ইভান পাল
গত ২১শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের আরাকান রোড সংলগ্ন মোহরা এলাকার ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন “মোহরা যুব শিব সংঘ” এর উদ্যাগে সরস্বতীপূজা উদযাপিত হয়।
আমরা জানি যে, হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর একটি হল এই সরস্বতীপূজা। মূলত: শিক্ষার্থীরাই এই পূজো করে থাকেন। দেবী সরস্বতী কে বলা হয়ে থাকে বিদ্যার দেবী। বলা হয়ে থাকে — শিক্ষার্থীরা তারঁ আরাধনা করেন যাতে, তারা শিক্ষা-দীক্ষা এবং বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জীবন পথে এগিয়ে চলতে পারেন।
তো, ২১শে জানুয়ারি সরস্বতীপূজোর আমন্ত্রণ বা অধিবাস দিয়ে এ পুজোর সূচনা ঘটে।আর ২২ ও ২৩ তারিখ পূজোর মূল আনুষ্ঠানিক্তা দিয়ে ২৪ তারিখ দেবীর বিসর্জনের মাধ্যমে মোহরা যুব শিব সংঘের উদ্যাগে পরিচালিত এ বছরের এ সরস্বতী পূজোর সমাপ্তি ঘটে।
মোহরা যুব শিব সংঘের এ পূজোয় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ (চট্টগ্রাম) এর সাধারণ সম্পাদক এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ।
মোহরার ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের উদ্যাগে আয়োজিত তিনদিন ধরে চলা এ উৎসবে ১ম দিন ছিল দেবী সরস্বতী’র অধিবাস, ২য় দিন ছিল মূল পূজোর আনুষ্ঠানিকতা, আর ৩য় দিন অর্থাৎ ২৩শে জানুয়ারি সেন্ট্রাল মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ১৭০-১৮০ দু:স্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ আর ২৪শে জানুয়ারি বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় এ বছরের সরস্বতী পূজোর। আর ২২ ও ২৩ তারিখ পূজো উপলক্ষে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
মোহরা যুব শিব সংঘ, চট্টগ্রামের আরাকান রোড সংলগ্ন মোহরা এলাকার একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক সামাজিক কমর্কান্ড পরিচালনা করে আসছে।
মোহরা যুব শিব সংঘ আয়োজিত এ পূজোর সব থেকে আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল পূজোর থিম। পূজোর থিম ছিল — “সুশিক্ষা নয় স্বশিক্ষায় জাতির উন্নতি হয়”। প্রতি বছর ই তারা এ পূজোর আয়োজন করে থাকে। কিন্তু থিম পূজো এবছর ই প্রথম। এ সংগঠন্টির প্রধান কর্ণধার প্রানেশ দেওয়ানজী তাদের পূজোর থিম নিয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন, “আমাদের দেশে বর্তমানযুগের একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে প্রশ্নপত্র ফাসঁ। আমরা দেখি যে সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাসঁ করছে। আবার কেউ এই ফাসঁ হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল অর্জন করছে। তারা হয়তো সুশিক্ষিত হচ্ছে। কিন্ত স্বশিক্ষিত হতে পারছে কি। নিজের বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে তারা ভাল ফল অর্জন করছে। কিন্তু তাদের যে ভেতরকার শিক্ষা তাতো অপূর্ণয় থেকে যাচ্ছে। তাদের অন্ত:সার যে শূন্য থাকছে। আর তাই আমরা সবাই মিলে দেবীর আরাধনা করি। যেন, তিনি আমাদের এই সকল খারাপ পথ থেকে দূরে রাখেন।আমাদের সকলের মধ্যে যেন বিবেক জাগ্রত হয় আর আমরা যেন এই সকল ভুল পথ ছেড়ে সঠিক পথে ফিরে আস্তে পারি। আর শিক্ষা টাকে যেন বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। এটাকে মূলত থিম হিসেবে নিয়ে প্রতিমা নির্মাণ। আলোসজ্জ’র সাথে প্রতিমা গুলোকে সামঞ্জস্য রেখে থিমটাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে”।
মোহরা যুব শিব সংঘ আয়োজিত এ পূজোয় মূল শিল্পী ছিলেন উত্তম পাল। আর থিম এর উপর কাজ করেন চিত্রকল্প ইভেন্টস, চট্টগ্রাম। আর পূজোর দিন ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। তবে দেবী সরস্বতী সংগীতালয়ের খুদে শিল্পীদের পরিবেশনাগুলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের নজর কাড়ে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ই মোহরা যুব শিব সংঘ এ পূজোর আয়োজন করে আসছে। কিন্তু থিম পূজো ছিল এ বছর ই প্রথম। আর শুধু সংগঠনটির জন্য নয় বরং সমগ্র মোহরাবাসীর জন্যই সরস্বতী পূজোয় থিম পূজো ছিল প্রথম।তাই বলা চলে মোহরা যুব শিব সংঘ আয়োজিত সরস্বতী পূজোয় থিমের ব্যবহার ছিল মোহরাবাসীর প্রতি একটা ভালবাসা আর বিস্ময়ের বিস্ফোরণ এর মতো।