বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো একটি চিঠিতে এ আশ্বাস দেন তিনি। বৃহস্পতিবার (০৩ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট।
চিঠিতে ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যহত রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অবস্থা তৈরি করতে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখবে।’রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ‘ভীষণ বোঝা’ হলেও বিশ্ব জানে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপ হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।
গত বছরের অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা-নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। গত কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা এর আগেও বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে এদেশে বসবাস করছে।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ১১ লাখে পৌঁছেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এলেও এ বিষয়ে কার্যত তাদের সাড়া মিলছে না।
চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, বিশ্বে ‘সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তকারী’ দেশ যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে যাবে। চিঠির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে প্রেস সচিব জানান। বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার জন্য কক্সবাজার-বান্দরবানের স্থানীয় জনগণ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সে বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের কর্মসূচি রয়েছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে কক্সবাজারেও কাজ করছে তারা। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে ইউএসএইডের প্রেসিডেন্ট ‘শিগগিরই’ বাংলাদেশে আসবেন বলে জানান তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।