-জুবায়ের ইবনে কামাল
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা লিট ফেস্টে ঘুরছি। হঠাৎ দেখি দু’জন কিছুটা বাকবিতণ্ডা করছে। আগ্রহী হয়ে পাশে দাঁড়ালাম। দেখলাম একজন খুব বিরক্তের সাথে বলছে এখানে ওয়াই ফাই লাইন বাফারিং করছে, বাসায় চল। ওখানে টিভিতে দেখব। আরেকজন বলছে, না! পরে ইউটিউবে দেখে নিস। সে যাইহোক, সন্ধ্যায় যখন লিট ফেস্ট থেকে বের হচ্ছি, গেটেই ওই দুজনের দেখা পেলাম। আগ্রহ দমাতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করে ফেললাম তারা কি দেখার জন্য এমন আগ্রহী ছিলো। তারা জানালো একটা টিভি নাটকের কথা। এরকম ভালো নাটক নাকি তেমন পাওয়া যায়না। আমি নাম জানতে চাইলাম। তারা জানালো ইরফান সাজ্জাদ আর সাফা কবিরের ‘আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারতো’।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ নামের তরুন একজন নির্মাতা নাটকটি পরিচালনা করেছেন। ঘটনা লিখেছেন মোরছালিন মাসুম। চিত্রনাট্য তৈরী করেছে নির্মাতা নিজেই। ঘটনা টা কি তা দর্শকরা জানেন। নতুন করে বলার কিছু নেই।
এখন ব্যাপার হচ্ছে ঘটনাটা দর্শকদের ছিলো নাকি ছিলো শুধুই কল্পনার! কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমার এক বন্ধু সাফা কবিরের বিশাল ফ্যান। তার সব নাটক দেখে। যথারীতি ‘আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারতো’ নাটকও দেখেছে। নাটক শেষে আমাকে বললো, ‘দোস্ত! নাটকটায় সাফা কবিরের অভিনয় দেখিনি। দেখেছি নিজের ছায়া’। ফেসবুকে আরেকজনের স্ট্যাটাস দেখলাম। সে লিখেছে, ‘নাটক-সিনেমা কখনো বাস্তবে হয়না। তবে কিছু বাস্তব নাটক-সিনেমার সাথে মিলে যায়। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারতো নাটকটি’।
এবার একটু সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলা যাক। বাংলাদেশের নাটক-সিনেমাগুলোর বহুবিদ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে দৃশ্যধারণ। যখন চরিত্রের চেহারা দেখানো দরকার তখন দেখা যায় প্রকৃতি। অথবা যখন একনাগাড়ে দৃশ্যগুলো দেখানো দরকার তখন হয় স্লো মোশন। সমস্যা আরো আছে। রোমান্টিক দৃশ্যতে নায়ক এসে ‘ভালোবাসি’ বললেই হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে কি তা ঘটে? নাহ! কিন্তু ‘আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারতো’ নাটকে আপনি দেখবেন অন্যরকম চিত্র। এই নাটকটিকে প্রত্যেকটি দৃশ্য অনেক গল্প বলে। নাটকের একদম প্রথম দৃশ্যেই দেখা যায় ইরফান সাজ্জাদ প্রেমের কথা বলাত জন্য সাফা কবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে ইতস্তত ভাব। গ্রামের একটা ছেলে যেরকম করে তার পুরো দৃশ্য যেন কপি করা। সাফা কবির মুখে কিছুই বলেনা। কিন্তু পেছনে থাকা তার হাতে লুকানো গাছের এক সবুজ পাতায় লেখা “ভালোবাসি”। এরকম একটা সুন্দর রোমান্টিক দৃশ্যের পরেই পাল্টে যায় চিত্র। নেমে আসে কষ্টের হাতছানি। দর্শক বুঝতেই পারবেন না পরিচালক কিভাবে আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেছে।
নাটকের প্রত্যেকটা সংলাপই অন্যরকম। একটা সংলাপ এরকম, “কেউ কেউ অনেক পাইয়াও জীবনে সুখী না .. আর কেউ কেউ অল্পতেই সুখী .. কিন্তু সেই অল্পটাই কারো কারো জীবনে আসে না .. আর যখন আসে তখন অনেক দেরি হইয়া যায়…”
নাটকের আসল উপভোগের বিষয় হলো গল্পটা। গল্পটা এতই সাধারণ যে মনে হবে প্রত্যেকটা দৃশ্যই আপনার জীবন থেকে নেয়া। আর এই বাস্তবতার সাথে মিলে যাওয়া গল্পটাই নাটকটাকে অসাধারণ করে তুলেছে। আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন নাটকটির পরিচালক। গল্পে কোন অতিপ্রাকৃত বিষয় নেই। বাড়াবাড়ি নেই। ইরফান সাজ্জাদ, সাফা কবির আর মনিরা মিঠুর অভিনয় দর্শকদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। সবিশেষে, গল্পটা দর্শকেরই।
আরও পড়ুনঃ এই গল্পটা আমাদের