রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার একটি বাসার দরজা ভেঙে মা ও দুই সন্তানের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন কৃষি অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার জেসমিন আক্তার (৩৫), তার মেয়ে স্থানীয় মডেল একাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী হাসিবা তাসনিম হিমি (৯) ও আদিলা তাহসিন হানি (৪)। গতকাল সোমবার রাতে তাদের লাশ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। তিনজনেরই শরীরে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতের চিহ্ন ছিল। জেসমিন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তিনি এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) শেখ নাজমুল আলম বলেন, দুই সন্তানকে হত্যার পর ওই নারী আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি জব্দ করা হয়েছে।
জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, পাইকপাড়ার সি-টাইপ গভর্নমেন্ট স্টাফ কোয়ার্টারের ১৩৪ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন জেসমিন। তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম জাতীয় সংসদের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান। তিনি গতকাল বিকেল ৫টার দিকে বাসায় ফিরে ড্রয়িংরুমের দরজা বন্ধ দেখতে পান। স্ত্রী-সন্তান ঘুমাচ্ছে ভেবে তিনি নামাজ পড়তে চলে যান। ফিরে এসে অনেকবার ডেকেও স্ত্রীর সাড়া না পেয়ে তার সন্দেহ হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি ও বাসায় থাকা জেসমিনের ভাই শাহিনুর রহমান দরজা ভেঙে ভয়ঙ্কর দৃশ্যের মুখোমুখি হন। তারা দেখতে পান মেঝেতে জেসমিন ও খাটে দুই মেয়ের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে আছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়।
স্বজনরা জানান, গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরেন জেসমিন। এরপর তিনি দুই মেয়েকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে ভাত খাওয়ান। বাসায় তখন তার ভাই শাহিনুর ছাড়াও খালাতো বোন যূথী ছিলেন। ওই সময় থেকেই ড্রয়িংরুমের দরজা বন্ধ ছিল। শাহিনুর ও যূথী ভেবেছিলেন, মা ও দুই মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। স্বজনদের ধারণা, হত্যায় ব্যবহূত ছুরিটি জেসমিন গতকালই কিনে আনেন। তার দুই মেয়েই ছিল চঞ্চল প্রকৃতির। হত্যার আগে ভাত খাওয়ানোর সময় তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয় বলেও তাদের ধারণা।
শাহিনুর রহমান জানান, তার বোন অনেক দিন ধরেই মাইগ্রেন ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ফরাজী হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। বিদেশেও তার চিকিৎসা হয়েছে। মাসখানেক আগে একবার তিনি একসঙ্গে ২০টি ঘুমের বড়ি খান। আরেকবার তিনি কীটনাশক এনে সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টার সময় ধরা পড়েন। তখন তিনি ব্যাখ্যা দেন, গাছে দেওয়ার জন্য কীটনাশক এনেছিলেন। জেসমিন নিজেকে অসুখী ভাবতেন। প্রায়ই তা অন্যদের বলতেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
গতকাল রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেসমিনদের ফ্ল্যাটে চারটি ঘর। তার মধ্যে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে ড্রয়িংরুম। মেঝেতে তাজা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। ঘরের আসবাবপত্রে লেগে ছিল রক্তের ফোঁটা। লাশ উদ্ধারের সময় ওই ঘরে উচ্চ শব্দে টিভি ও ফ্যান চলছিল বলেও জানা যায়। বাসার একটি ঘরে হাসিবুল ইসলামের ভাগ্নে ও তার স্ত্রী সাবলেট থাকেন। তারা কেউই মা-সন্তানদের মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, তিনজনেরই গলা কাটা ছিল। দুই শিশুর একজনের পেট ও অপরজনের বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জেসমিনের পেটেও রক্তাক্ত জখম ছিল।