না।
তুমি কখনো কষ্ট পাও, ভুলেও এটা চাই না। তোমার ইচ্ছে হলে সময় নিতে পারো। আর…সময় না নিলেও আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আমাকে করতেই হবে। তোমায় ওই ভীষণ রকমের মায়াভরা চোখদুটো কখনো আমার পিছু ছাড়বে না সেটা আমি বেশ বুঝি। হাহা, কি অদ্ভুত জীবন। সাপ-লুডুর জীবন। এই ভালো তো এই শেষ।
আচ্ছা, প্রেমে পড়ছো কখনো? তুমুল প্রেম? অথবা একপাক্ষিক প্রেম? অনুভূতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে আমি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। আম্মু বলে, ‘কখনো কারো জন্য আবেগ জমাবা না, কারণ আমাদের সবারই আলাদা স্ট্যান্ডার্ড আছে। চাহিদা, প্রাপ্তি পূর্ণতা সব ওই স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে।’ আমারও তাই মনে হয় জানো? যেসব হয়তো তোমার ভীষণ পছন্দ, আমার হয়তো দেখা যাবে সেসব নিতান্তই আটপৌরে, অতি সাধারণ। কি অদ্ভুত সব নিয়ম! আমাদের শেষটা তাহলে কি হবে? বিচ্ছেদ? হাহা, এই দেখো আমি এখনই কি সব উলটা পালটা চিন্তা করি। তোমায় তো কখনো পাওয়াই হলো না। না হলো তোমার পাশাপাশি কখনো একসাথে হাঁটা। আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় কি জানো? রেললাইনের সমান্তরাল পাতের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাটা, সাথে বৃষ্টি থাকলে তো কথাই নেই। আর তুমি থাকলে সেটা…হাহা।
পুষ্পিতা, খুব ব্যস্ত থাকো তুমি! ম্যাসেজ সিনও করছো না। স্যরি, আমার এমন কিছু বলার অধিকার নেই। আর তোমার প্রতি আমার কোনো অনুযোগও নেই। থাকবেও না কখনো। আমি আমার মতো করে সব আমার সেই অন্য পৃথিবীটাতে তোমায় তৈরী করে নেবো। তোমার ফিজিক্যাল এপেয়ারেন্স হয়তো থাকবে না কখনো, তারপরও ক্ষতি কি? তুমি তো থাকছো! তোমায় কেউ একজন পুজো করে যাবে সবসময়, নিরালায়, নির্ঘুম রাত্রির প্রার্থনায়।
আমার চাহিদাগুলা খুব অল্প, জানো? এই হুটহাট খাইয়ে দেয়ার বায়না করা অথবা একটুখানি গান শোনানো। আর একটু ভীষণ রকমের সত্যিকারের ভালবাসা- এক জীবনে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।
পুষ্পিতা, যদি কখনো মনে হয় আমাকে তোমায় গল্প শোনানোর অধিকার দেয়া যাবে, অথবা শুধু আমাকেই তোমার গান শোনার অধিকারটুকু দেয়া যাবে, ডেকো আমায়, প্লিজ। তোমার ম্যানিকিউর করা নখে অথবা প্যনিটেইল করা মেঘকালো শহরে আমি নিজের ঠিকানা খুঁজে ফিরবো। ‘ভালবাসি’।
শ্রাবণ,১৩১০ বঙ্গাব্দ,
মই লেন, কোলকাতা।
পুষ্পিতা আজ কেমন আছে? আর এই এতোদিন পর আছেই বা কোথায়? স্বর্গে! আচ্ছা, এই যে এতো আবেগ নিয়ে কেউ একজন হয়তোবা রাত জেগে, অথবা বিষন্ন বিকেলে এতো কিছু লিখে গেছে তার শেষ পরিণতিই বা কি ছিলো? ধর্মের এই নোংরা খেলায় শেষ হাসিটা কার ছিলো? মানুষের? নাকি ঐ ধর্মের!
পুরোনো চিঠিটা আগের মতোই ভাঁজ করে বইয়ের ভেতর রেখে আসলাম, এবার অন্য কারো হাতে পড়ুক এই চিঠি।।