-আতিক ফারুক
দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির। মুখটা কেমন বিষণ্ন। খানিক পরে হুসাইন মাহমুদ এসে আবিরের কাঁধে হাত বুলিয়ে বলল কিরে দোস্ত মন খারাপ কেন?
আবিররঃ দোস্ত, আর বলিস না। আজো আম্মু বকাঝকা করেছে। প্রতিদিন একই কথা, চাকরী খোঁজ। এখন আমি চাকরী কোথায় পাবো বল! ঐদিকে স্নেহার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক আর্থিক জোগান দেওয়ার মতো আমি ছাড়া কেউ নেই। তাছাড়া আব্বুরও বয়স হয়েছে। ঐদিকে আম্মু অসুস্থ। প্রবল আর্থিক সংকটে ভুগছি।
হুসাইনঃ আরে বেডা এসব চিন্তা বাদ দে। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। পরের চিন্তা বাদ দিয়া নিজেরে বুঝতে শিখ বেটা।
এই নে। টান দে।
আবিরঃ না দোস্ত এগুলা আমি খাই না। এমনি নানামুখী চিন্তাভাবনা আমাকে বিষণ্ন করে তোলছে। আর তুই আমাকে এগুলো খেতে বলছিস।
হুসাইনঃ হুর বেডা। এটাই সকল বিষণ্নতা কাটানোর ঔষধ। একটান দিয়া দেখবি সব দুঃখ কষ্ট ধোঁয়ার সাথে উড়ে গেছে।
আবিরঃ তোকে এ কথা কে বলল!
হুসাইনঃ আরে, আমার কথা বিশ্বাস না হইলে একটান দিয়া তো দেখবি।
আবির ইতস্তত করে বললো
দোস্ত, আগে কখনো খাই নি এসব। এখন…..,
হুসাইনঃ তার জন্যই তো এখন খাবি। আমার মন খারাপ থাকলে আমি এগুলাই খাই। মনে হয় সব দুঃখ ধোঁয়ার সাথে উড়ে যাচ্ছে।
আবির সিগারেটটা হাতে নিয়ে বললো; দোস্ত, আগে কখনো খাই নি এখন…..!
হুসাইনঃ দোস্ত, আমার কথা বিশ্বাস হয় না তোর?
আবিরঃ হ্যাঁ, হয়। কিন্তু…..,
হুসাইনঃ কোনো কিন্তু নয়। একটান দিয়ে দেখ বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকা সব দুঃখ কষ্ট চিরতরে মুছে যাবে। ধোঁয়ার সাথে উড়ে যাবে সব দুঃখ কষ্ট।
হুসাইনের অনেক জোরাজোরিতে শেষ পর্যন্ত আবির সিগারেটটা মুখে নিয়ে একটান দিল। টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাশতে লাগল আবির।
হুসাইনঃ দোস্ত, প্রথম প্রথম এমন লাগবেই আস্তে আস্তে দেখবি অনেক ভালো লাগবে।
এইভাবেই ক্রমে ক্রমে আবির প্রথম সিগারেট, তারপর গাজা, ইয়াবা, সব ধরণের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে।
বাড়িতে মায়ের কষ্ট করে লুকিয়ে রাখা টাকা চুরি করে আবির এটা সেটা কিনে খায়। বাড়ির খোঁজখবরও রাখেনা ঠিকমতো। কেমন যেন অগোছালো হয়ে যায় আবির। অনিয়মিত খাবার, অনিয়মিত গোসল। চুলগুলো কেমন উসকোখুসকো হয়ে গেছে আবিরের।
ইদানীং বড়দের সম্মান করতেও ভুলে গেছে সে।
আবির দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের উপরে। হঠাৎ কারো স্পর্শে পিছন ফিরে তাকালো।
পাঞ্জাবি পায়জামা পরিহিত এক ছেলে, মাথায় টুপি। আবির নেশাগ্রস্ত, তার নেশার ঘোর এখনো কাটে নি। পাঞ্জাবি পরিহিত ছেলেটির নাম “নাবিল ” আবিরের ছোটবেলার বন্ধু। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বিধায় অনেকদিন পর পর দেখা হয় আবিরের সাথে। কিন্তু, আবির কিনা তাকে চিনতেই পারছেনা! নাবিলের বুঝতে বাকী রইলা না যে, সে নেশায় আসক্ত, এখনো নেশার ঘোর কাটে নি। নাবিল তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গেল। ভালো করে গোসল করিয়ে খাবার খেতে দিল। তারপর, পুরো ঘটনা জেনে নাবিল অনেকটাই বিস্মিত হলো। তার এ পথে আসার নেপথ্য লুকিয়ে আছে বন্ধু হুসাইনের প্ররোচনা।
নাবিল যারপরনাই চেষ্টা করতে থাকে আবিরকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার। কুরআন, হাদীসের কথা বলে, জান্নাত, জাহান্নামের কথা বলে তাকে। আস্তে আস্তে আবিরের মাঝে পরিবর্তন পরিলক্ষিত করা যায়। ক্রমে ক্রমে আবির আবার আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। সম্পূর্ণ ধূমপান থেকে মুক্ত থাকে। নিয়মিত নামাজ পড়ে। মানুষের সাথে ভালো আচরণ করে। একটা ভালো চাকরীও জুটে যায় তার। পরিবারে আবার সুখ শান্তি ফিরে পায়।