শুদ্ধতম মানুষ থেকে মিসির আলীর মত ক্ষুরধার বুদ্ধির মানুষ কিংবা পরোপকারী বাকের ভাই, জীবদ্দশায় এমন অসাধারণ চরিত্রগুলো উপহার দিয়ে গিয়েছেন ম্যাজিশিয়ান।

শুদ্ধতম শুভ্র
নওশীন শহীদ
“শুভ্র”, “শুভ্র গেছে বনে” কিংবা “মেঘের ছায়া” এই নেশাধরানো বইগুলোর নায়ক হলো শুভ্র। তবে সিনেমার মারপিট করা দশাসই নায়ক না হলেও লেখক হুমায়ুন আহমেদ তাকে বানিয়েছেন পৃথিবীর শুদ্ধতম মানুষ হিসেবে। সৌন্দর্য, ধৈর্য এবং বিচক্ষণতার মিশ্রনে বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য চরিত্র শুভ্র। মোটা গ্লাসের চশমা, আর বিস্তর বই ছড়ানো ছিটানো দেখলেই যেকোন বইপ্রেমীর মাথায় প্রথমেই “শুভ্র” নামটা আসাও অস্বাভাবিক কিছুনা। শুভ্রর দেখতে ভালোলাগে, জানতে ভালোলাগে, অবাক হতে ভালোলাগে। এই অবাক হওয়া নির্ঝঞ্ঝাট ছেলেটা পাঠকদের অবাক করে চলেছে বহুদিন ধরে।
মিসির আলী
ইশতিয়াক আহমেদ
মিসির আলি, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় রহস্যময় চরিত্র। মিসির আলী কাহিনীগুলো রহস্যমাত্রিক। মিসির আলির কাহিনীগুলো ঠিক গোয়েন্দা কাহিনী নয়, কিংবা ‘ক্রাইম ফিকশন’ বা ‘থ্রিলার’-এর মতো খুনি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞাননির্ভর এবং প্রচন্ড যুক্তিনির্ভর কাহিনীর বুনটে বাঁধা। বরং অনেক ক্ষেত্রে একে রহস্যগল্প বলা চলে। চারিত্রিক দিক দিয়ে মিসির আলি চরিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের আরেক অনবদ্য সৃষ্টি হিমু চরিত্রটির পুরোপুরি বিপরীত। তরুণ হিমু চলে প্রতি-যুক্তির তাড়নায় ; অপরপক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠ মিসির আলি অনুসরণ করেন বিশুদ্ধ যুক্তি। এই যুক্তিই মিসির আলিকে রহস্যময় জগতের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনে সাহায্য করে। সেসব কাহিনীর প্রতিফলন ঘটেছে মিসির আলি সম্পর্কিত প্রতিটি উপন্যাসে।
বাকের ভাই
জুবায়ের ফাহিম
হুমায়ুন আহমেদ। তার লেখা কোন গল্প পড়ে অনেকে বলে উঠে এগুলা কোন চরিত্র হল।
তার রচনার কোন নাটক দেখার পড় কেউ কেউ বলে এগুলা কোন চরিত্র হল। কিন্তু তার এসব চরিত্র যে তার সকল পাঠক দর্শকের মনে যেন করে নেয় আলাদা জায়গা।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে হুমায়ুন আহমেদ এর রচনায় ধারাবাহিক নাটক “কোথাও কেউ নেই” যার মূল আকর্ষন ছিল “বাকের ভাই”।
চরিত্রায়ন এ ছিল আসাদুজ্জামান নূর। তার কাজ টা ছিল এমন যারা যারা তার কাছে সমস্যা নিয়ে আসত তিনি তার সমস্যার সমাধান করে দিতেন। কিন্তু এই চরিত্র দর্শক এর মাঝে যেন এক অন্য রকম আর্কষন রেখে যায়। নাটকটি দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে দেখতেন। ধারাবাহিক অগ্রগতির সাথে সাথে অনেকে বাকের ভাইকে পছন্দ করে ফেলেন। তার পক্ষে জনমত তৈরি হতে থাকে। উকিল হুমায়ূন ফরিদির শত চেষ্টায় ও যখন কেস হেরে গেলে আদালত থেকে ফাঁসির রায় দেয়া হয় দর্শক এর মাঝে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। দর্শকরা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে যান। চলতে থাকে মিছিল,সমাবেশ,দেয়াল লিখন। ঢাকায় অনেকে মিছিলে স্লোগান দেন
“বাকের ভাইয়ের কিছু হলে
জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে”